পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য এবং পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য:
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –
1. মৌসুমী বায়ুর প্রভাব:
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল জলবায়ুর উপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব। পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের প্রায় ৯০% মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঘটে। মৌসুমী বায়ুর আগমনে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র হয় এবং শীতকাল শুষ্ক হয়।
2. ঋতু পরিবর্তন:
সূর্যের পরিক্রমণ ও মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – গ্ৰীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত।
3. বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ:
পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মকালে সমুদ্র থেকে স্থলভাগে এবং শীতকালে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রে বায়ুপ্রবাহ হয়।
4. আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল:
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি হয় এবং শীতকালে বৃষ্টি না হওয়ায় শীতকাল শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
5. বৃষ্টিপাতের অসমবন্টন:
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে গড়বার্ষিক বৃষ্টিপাত 300- 500cm। সেখানে দক্ষিণবঙ্গে 150- 200 সেন্টিমিটার এবং পুরুলিয়ায় মাত্র 100-125 cm।
6. জলবায়ুর তারতম্য:
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে পার্বত্য অঞ্চলে শীতল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, উপকূল অঞ্চলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু এবং পুরুলিয়া জেলায় চরম প্রকৃতির জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়।
7. স্থানীয় বায়ুর প্রভাব:
গ্রীষ্মকালে অপরাহ্নে কালবৈশাখীর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির প্রাদুর্ভাব ঘটে, শীতকালে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব:
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় মধ্যভাগ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম কর্কটক্রান্তি রেখা (23½% উঃ) বিস্তৃত থাকায় এই রাজ্যের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির। পশ্চিমবঙ্গে মূলত দুই ধরনের মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয় –
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।
- উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু।
পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর উপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাবগুলি নিম্নরূপ –
1. মৌসুমী বায়ুর উপস্থিতি:
পশ্চিমবঙ্গের সারা বছরই মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। শীতকাল ও শরৎকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু এবং গ্রীষ্মকালে ও বসন্তকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়।
2. শীতল ও শুষ্ক শীতকাল:
শীতকালের স্থলভাগ থেকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয় বলে, এতে জলীয় বাষ্প থাকে না ফলে শীতকাল শুষ্ক হয়। এই বায়ু উত্তরের তুষার আবৃত পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসে বলে এবং সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে থাকায় এই সময় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের শীতল আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়।
3. উষ্ণ ও আর্দ্র বর্ষাকাল:
এই সময় উষ্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বঙ্গোপসাগর এর উপর থেকে আসে বলে স্থলভাগে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত ঘটে এবং সূর্যের অবস্থান জনিত কারণে বর্ষাকালে উষ্ণতা বেশি হয়।
4. শরৎকালীন সূচনা:
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন শুরু হয়, ফলে শরৎকালের আকাশ নির্মল থাকে এবং ভোরে শিশির পড়ে।
5. বৃষ্টিপাতের উপর প্রভাব:
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বার্ষিক 175-200 cm বৃষ্টিপাত হয়। কোথাও কোথাও 300 cm এর অধিক বৃষ্টিপাত হয়। উত্তরবঙ্গের বক্সে দুয়ার অঞ্চলে সর্বাধিক প্রায় 455 cm বৃষ্টিপাত হয়।
6. মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের অনিশ্চয়তা:
পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমী বায়ুর আগমন সব বছর সমান থাকে না। কোনো কোনো বছর সময়ের আগে আবার কোনো কোনো বছর সময়ের পরে।
7. বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা:
পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমী বায়ুর পরিমাণ সব বছর সমান নয়। কোনো কোনো বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা আবার কোনো কোনো বছর কম বৃষ্টিপাতের কারণে খরার সৃষ্টি হয়।
8. ঋতু পরিবর্তনে মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের প্রভাব:
মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের উপর পশ্চিমবঙ্গের ঋতু বৈচিত্র্য অনেকাংশেই নির্ভরশীল।