বায়ুর উপাদান ও তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস কর।

বায়ুর উপাদান ও তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার কর।

বায়ুর উপাদান অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস:

রাসায়নিক গঠন ও উপাদান গত পার্থক্য অনুযায়ী বায়ুর স্তরকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

হোমোস্ফিয়ার:

ইংরেজি শব্দ হোমোস্ফিয়ার এর বাংলা প্রতিশব্দ সমমন্ডল।

বিস্তার:

ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।

উপাদান:

বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন বিশেষ করে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্গণ, হিলিয়াম প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই ধরনের থাকে। এজন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরটিকে হোমোস্ফিয়ার বলা হয়।

হেটেরোসফিয়ার:

ইংরেজি শব্দ হেটারোসফিয়ার এর বাংলা প্রতিশব্দ বিষ্ময় মন্ডল।

বিস্তার:

হোমোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে ৯০ কিলোমিটার থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল বিষম মন্ডলের অন্তর্গত। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানগুলি অনুপাত সমান থাকে না, তাই একে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয়।

উপাদান:

উপাদানগুলির অনুপাত অনুসারে এই স্তরটিকে চারটি বহু আগে ভাগ করা যায় –

  • নাইট্রোজেন স্তর (প্রায় 90-200 কিমি)
  • অক্সিজেন স্তর (প্রায় 200-1100 কিমি)
  • হিলিয়াম স্তর (প্রায় 1100-3500 কিমি)
  • হাইড্রোজেন স্তর (প্রায় 3500-10000 কিমি)

তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস:

তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

ট্রপোস্ফিয়ার:

অবস্থান:

বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের অপেক্ষাকৃত অধিক ঘনত্ব যুক্ত স্তরটির নাম ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধ মন্ডল। গ্রিক শব্দ ‘Tropos’ এবং ‘Sphere’ থেকে এই স্তরের নামকরণ হয়েছে।

বিস্তার:

ক্রান্তীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে 18 কিলোমিটার এবং দুই মেরু অঞ্চলে 8 কিলোমিটার।

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা 6.5° সেলসিয়াস হারে কমতে থাকে।
  2. গ্যাসীয় উপাদানের মোট ভরের ৭৫% এবং জলীয়বাষ্প ও কঠিন বস্তু কণার প্রায় সমগ্র অংশ এই স্তরে উপস্থিত রয়েছে।
  3. বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা ও লবণের কণা যথেষ্ট পরিমাণে থাকে ফলে আবহাওয়ার যাবতীয় ঘটনা এই স্তরেই ঘটে তাই একে ক্ষুব্ধ মন্ডল বলে।
  4. ট্রপোস্ফিয়ার এর উর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলে এখানে উষ্ণতা কমেও না আবার বাড়েও না।

স্ট্যাটোস্ফিয়ার:

অবস্থান:

ট্রপোস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্যাটোস্ফিয়ার বা শান্ত মন্ডল। গ্ৰিক শব্দ স্ট্রাটো যার অর্থ শান্ত এবং স্পেয়ার যার অর্থ অঞ্চল থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে।

বিস্তার:

12 থেকে 50 কিলোমিটার।

বৈশিষ্ট্য:

  1. স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
  2. স্ট্যাটাস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব অংশে 24 থেকে 40 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত অঞ্চলে ওজন গ্যাস পাওয়া যায়, এই কারণে এই অংশের নাম ওজোনোস্ফিয়ার।
  3. স্ট্যাটাস্ফিয়ারে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় ঘর্ষণজনিত বাধাও খুব কম এবং এই স্তরের নিম্নাংশ দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে।
  4. স্ট্যাটাস্ফিয়ার এর উর্ধ্ব সীমানাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে।

মেসোস্ফিয়ার:

অবস্থান:

বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর বা স্ট্যাটাস্ফিয়ারের ঠিক ঊর্ধ্বের স্তরটির নাম মেসোস্ফিয়ার বা মধ্যমন্ডল। গ্রিক শব্দ মেসো এবং স্ফিয়ার থেকে উদ্ভূত।

বিস্তার:

50 থেকে 80 কিলোমিটার‌।

বৈশিষ্ট্য:

  1. এখানে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা ক্রমশ কমতে থাকে।
  2. মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে আগত উল্কা এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
  3. মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে মেসোপজ বলে।

থার্মোস্ফিয়ার:

অবস্থান:

বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ স্তর বা মেসোস্ফিয়ার এর ঠিক ঊর্ধ্বের স্তরটিকে থার্মোস্ফিয়ার বা তাপমন্ডল বলে। গ্ৰিক শব্দ থার্মো এবং স্ফিয়ার থেকে উদ্ভূত।

বিস্তার:

80- 600 কিলোমিটার।

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা অতি দ্রুত হারে বাড়তে থাকে এবং ঊর্ধ্বসীমায় তাপমাত্রা হয় প্রায় 1500° সে.
  2. অসংখ্য ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িৎগ্ৰস্ত কণা বা আয়ন থাকায় থার্মোস্ফিয়ারের নীচের অংশকে আয়নোস্ফিয়ার বলে।
  3. বস্তুকণা আয়নিত অবস্থায় আছে বলে বেতার তরঙ্গ এই স্তর থেকেই পুনরায় ফিরে আসে।
  4. ঊর্ধ্ব থার্মোস্ফিয়ারে চৌম্বকবিক্ষেপজনিত কারণে সৃষ্ট অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রন কণা দ্বারা প্রতিফলিত তরঙ্গ সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা বা অরোরা বোরিওলিস ও কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা বা অরোরা অস্ট্রালিস নামে পরিচিত।

এক্সোস্ফিয়ার:

অবস্থান:

বায়ুমণ্ডলের পঞ্চম স্তরটির নাম এক্সোস্ফিয়ার।

বিস্তার:

500-1500 কিলোমিটার।

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই স্তরে আণবিক অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়।
  2. এই স্তরের উষ্ণতা প্রায় 1500°-1600° সে. ।
  3. এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব খুব কম।

ম্যাগনেটোস্ফিয়ার:

অবস্থান:

এক্সোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে। এটি বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বতম স্তর তথা পৃথিবীর শেষ সীমা।

বিস্তার:

1500-16000 কিলোমিটার।

বৈশিষ্ট্য:

  1. ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে স্তরে একটি স্থায়ী তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে।
  2. এই স্তরে তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তির প্রভাবে ইলেকট্রন ও মুক্ত আয়নগুলি সংঘবদ্ধ অবস্থায় আছে।
  3. এই স্তরের পর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সৌরমন্ডলে বিলীন হয়ে যায়।

FAQ/বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয় কী?

নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3000 কিমি এবং 16000 কিমি উচ্চতায় দুটি ঘন বলয় যুক্ত ম্যাগনেটোপজকে ভ্যান অ্যালেন বিকিরণ বলয় বলে।

উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার বলতে কী বোঝ?

বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে প্রতি হাজার মিটার বা এক কিমি উচ্চতা বাড়লে 6.4° সে. উষ্ণতা হ্রাস পায়। একে Normal lapse rate বা স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের হার বলে।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!