বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে বালিয়াড়ি ও লোয়েস সমভূমি গঠিত হয়।
1. বালিয়াড়ি:
বালিপূর্ণ বায়ুর গতিপথে গাছপালা, বড় প্রস্তরখন্ড, ঝোপঝাড় বা অন্য কোনো রকম বাঁধা থাকলে তাতে প্রতিহত হয়ে বায়ুবাহিত কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হয়ে ক্রমশ ঢিপির মতো উঁচু উঁচু হয়ে যায়, স্তূপ আকারে সঞ্চিত এই বালির ঢিপি গুলিকে বালিয়াড়ি বলে।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড বালিয়াড়িকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।
A. তির্যক বালিয়াড়ি:
যেসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতির সঙ্গে আড়াআড়ি ভাবে গড়ে ওঠে, তাদের তির্যক বালিয়াড়ি বলে। এগুলি আবার 3 ভাগে বিভক্ত। যথা –
a. বার্খান বালায়াড়ি:
যেসব বালিয়াড়ি একেবারে অর্ধচন্দ্রের আকারে গড়ে ওঠে বায়ুর প্রবাহপথে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে, সেই বালিয়াড়ি গুলিকে বারখান বলা হয়। যেমন – সাহারা মরুভূমিতে অনেক বার্খান দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:
- বার্খানের বায়ু প্রবাহের দিক উত্তল এবং বিপরীত দিক অবতল হয়।
- বার্খান সাধারণত অস্থায়ী।
- বার্খান 5-400 মিটার জুড়ে বিস্তৃত।
- বার্খান 15-70 মিটার উচ্চ হয়।
b. আকলে বালিয়াড়ি:
একাধিক বার্খান পরপর পাশাপাশি গঠিত হওয়ার ফলে যে আঁকাবাঁকা ও সারিবদ্ধ শৈলশিরার মত বালিয়াড়ির শ্রেণীর সৃষ্টি হয় তাদের আকলে বালিয়াড়ি বলে।
c. রোর্ডস বালিয়াড়ি:
যেসব তির্যক বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো সেই বালিয়াড়িগুলিকে রোর্ডস বালিয়াড়ি বলে।
B. অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ বালিয়াড়ি:
যেসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে গড়ে ওঠে সেই সব বালিয়াড়িগুলিকে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলা হয়। এদের মধ্যে যেগুলি খুব দীর্ঘ কিন্তু সংকীর্ণ তাদের সিফ বালিয়াড়ি বলে। যেমন – থর মরুভূমিতে সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায়।

এছাড়া মরু অঞ্চলে আরও বিভিন্ন ধরনের বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়। যেমন –
a. মস্তক বালিয়াড়ি:
মরুভূমিতে অবস্থিত কঠিন শিলায় গঠিত কোন টিলার বায়ুপ্রবাহের দিকমুখী অংশে বালিয়াড়ি গঠিত হলে তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বলে।

b. পুচ্ছ বালিয়াড়ি:
মরুভূমিতে অবস্থিত কঠিন শিলায় গঠিত কোনো টিলার বায়ুপ্রবাহের বিপরীত দিকমুখী অংশে যদি সরু লেজের আকারে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয় তবে তাকে পুচ্ছ বালিয়াড়ি বলে।
c. পার্শ্বস্থ বালিয়াড়ি:
মরুভূমিতে অবস্থিত কঠিন শিলায় গঠিত কোনো টিলার উভয় দিকে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হলে সেই বালিয়াড়িকে পার্শ্বস্থ বালিয়াড়ি বলে।
d. অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি:
মস্তক বা সংলগ্ন বালিয়াড়ির কিছুটা আগে ঘূর্ণি বাতাসের জন্য অনেক সময় বালি সঞ্চিত হয়ে বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয় একে অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি বলে।
e. অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি:
মরু অঞ্চলে অনেক সময় বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে সঞ্চিত বালুকারাশি একস্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যায় একে অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি বলে। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এরূপ বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলে।
f. নক্ষত্র বালিয়াড়ি:
কোনো একটি কেন্দ্র থেকে বালিয়াড়ি গুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে সেই বালিয়াড়ি গুলিকে নক্ষত্র বালিয়াড়ি বলা হয়।
2. লোয়েস সমভূমি:
মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে হলুদ ও ধূসর বর্ণের কোয়ার্টস, ফেল্ডসপার, ডলোমাইট ও অন্যান্য খনিজ সমৃদ্ধ সিথিল সূক্ষ্ম পলিকণা সঞ্চয়কে লোয়েস বলে। বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এই সূক্ষ্ম পলিকণা বহুদূরে পরিবাহিত ও সঞ্চিত হয়ে যে ভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি বলে।
যেমন – উত্তর চীনের হোয়াং-হো নদী উপত্যকায় এই লোয়েস সমভূমি দেখা যায়। যেটি মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে বায়ুবাহিত বালুকরাশির সঞ্চয়ে গঠিত হয়েছে।
FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী
প্লায়া কী?
প্লায়া এক স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ আবদ্ধ অববাহিকার কেন্দ্রে অবস্থিত সমভূমি বা প্রায় সমভূমি অঞ্চল। অববাহিকার কেন্দ্রে অবনমিত এরূপ হ্রদ নিয়মিত ব্যবধানে তৈরি হয়।
যেমন – মিশরের কাতারা অবনমিত অঞ্চলে এই রকম অনেক হ্রদ দেখা যায়।
ওয়াদি কাকে বলে?
মরুভূমিতে হঠাৎ যখন বৃষ্টিপাত হয় তখন যে জলধারার সৃষ্টি হয় ওইসব জলধারার সঙ্গে বালি কাদা কাপড় প্রভৃতি বাহিত হয় কিন্তু একদিন এই কর্দম ধরার প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে নদী খাত দেখা যায় তাকে ওয়াদি বলে।
ওয়াদিগুলি বেশিরভাগ সময় মরুভূমির বুকে শুষ্ক নদী উপত্যকা রূপে অবস্থান করে।আরবে রাব আল খাল মরুভূমিতে ওয়াদি দেখা যায়।