বৃক্ষরূপী ও জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী, আয়তাকার ও জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী, নদীখাত বিন্যাস ও জলনির্গম বিন্যাস এর পার্থক্য এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
পার্থক্য: বৃক্ষরূপী ও জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী:
নামকরণ:
গ্ৰিক শব্দ ডেনড্রন থেকে ডেনড্রাইটিক শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ বৃক্ষ বা গাছ। গাছের ডালপালার মতো দেখতে হয় বলে এই প্রকারের বিন্যাস বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী নামে পরিচিত।
বেইলি উইলিস অ্যাপালেশিয়ান পার্বত্য অঞ্চলের শৈলশিরা উপত্যকা এলাকার জলনির্গম প্রণালীর বর্ণনা দিতে গিয়ে এই প্রকার নামকরণ করেন।
গঠন:
বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালীর শিলাস্তরের গাঠনিক নিয়ন্ত্রণ প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত থাকে না। সাধারণত সমান্তরাল গঠন এবং সমান কাঠিন্য যুক্ত সমসত্ত্ব শিলায় গড়ে ওঠে।
জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালীতে একনত গঠনযুক্ত শিলাস্তরে এবং দারণ, ফাটল বা চ্যুতি সমৃদ্ধ শিলাস্তরে এই প্রকার জলনির্গম প্রণালী গড়ে ওঠে।
শিলা:
বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালীতে আগ্নেয়, ঘনসংঘবদ্ধ রূপান্তরিত এবং অনুভূমিক ভাবে বিস্তৃত পাললিক শিলায় উদ্ভব হয়।
জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালীতে ভাঁজপ্রাপ্ত গঠনের পাললিক বা অল্পমাত্রায় রূপান্তরিত পাললিক শিলায় উদ্ভব হয়।
কৌণিকতা:
বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালীতে মূল নদীর সঙ্গে উপনদীগুলি সূক্ষ্মকোণে মিলিত হয়। 70° এর বেশি কৌণিকতা কখনোই দেখা যায় না।
জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালীতে উপনদীগুলি মূল নদীর সঙ্গে সমকোণে মিলিত হয়। কারণ দারণগুলি সাধারণত 70° থেকে 90° কোণে বিস্তৃত থাকে।
বিবর্তন:
বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালীতে নদীবিন্যাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়ে উপবৃক্ষরূপী, পিনেট, শাখারূপী এবং বিনুণীরূপী জলনির্গম প্রণালীর সৃষ্টি করে।
জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালীতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিমার্জিত হয়ে চ্যুতি-জাফরি এবং দারণ জাফরিরূপী বিন্যাসে রূপান্তরিত হয়।
পার্থক্য: আয়তাকার ও জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালী:
নদী ও উপনদীর মিলন:
আয়তাকার প্রণালীতে সমকোণী ছাড়া কিছু সূক্ষ্মকোণী নদীসঙ্গমও থাকে।
জাফরিরূপী জলনির্গম প্রণালীতে বিভিন্ন ক্রোমের উপনদী গুলি তাদের মূল নদীর সঙ্গে সবসময় সমকোণে মৃত হয় এজন্য অববাহিকার সমগ্র নদী ব্যবস্থায় সমকোণের নীতি বজায় থাকে।
প্রবাহ পথ নিয়ন্ত্রক:
আয়তাকার জলনির্গম প্রণালীর নদীর প্রবাহ পথের প্রধান নিয়ন্ত্রক হলো দারণ।
জাফরিরুপী জলনির্গম প্রণালীতে নদীগুলির প্রবাহ পথ আয়াম ও নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
নদীপথের বাঁক:
আয়তাকার জলনির্গম প্রণালীতে নদীর প্রবাহ পথের বাঁকগুলি হয় সমকোণী।
জাফরিরুপী জলনির্গম প্রণালীতে নদীপ্রবাহ পথের বাঁকগুলির নির্দিষ্ট কোন আকৃতি থাকে না।
পার্থক্য: নদীখাত বিন্যাস ও জলনির্গম বিন্যাস:
সংজ্ঞা:
নদীর বিভিন্ন কার্যাবলীর মাধ্যমে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর নদীখাতের যে নকশা তৈরি হয়, তাকে নদীখাত বিন্যাস বলে।
একটি নদী অববাহিকায় প্রবাহিত বিভিন্ন নদী পরস্পর যুক্ত হয়ে যে নকশা বা ভঙ্গি গড়ে তোলে তাকে জলনির্গম বিন্যাস বলে।
সৃষ্টি:
নদীখাত নকশা নদী নিজেই তৈরি করে।
মূল নদী এবং তার বিভিন্ন ধরনের উপনদীর মিলনে জলনির্গম বিন্যাসের সৃষ্টি হয়।
নিয়ন্ত্রক:
নদীখাত বরাবর ভূ-তাত্বিক গঠন, ঢালের কৌণিক মান, নদীর ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের হার নদীখাত বিন্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করে।
নদী অববাহিকার ভূনিম্নস্থ গঠন ও ভূমির প্রারম্ভিক ঢাল জলনির্গম বিন্যাসকে নিয়ন্ত্রণ করে।
স্থায়িত্ব:
নদী খাত বিন্যাস দীর্ঘকাল সুস্থায়ী হয় না।
জলনির্গম বিন্যাস অপেক্ষাকৃত সুস্থায়ী প্রকৃতির হয়।
উদাহরণ:
নদীখাত বিন্যাস বিভিন্ন রকমের হয়, যেমন – সরলরৈখিক, মিয়েন্ডারিং, বিনুনী আকৃতি বিশিষ্ট ইত্যাদি।
জলনির্গম বিন্যাসগুলি হল – কেন্দ্রমুখী, কেন্দ্রবিমুখ, বৃক্ষরূপী, জাখরিরূপী ইত্যাদি।
সুবিন্যস্ত জলনির্গম প্রণালী কাকে বলে?
যখন একই নদী অববাহিকার মধ্যে নদীগুলি পরস্পর দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন ধরনের জলনির্গম প্রণালী গড়ে তোলে তাকে সুবিন্যস্ত জলনির্গম প্রণালী বলে।
জটিল জলনির্গম প্রণালী কাকে বলে?
ভিন্ন ভূতাত্ত্বিয় গঠন যুক্ত কোন অঞ্চলে যখন বিভিন্ন প্রকার জলনির্গম প্রণালী একত্রে গড়ে ওঠে তাকে জটিল জলনির্গম প্রণালী বলে।