ত্রিকোশ তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর।

ত্রিকোশ তত্ত্ব সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

সংজ্ঞা:

বায়ুমণ্ডলে উল্লম্ব ও অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহের ফলে উচ্চ ট্রপোস্ফিয়ারে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উপমেরু পর্যন্ত হ্যাডলি কক্ষ, ফেরেল কক্ষ ও মেরু কক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। একে ত্রিকক্ষীয় মডেল বলে। 1951 সালে বিজ্ঞানী পলম্যান বায়ু সঞ্চালন সম্পর্কিত ত্রিকোশ তত্ত্ব উপস্থাপিত করেন।

শ্রেণীবিভাগ:

পৃথিবীতে যে তিনটি কক্ষ দেখা যায় তা হল –

  1. হ্যাডলি কক্ষ বা নিম্ন অক্ষাংশীয় কক্ষ।
  2. ফেরেল কক্ষ বা মধ্য অক্ষাংশীয় কক্ষ।
  3. মেরুকক্ষ বা উচ্চ অক্ষাংশীয় কক্ষ।

1. হ্যাডলি কক্ষ বা নিম্ন অক্ষাংশীয় কক্ষ বা তাপীয় কক্ষ:

অবস্থান:

নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উভয় গোলার্ধে 30° অক্ষাংশ পর্যন্ত এই সঞ্চালন কোশটি বিস্তৃত।

সংজ্ঞা:

নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারা বছর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ার জন্য বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়। এই উর্ধ্বমুখী বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের বিক্ষিপ্ত বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলে নিম্নগামী হয়ে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ফিরে আসে। এভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দুপাশে দুটি বায়ুপ্রবাহের চক্রাকার আবর্তন কে হ্যাডলি কক্ষ বলে।

নামকরণ:

1735 খ্রিস্টাব্দে G.Hadley এই কক্ষটির সর্ব প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন বলে এরূপ নামকরণ।

গুরুত্ব:

  • নিম্ন অক্ষাংশ ও উচ্চ অক্ষাংশের মধ্যে তাপ বিনিময়ে সহায়তা করে হ্যাডলি কোশ পৃথিবীর তাপের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
  • আয়ন বায়ু, নিরক্ষীয় শান্ত বলয়, অশ্ব অক্ষাংশ প্রভৃতি সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এই কোশটির বিশেষ প্রভাব আছে।
  • ক্রান্তীয় উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অধিকাংশ উষ্ণ মরুভূমি সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এই কোশটির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

2. ফেরেল কক্ষ বা মধ্য অক্ষাংশীয় কক্ষ:

অবস্থান:

উভয় গোলার্ধে 30°-60° অক্ষাংশে এই কোশটির অবস্থান।

সংজ্ঞা:

সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ে বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়ে উভয় ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে নিম্নগামী হয়। পুনরায় ভূপৃষ্ঠ বরাবর উভয় ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে বায়ু ফিরে আসে। এইভাবে পৃথিবীর ক্রান্তীয় অঞ্চলের দুপাশে দুটি বায়ু প্রবাহের চক্রাকার আবর্তনকে বিজ্ঞানী ফেরেলের নামানুসারে ফেরেল কক্ষ বলা হয়।

নামকরণ:

1856 খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম ফেরেল এই কোশের অবস্থানের কথা তাত্ত্বিকভাবে কল্পনা করেন বলে এরূপ নামকরণ।

গুরুত্ব:

  • পশ্চিমা বায়ুর মাধ্যমে মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টিতে ফেরেল কোশের বিশেষ ভূমিকা আছে।
  • দক্ষিণ গোলার্ধে গর্জনশীল চল্লিশা, ক্রোধোন্মত্ত পঞ্চাশ, তীব্র চিৎকারী ষাট প্রভৃতি সৃষ্টিতেও ফেরেল কোশের পরোক্ষ প্রভাব আছে।
  • নিম্ন ও উচ্চ অক্ষাংশের মধ্যে তাপ বিনিময় এর মাধ্যমে পৃথিবীর তাপের ভারসাম্য রক্ষায় কোশটি বিশেষ সহায়তা করে।

3. মেরু কক্ষ বা উচ্চ অক্ষাংশীয় কক্ষ বা সরাসরি তাপীয় কক্ষ:

অবস্থান:

উভয় গোলার্ধে 60°-90° অক্ষাংশে এই কোশটির অবস্থান।

সংজ্ঞা:

সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ে বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়ে উভয় মেরু অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে নিম্নগামী হয়। পুনরায় ভূপৃষ্ঠ বরাবর উভয় মেরু অঞ্চলের উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে বায়ু ধাবিত হয়। এইভাবে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের দুপাশে দুটি বায়ুপ্রবাহের চক্রাকার আবর্তনকে মেরু কক্ষ বলা হয়।

গুরুত্ব:

  • মধ্য অক্ষাংশ অঞ্চলে উষ্ণ-আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু এবং শীতল ও শুষ্ক মেরু বায়ুর মধ্যে সংঘর্ষের মাধ্যমে যে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ঘটে তার অন্যতম কারণ এই মেরু কোশ।
  • এই কোশের মাধ্যমে মেরুদেশীয় অঞ্চল ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের মধ্যে তাপের স্থানান্তর ঘটে।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!