কয়লার শ্রেণিবিভাগ, কয়লার ব্যবহার এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
কয়লার শ্রেণিবিভাগ:
কার্বনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে কয়লাকে মোট চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
1. পিট:
পিট হল কয়লা উৎপত্তির প্রথম পর্যায়। এই কয়লা বয়সে নবীন এবং অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানের। এতে কার্বনের পরিমাণ 35% এর কম থাকে। এতে জলীয় বাষ্প ও ছাইয়ের পরিমাণ বেশি।
2. লিগনাইট:
এই কয়লায় 35%-50% কার্বন থাকে। এর রং গাঢ় বাদামি হয় বলে একে Brown Coal বলে। এটি নিম্নমানের কয়লা। লিগনাইটের তাপ উৎপাদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম এবং এতে ছাইয়ের পরিমাণ খুব বেশি। পৃথিবীর প্রায় 15% কয়লালিগনাইট জাতীয়। এই কয়লা মূলত তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন ও গৃহস্থালির রান্নার কাজে ও ঘর গরম রাখার কাজে ব্যবহার করা হয়।
3. বিটুমিনাস:
বিটুমিনাস কয়লার কার্বনের পরিমাণ 50%-85%। এটি মোটামুটি ভালো মানের কয়লা। বিটুমিনাস কয়লার রং ধূসর কালো হয়। এর তাপ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি এবং এটি ব্যবহার করা সহজ। পৃথিবীতে বিটুমিনাস কয়লার সঞ্চয় সবচেয়ে বেশি এবং ব্যাবহারও খুব বেশি।
4. অ্যানথ্রাসাইট:
এটি সবচেয়ে উন্নত মানের কয়লা। এতে 85%-95% কার্বন থাকে। এটি বেশ কঠিন এবং এর রং উজ্জ্বল কালো। এটা তাপ উৎপাদন ক্ষমতা সর্বাধিক। এতে ছাইয়ের পরিমাণ কম থাকে। বস্তুত এতে কোন উদ্বায়ী পদার্থ থাকে না। একে পোড়ালে উজ্জ্বল নীল শিখা বের হয়। পৃথিবীতে অ্যানথ্রাসাইটের সঞ্চয় খুবই অল্প। পৃথিবীর মাত্র 5% কয়লা অ্যানথ্রাসাইট জাতীয়।
কয়লার ব্যবহার:
1769 খ্রীষ্টাব্দে জেমস ওয়াট বাষ্পচালিত রেল ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর কয়লার অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও ব্যবহার এতটাই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় যে কয়লাকে ‘কালো হীরে’ রূপে আখ্যায়িত করা হয়।
কয়লার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যবহারগুলি হল –
1. বাষ্পশক্তি উৎপাদন:
কয়লাকে পুড়িয়ে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা জলীয় বাষ্পের পরিণত করে বাষ্পে চালিত স্টীম ইঞ্জিন, জাহাজ, রেলগাড়ি, স্টীমার প্রভৃতি চালাতে ব্যবহার করা হয়।
2. তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন:
তাপবিদ্যুতের কাঁচামাল হল কয়লা। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ কয়লা তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। ভারতের প্রায় 72 শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
3. লৌহ ও ইস্পাত শিল্পে:
কয়লা থেকে উৎপন্ন কোক লৌহ ইস্পাত শিল্পের একটি অপরিহার্য কাঁচামাল। এক টন লৌহপিন্ড নিষ্কাশনের জন্য প্রায় দু-টন লৌহ আকরিক ও দেড় টন কোক কয়লার প্রয়োজন হয়।
4. রাসায়নিক শিল্পে:
কয়লা থেকে প্রচুর উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আলকাতরা, পাইরিডিন, টল্যুইন, বেঞ্জিন, স্যাকারিন, অ্যামোনিয়া, গন্ধক, বেঞ্জল, কৃত্রিম তন্তু প্রভৃতি প্রধান। কয়লার উপজাত দ্রব্যের উপর নির্ভর করে অনেক রাসায়নিক শিল্প গড়ে উঠেছে যেমন – প্লাস্টিক, ডিটারজেন্ট, সংক্রামক নিবারক, সলভেন্ট, সুগন্ধি, আঠালো দ্রব্য প্রভৃতি উৎপাদন শিল্প।
5. কৃষিতে:
কয়লা থেকে প্রাপ্ত অ্যামোনিয়া ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ থেকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক উৎপন্ন করা হয়। কয়লাভিত্তিক সার ও কীটনাশক কৃষিজমিতে ব্যবহার করে শস্যের উৎপাদনশীলতা বহুগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।
6. গৃহস্থালিতে:
কয়লা গৃহস্থালিতে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। শীতের দেশে ঘর গরম রাখার জন্য ফায়ার প্লেসে জ্বালানি হিসেবে কয়লা প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয় গৃহনির্মাণে বাস ও কাঠের আয়ু বৃদ্ধি করার জন্য আলকাতরার প্রলেপ দেওয়া হয়।
7. অন্যান্য:
রাস্তা তৈরির কাজে যে পিচ ব্যবহৃত হয়, তাও কয়লা থেকে উৎপন্ন হয়। কামারশালা ও অন্যান্য কুটিরশিল্পে কয়লাকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
FAQ/বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী
শিল্পসভ্যতার ভিত কাকে বলে?
কয়লার ওপর নির্ভর করে শিল্পের প্রভূত বিকাশ ঘটেছে বলে কয়লাকে শিল্পসভ্যতার ভিত বলে।
কার্বোনাইজেশন কাকে বলে?
কয়লাকে যখন 900°-1000° সেন্ট্রিগ্ৰেড উত্তাপে পোড়ানো হয় তখন তাকে উচ্চচাপের কার্বোনাইজেশন বলে।