লৌহ আকরিকের শ্রেণীবিভাগ এবং পৃথিবীর লৌহ আকরিকের বন্টন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
লৌহ আকরিকের শ্রেণীবিভাগ:
আকরিক লোহার মধ্যে লোহার পরিমাণের পার্থক্য অনুসারে আকরিক লোহার শ্রেণীবিভাগ করা হয় –
1. ম্যাগনেটাইট:
এই আকরিকে লোহার পরিমাণ 75% থাকে। এই আকরিকের রং কালো, এটি সর্বোৎকৃষ্ট আকরিক, পৃথিবীতে কম পাওয়া যায় এবং এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব বেশি।
2. হেমাটাইট:
এই আকরিকে লোহার পরিমাণ 70% থাকে। এই আকরিকের রং লাল, গাঢ় বাদামী হয়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এই আকরিকের বাণিজ্যিক গুরুত্ব বেশি।
3. লিমোনাইট:
এই আকরিকে লোহার পরিমাণ 60% থাকে। এই আকরিকের রং হলদে-বাদামি হয়। এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব কম।
4. সিডেরাইট:
এই আকরিকে 48% লোহা থাকে। এই আকরিকের রং ধূসর-বাদামি, ধূসর-হলদে হয়। এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব নেই।
পৃথিবীর লৌহ আকরিকের বন্টন :
বর্তমানে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য আকরিক লোহা উৎপাদনকারী দেশগুলি হল –
A. চিন:
বর্তমানে চীন পৃথিবীতে লৌহ আকরিক উৎপাদনে সর্বপ্রথম। এই দেশের উল্লেখযোগ্য আকরিক লোহা উৎপাদনকারী কেন্দ্রগুলি হল –
- মাঞ্চুরিয়া, আনসান(চিনের বৃহত্তম লৌহখনি) ও পেনসিহু।
- ইয়াংসি-কিয়াং নদীর নিম্ন উপত্যকা, চায়ে ও নানজিং এর মধ্যবর্তী অংশে।
- কোয়ানটুং, চুংকিং ও শানসির তাইউয়ান।
- শ্যানডং উপদ্বীপ।
- রাশিয়ার সীমান্তের নিকট কিউচুয়ান।
- দক্ষিণে হাইনান দ্বীপ।
B. অস্ট্রেলিয়া:
পৃথিবীর আকরিক লোহা উত্তোলক দেশগুলির মধ্যে এর স্থান দ্বিতীয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে প্রথম। অস্ট্রেলিয়ার দুটি অঞ্চল থেকে অধিকাংশ আকরিক লোহা উত্তোলন করা হয় –
- দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার আয়রন নব এবং নিউসাউথ ওয়েলসের আয়রন মনার্ক -এ প্রচুর উচ্চ শ্রেণীর আকরিক লোহা পাওয়া যায়। এছাড়া এই অংশের আয়রন কুইন, আয়রন ডিউক, মুম্বা, মিডল ব্যাংক রেঞ্জ, গিজিল পা ইত্যাদি জায়গা থেকেও আকরিক লোহা পাওয়া যায়।
- পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পিলবারা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আকরিক লোহা উত্তোলন করা হয়। এখানকার মাউন্ট নিউম্যান, টমপ্রাইস বিখ্যাত খনি। এছাড়া মাউন্ট হোয়েলব্যাক(বৃহত্তম খনি), মাউন্ট টমপ্রাইস, টেইলারিং পিক, মাউন্ট ব্রুস প্রভৃতি কেন্দ্র থেকেও প্রচুর পরিমাণে আকরিক লোহা উত্তোলন করা হয়।
C. ব্রাজিল:
ব্রাজিল আকরিক লোহা উত্তোলনে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। ব্রাজিলে প্রচুর পরিমাণে উন্নত মানের লৌহ আকরিক সঞ্চিত আছে –
- উত্তর ব্রাজিলের কারাজাস বিশ্বের একক বৃহত্তম আকরিক লোহা ভান্ডার।
- মিনাস গেরাইস -এর বেলো, ইটারেরা, আউরোপ্রেতো।
- ম্যাটোগ্ৰাসো।
- কোরাম্বা।
- মারসেয়া ইত্যাদি।
D. ভারত:
আকরিক লোহা উত্তোলনে ভারতের স্থান চতুর্থ। ভারত লৌহ খনিজে বিশেষ সমৃদ্ধ। এখানকার উল্লেখযোগ্য খনি গুলি হল –
- ছত্তিশগড়ের বাইলাডিলা, দাল্লিরাজহারা।
- গোয়ার বিচোলিম, মাপুসা, সাতারি।
- কর্ণাটকের কুদ্রেমুখ, বাবাবুদান পাহাড়, সান্দুর হসপেট।
- ঝাড়খন্ডের গুয়া, নোয়ামুন্ডি, বুদাবুরু ইত্যাদি।
E. রাশিয়া:
বর্তমানে আকরিক লোহা উত্তোলনে রাশিয়া পঞ্চম স্থান অধিকার করে। এখানকার উল্লেখযোগ্য আকরিক লোহা উত্তোলক কেন্দ্র গুলি হল –
- উরাল পর্বতের ম্যাগনিটোগর্স্ক(দেশের বৃহত্তম), জিগোজিনা, খালিলোভো।
- মস্কো-টুলা অঞ্চলের কুরস্ক, ভলগোগ্ৰাদ উল্লেখযোগ্য।
- মুর্মানস্ক।
- ব্লাদিভস্তক।
- আঙ্গারা।
- আরাকান ইত্যাদি।
F. দক্ষিণ আফ্রিকা:
এই দেশের ট্রান্সভালে প্রচুর পরিমাণে আকরিক লোহা উত্তোলন করা হয়। আকরিক লোহা উত্তোলনে এই দেশ ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে।
এছাড়া ইউক্রেন, কানাডা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কাজাকস্তান প্রভৃতি দেশে লৌহ আকরিক উত্তোলিত হয়।