সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্যের কারণ লেখ। ক্রান্তীয় মন্ডলের সমুদ্র জলের লবণতা বেশি কেন? সমুদ্রকে রত্নাকর বলার হয় কেন?

সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্যের কারণ লেখ এবং ক্রান্তীয় মন্ডলের সমুদ্র জলের লবণতা বেশি কেন, সমুদ্রকে রত্নাকর বলা হয় কেন তার এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

সমুদ্রজলের লবণতার তারতম্যের কারণ:

সমুদ্রে সর্বত্র লবণতার পরিমাণ সমান নয়। বিভিন্ন কারণে লবণতার পরিমাণ ও বন্টনের তারতম্য হয়ে থাকে। এর কারণ বা নিয়ন্ত্রকগুলি হল –

1. বাষ্পীভবন:

বাষ্পীভবনের পরিমাণ নির্ভর করে –

  • দিবাভাগের পরিমাণ।
  • সূর্যরশ্মির পতনকোণ।
  • আপেক্ষিক আর্দ্রতা।
  • বায়ু সঞ্চালনের মাত্রার উপর।

সমুদ্র জলের লবণতার পরিমাণ বাষ্পীভবনের মাত্রার উপর নির্ভর করে। জল বাষ্পে পরিণত হলে জল লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অতিরিক্ত বাষ্পীভবনের জন্য সমুদ্রের জল বেশি লবণাক্ত। অপরদিকে হিমমন্ডলে বাষ্পীভবন কম হওয়ার জন্য সেখানে সমুদ্রের লবণাক্ততা কম।

2. অধঃক্ষেপন:

অধঃক্ষেপন জলের লবণতা নির্ধারণকারী একটি অন্যতম উপাদান। অত্যধিক বৃষ্টিপাতের জন্য নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রজলের লবণাক্ততা কম। আবার মেরু অঞ্চলে বরফ গণনা জলের জোগানের ফলে লবণাক্ততা কম।

3. নদীর জল:

কেবল বৃষ্টির জলই নয়, নদীবাহিত মিষ্টি জলও সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সাথে যুক্ত হলে সমুদ্রের জলের লবণতার পরিমাণ কমে যায়। যেমন – আমাজন, কঙ্গো, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি নদীর মোহনার সন্নিকটে সমুদ্র জলের লবণতা কম হয়।

4. বায়ুচাপ-বায়ুপ্রবাহ:

বায়ুচাপের তারতম্যের প্রভাব সমুদ্র জলের লবণতার পরিবর্তনের উপর কিছুটা প্রভাব ফেলে।

5. সমুদ্রজলের অবাধ মিশ্রণ:

সমুদ্রজলের অবাধ মিশ্রণ সমুদ্রজলের লবণতাকে পরিবর্তন করে। সমুদ্রে জোয়ার-ভাটা, সমুদ্র স্রোত এবং শীতল ও উষ্ণ জলের মধ্যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি প্রভৃতির মাধ্যমে সমুদ্র জলের অবাধ মিশ্রণ ঘটে থাকে। এর ফলে বেশি লবণাক্ত জল, অল্প লবণাক্ত জলের সঙ্গে মিশে লবণতার হেরফের ঘটায়।

ক্রান্তীয় মন্ডলের সমুদ্র জলের লবণতা বেশি হওয়ার কারণ:

20°-30° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত সাগর, মহাসাগরের জলের লবণতার পরিমাণ 37%। এই অঞ্চলের লবণতার বন্টনে দেখা যায় তুলনামূলক উত্তর গোলার্ধের চেয়ে দক্ষিণ গোলার্ধের সাগর-মহাসাগরগুলির লবণতা কম(35-65 percentile) কারণ উত্তর গোলার্ধের চেয়ে দক্ষিণ গোলার্ধে বৃষ্টিপাত ও বাষ্পীভবনের পার্থক্য 4cm কম। অক্ষাংশ গত দিক থেকে লবণতার বন্টনের সাপেক্ষে ক্রান্তীয় মন্ডলে লবণতা বেশি। তার কারণ –

1. সূর্যের প্রখরতা:

ক্রান্তীয় মন্ডলের বার্ষিক উষ্ণতা বেশি এবং বায়ুমন্ডল শুষ্ক থাকায় বাষ্পীভবনও বেশি তাই লবণতাও বেশি।

2. স্বল্প বৃষ্টিপাত:

নিরক্ষীয় অঞ্চলের চেয়ে ক্রান্তীয় মন্ডলের বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে কম। তাই জলবায়ু শুষ্ক ও লবণতা বেশি।

3. মরুভূমি:

পৃথিবীর সবকটি মরুভূমি ক্রান্তীয় মন্ডলের অবস্থিত। বেশিরভাগ মরুভূমি থাকার কারণে জলবায়ু রুক্ষ ও লবণতা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট।

4. স্বাদু জলের মিশ্রণ:

ক্রান্তীয় মন্ডলের স্থলভাগগুলিতে নদীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকায় স্বাদু জলের বার্ষিক মিশ্রণ কম। তাই মহাসাগর গুলির গড় লবণতা অনেকাংশে বেশি।

5. অবাধ সঞ্চালন:

ক্রান্তীয় মন্ডলের সমুদ্র গুলি বেশিরভাগই আবদ্ধ প্রকৃতির হওয়ায় সমুদ্রের জলের অবাধ সঞ্চালনের সম্ভাবনা কম ফলে লবণের ঘনত্ব প্রশমিত না হয়ে বৃদ্ধি পায়।

সমুদ্রকে রত্নাকর বলার কারণ:

অর্থ:

‘রত্নাকর’ শব্দের অর্থ ‘রত্নের আকর’। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকার রত্নের ভান্ডার।

সমুদ্রের প্রাপ্ত খনিজ সম্পদ:

1. শক্তি সম্পদ:

সমুদ্র তলদেশে প্রাপ্ত শক্তি সম্পদের মধ্যে খনিজ তেল, কয়লা, স্বাভাবিক গ্যাস প্রভৃতি পাওয়া যায়।

2. লবণ ও রাসায়নিক পদার্থ:

ফসফেট, ক্লোরিন, লবণ প্রভৃতি পাওয়া যায়।

3. অমূল্য সম্পদ:

হীরা, মুক্তা, মোনাডাইট, জারকন, প্লাটিনাম, মলিবডেনাম, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি পাওয়া যায়।

4. ধাতব খনিজ:

টিন, সোনা, রূপা, তামা, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি পাওয়া যায়।

5. শিল্পের কাঁচামাল:

সমুদ্রের জল থেকে ম্যাগনেশিয়াম, সালফেট, গন্ধক, পটাশিয়াম প্রভৃতি কাঁচামাল পাওয়া যায়।

6. খাদ্য:

সমুদ্র থেকে মানুষ খাদ্য হিসেবে মাছ, উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণী সংগ্ৰহ করে থাকে।

সমুদ্রের তলদেশে উপরোক্ত খনিজ সম্পদ প্রচুর পরিমাণে থাকায় সমুদ্রকে রত্নাকর বলার হয়।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!