আঞ্চলিক বৈচিত্র্য অনুযায়ী জীববৈচিত্র্যের শ্রেণিবিভাগ এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য অধিক হওয়ার কারণ এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
আঞ্চলিক বৈচিত্র্য অনুযায়ী জীববৈচিত্র্যের শ্রেণিবিভাগ:
বিভিন্ন আয়তন বিশিষ্ট এলাকায় উপস্থিত জীববৈচিত্র্য পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানী Whittaker (1972) আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের অঞ্চলকে তিনভাগে ভাগ করেছেন –
1. আলফা বৈচিত্র্য:
একই বাসস্থান বা অঞ্চলে অবস্থিত জীবগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যকে আলফা বৈচিত্র্য বলা হয়। Whittaker একে বিন্দু বৈচিত্র্য বলে উল্লেখ করেছেন। এটি প্রজাতিগত সমৃদ্ধির একক।
2. বিটা বৈচিত্র্য:
সংলগ্ন বাসস্থান বা অঞ্চল গুলির মধ্যে অনেক সময় প্রজাতির আদান-প্রদান সম্পন্ন হয় এর ফলে বিভিন্ন সংলগ্ন অঞ্চলের মধ্যে জীবগোষ্ঠীর যে বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয় তাকে বিটা বৈচিত্র্য বলে। পর্বতের পাদদেশ থেকে শিখর অভিমুখে কোনো উদ্ভিদ গোষ্ঠীর প্রজাতি গুলির সংখ্যা পরিবর্তিত হয়। এইরূপ অবস্থায় বিটা বৈচিত্র্যের মাত্রা বেশি ধরা হয়। আবার ঐ রূপ পর্বতঢালে বিভিন্ন পরিবেশে প্রজাতির সংখ্যা এক হলে ধরা হয় বিটা বৈচিত্র্য কম।
3. গামা বৈচিত্র্য:
একটি সমগ্র ভৌগোলিক পরিবেশের বিভিন্ন বাসস্থানের যে বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়, তাকে গামা বৈচিত্র্য বলে (স্বল্প স্থানে প্রজাতির ঘনত্বকে গামা বৈচিত্র্য বলে)। ভূমির ঢালের পরিবর্তন ঘটলে সম্মিলিত জীববৈচিত্র্যও পরিবর্তিত হয়। তাই ভূমির ঢাল ও তার সহাবস্থানে অবস্থিত প্রজাতির মধ্যে যে বৈচিত্র্য পরিস্ফুট হয় তাকেই গামা বৈচিত্র্য বলে।
ক্রান্তীয় অঞ্চলে জীব বৈচিত্র্য অধিক হওয়ার কারণ:
পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় ক্রান্তীয় অঞ্চলে। কারণগুলি নিম্নরূপ –
স্থিতিশীল জলবায়ু:
পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ক্রান্তীয় অঞ্চলের জলবায়ু অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগে এখানে জলবায়ুর বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। তাই বিভিন্ন প্রজাতির জীবগুলি দীর্ঘ সময় ধরে বাস করার সুযোগ পেয়েছে।
প্রাচীন জীবগোষ্ঠী:
এখানকার জীবগোষ্ঠী প্রাচীন হওয়ায় বিবর্তনের জন্য অনেক সময় পেয়েছে। তাই প্রজাতিগুলি স্থানীয়ভাবে অভিযোজিত ও বিশেষায়িত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু:
ক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণতা আর্দ্রতা উভয়ের পরিমাণই বেশি। এরকম চরম পরিস্থিতি জীববৈচিত্র সৃষ্টিতে বিশেষ সহায়তা করেছে।
সংকরায়নের উচ্চহার:
ক্রান্তীয় অঞ্চলে খুব কাছাকাছি ভাবে বিভিন্ন প্রজাতির বাস হওয়ায় তাদের মিলনের হারও বেশি। তাই সংকরায়নের হার বেশি হওয়ায় জিনগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জন্য খুব স্বাভাবিকভাবে জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
পর্যাপ্ত সূর্যালোক:
সারাবছর ধরেই এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া যায়। তাই এখানকার উদ্ভিদগোষ্ঠীর উৎপাদনশীলতা বেশি। এজন্য এখানে খুব বেশি সংখ্যক প্রজাতির বাস।
প্রজাতির একত্রে সহাবস্থান:
এখানে বিভিন্ন কীট ও পরজীবীর বাস বেশি হওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতি একত্রে সহাবস্থান করে। তাই স্বাভাবিকভাবে এখানে জীববৈচিত্র্য সর্বাধিক।
✓ জীববৈচিত্র্যের হটস্পট কোন অরণ্য?
জীববৈচিত্রের হটস্পট ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যকে বলে।
✓ জীববৈচিত্র্যের প্রথম ধাপ কোনটি?
জীববৈচিত্র্যের প্রথম ধাপ জিনগত বৈচিত্র্য।
✓ জীববৈচিত্র্যের দ্বিতীয় ধাপ কোনটি?
জীববৈচিত্র্যের দ্বিতীয় ধাপ প্রজাতিগত বৈচিত্র্য।
✓ জীববৈচিত্র্যের তৃতীয় ধাপ কোনটি?
জীববৈচিত্র্যের তৃতীয় ধাপ বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।
✓ কোনো নির্দিষ্ট বাসভূমির মধ্যে বা জীবগোষ্ঠীর প্রাপ্ত বৈচিত্র্যকে কি বলে?
কোনো নির্দিষ্ট বাসভূমির মধ্যে বা জীবগোষ্ঠীর প্রাপ্ত বৈচিত্র্যকে আলফা বৈচিত্র্য বলে।
✓ আন্তঃপ্রজাতি বাসভূমি বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাসভূমির মধ্যে প্রাপ্ত জীববৈচিত্র্যকে কি বলে?
আন্তঃপ্রজাতি বাসভূমি বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাসভূমির মধ্যে প্রাপ্ত জীববৈচিত্র্যকে বিটা বৈচিত্র্য বলে।
✓ বর্তমানকালে পৃথিবীতে জীব নিধনের হার বেশি কোন অরণ্যে?
বর্তমানকালে পৃথিবীতে জীব নিধনের হার বেশি ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যে।