পরিকল্পনা অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য ও গঠনের উদ্দেশ্য এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
পরিকল্পনা অঞ্চল:
প্রথাগত এবং কার্যকরী অঞ্চল যখন একসঙ্গে মিলায় হয়ে একটি নতুন অঞ্চল গড়ে তোলে তাকে পরিকল্পনা অঞ্চল বলে। অর্থাৎ পরিকল্পনা অঞ্চল হল এমন একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা স্থান, যেখানে অর্থনেতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করে অঞ্চলটির মধ্যে সমতা বা সামঞ্জস্য রক্ষা করা হয়।
পরিকল্পনা অঞ্চলের কতগুলি বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন –
১. ভৌগোলিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত:
পরিকল্পনা অঞ্চল কোন একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়।
২. প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সামঞ্জস্য:
পরিকল্পনা অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সামঞ্জস্য থাকে।
৩. সম্পদের প্রাচুর্যতা:
এই অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে সম্পদ থাকে, অর্থনৈতিক সাম্য আনার জন্য এটি বিশেষভাবে প্রয়োজন।
৪. সম্পদের সুষম বন্টন:
সম্পদের অবস্থান ও বন্টন সুষম হয়, যার মাধ্যমে উৎপাদিত দ্রব্যের ভোগ, ক্রয় এবং পণ্য বিনিময়ের মধ্যে একটি সুসংহত অবস্থা বিরাজ করে।
৫. নমনীয় ও স্থিতিস্থাপক:
চরিত্রগতভাবে পরিকল্পনা অঞ্চল নমনীয় ও স্থিতিস্থাপক হয়।
৬. আবাসিকদের নিবিড় যোগসূত্র:
অঞ্চলটির মধ্যে বসবাসকারী মানুষদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিবিড় যোগসূত্র থাকে।
৭. নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অবস্থা:
অঞ্চলটির একটি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অবস্থান থাকে, পরিসংখ্যানগত তথ্য থেকে যার মূল্য নির্ধারণ করা যায়।
৮. বিকাশকেন্দ্রের অবস্থান:
এর মধ্যে এক বা একাধিক বিকাশকেন্দ্র অবস্থান করে।
৯. পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতা:
স্থানীয় সমস্যা সমাধানের জন্য গড়ে ওঠা পরিকল্পনা অঞ্চল কোনোভাবেই পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয় না।
পরিকল্পনা অঞ্চল গঠনের উদ্দেশ্য:
অসংখ্য উদ্দেশ্য সাধনে পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে ওঠে। যেমন –
ক. সমস্যা সমাধান:
অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য উপযুক্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
খ. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন:
এর অন্যতম উদ্দেশ্য হল মানুষের আয়বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে নাগরিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
গ. জাতীয় ও মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি:
জাতীয় আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়। এই ধরনের বৃদ্ধি ঘটানো পরিকল্পনা অঞ্চল গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
ঘ. আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ:
কোন দেশে আঞ্চলিক বৈষম্যের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। তাই দেশের বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তোলা হয়।
ঙ. শিক্ষার উন্নতি:
শিক্ষার প্রসার ঘটানো পরিকল্পনা অঞ্চলের অন্যতম উদ্দেশ্য। শিক্ষক ব্যতীত সমগ্র জাতির উন্নয়ন একেবারেই সম্ভব নয়
চ. অপুষ্টি ও দারিদ্র দূরীকরণ:
অপুষ্টি ও দারিদ্র্য উন্নয়নের সমস্ত রকম পথকেই বন্ধ করে দেয়। তাই এই অঞ্চল গঠনের মাধ্যমে অপুষ্টি ও দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টা করা হয়।
ছ. জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ:
উত্তরোত্তর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কোনো একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে তা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। পরিকল্পনা অঞ্চল গঠন করে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।