গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন নদী নকশা ও অনুক্রমিক নদী নকশা সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন নদী নকশা:
কখনো কখনো নদী নিম্নস্থ শিলার গঠনকে এড়িয়ে নিজের প্রবাহ বজায় রাখে। এদের গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন নদী বলা হয়। যথা –
পূর্ববর্তী নদী:
ভূমিভাগের ধীর উত্থানের সঙ্গে তাল রেখে কোনো কোনো নদী ভূভাগকে গভীরভাবে কেটে নিজের প্রবাহকে বজায় রাখে, অর্থাৎ ভূভাগ যতটা উত্থিত হয় নদীও তাকে ততখানি গভীর করে কাটে। সুতরাং ভূমির উত্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য ঘটিয়ে যেসব নদী প্রবাহপথ বজায় রাখে তাদের পূর্ববর্তী নদী বলে।

উদাহরণ: সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, অরুণ, তিস্তা প্রভৃতি নদী হিমালয় অংশে গভীর গিরিখাত সৃষ্টি করে পর্বতশ্রেণিকে আড়াআড়িভাবে কেটে অতিক্রম করেছে।
অধ্যারোপ নদী:
সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে ওঠা ভূভাগ নবীন পাললিক শিলাস্তরে মোড়া থাকে। নবীন ভূতাত্ত্বিক গঠনের সঙ্গে সমঞ্জস্য রেখে ওই ভূভাগের ওপর নদী ব্যবস্থার বিকাশ ঘটে। সুদীর্ঘকাল যাবৎ নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে নবীন যুগের শিলাস্তর পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং নীচের প্রাচীন যুগের ভিন্ন গঠনের শিলাস্তর ভূপৃষ্ঠে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
অর্থাৎ ভিন্ন গঠনযুক্ত প্রাচীন শিলাস্তরের উপর নবীন যুগের ভূতাত্ত্বিক গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষাকারী নদী ব্যবস্থা আরোপিত হয় এবং নদী ওই প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক গঠনকে এড়িয়ে নিজের আগেকার প্রবাহ বজায় রাখে। তাই গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এরূপ নদীর নকশাকে অধ্যারোপ বা অধ্যারোপিত নদী বলে।

উদাহরণ: সুবর্ণরেখা নদী ছোটনাগপুর মালভূমিকে কেটে শিলার অন্য গঠনের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অনুক্রমিক নদী নকশা:
অনুগামী নদী:
যেসব নদী ভূমির প্রাথমিক ও প্রধান ঢালকে অনুসরণ করে প্রবাহিত হয় তাদের অনুগামী নদী বা নতি নদী বলে। ভূমিভাগ সৃষ্টির পর প্রথম এই নদীর বিকাশ ঘটে, তাই একে প্রাথমিক নদী বলে। এরূপ নদী শিলাস্তরের মূলনতিকে অনুসরণ করে প্রবাহিত হয়।
উদাহরণ: গঙ্গা।
পরবর্তী নদী:
অনুগামী নদীর উৎপত্তির পরই তার দুপাশ থেকে যেসব নদী উৎপন্ন হয় ও অনুগামী নদীর সঙ্গে আড়াআড়ি ভাবে মিলিত হয় তাদের পরবর্তী নদী বলে। এরা ভূমির গৌণঢাল ও শিলাস্তরের আয়াম বরাবর প্রবাহিত হয়। অনুগামী নদী সৃষ্টির পর উৎপত্তি লাভ করায় এদের পরবর্তী নদী বলে।
উদাহরণ: গঙ্গার উপনদী শোন ও যমুনার উপনদী অসন।
বিপরা নদী:
অনুগামী নদী যেদিকে প্রবাহিত হয় তার বিপরীতে প্রবাহিত নদীকে বিপরা নদী বলে। এরা ভূমির প্রাথমিক ঢালের বিপরীতে স্থানিয় গৌণ ঢালকে অনুসরণ করে প্রবাহিত হয়। ভৃগুতটের ওপর দিয়ে স্থানীয় ঢাল অনুযায়ী প্রবাহিত হয় বলে একে ভৃগুতট নদীও বলে। এরা সমগ্র অববাহিকার ঢাল এর বিপরীতে প্রবাহিত হয়।
উদাহরণ: হিমালয়ের মহাভারত রেঞ্জের মধ্য দিয়ে শান কোশী এরকম নদী।
পুনর্ভবা নদী:
সাধারণত স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের দ্বিতীয় পর্যায়ে যেসব নদী সৃষ্টি হয়ে অনুগামী নদীর মতো প্রারম্ভিক ভূমিঢাল অনুসারে অনুগামী নদীর দিকে প্রবাহিত হয় তাকে পুনর্ভবা নদী বলে। এদের উপত্যকার গভীরতা অনুগামী নদীর চেয়ে বেশি হয়।
পর্যায়িত নদী কী?
W.D.Thornburry এর মতে পর্যায়িত নদী হল এমন এক নদী যার ক্ষয় ও সঞ্চয় করার ক্ষমতা নেই, কেবলমাত্র ক্ষয়িত দ্রব্যগুলি বহন করে দ্রুত সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত করে। যদি কোনো নদী ক্ষয় বা সঞ্চয় কোনোটিই না করে ক্ষয়িত দ্রব্যগুলি সঙ্গে নিয়ে চলে তবে নদীগুলিকে পর্যায়িত নদী বলে। বাস্তবে এই ধরনের নদী নেই বললেই চলে।
আরোহিত ও অবরোহিত নদী কী?
বস্তুভারের পরিমান নদীর বহন ক্ষমতা অপেক্ষা বেশি হলে নদীর সমস্ত বস্তুভার বহন করতে পারে না। কিছুটা নদী খাতে সঞ্চিত হয় ফলে নদীগর্ভ ভরাট হয়। এই প্রক্রিয়াকে আরোহন এবং এই প্রক্রিয়া যে নদীতে দেখা যায় তাকে আরোহিত নদী বলে।
বস্তুভারের পরিমাণ নদীর বহন ক্ষমতা অপেক্ষা কম হলে নদীর ক্ষয়কার্য বাড়ে এবং নদীগর্ভ নীচু হয়। এই প্রক্রিয়াকে অবরোহন এবং সৃষ্ট নদীকে অবরোহিত নদী বলে।
FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী
পরাজিত নদী কাকে বলে?
যে নদী তার নিজস্ব পূর্ব প্রবাহ পথ ছেড়ে দিয়ে অন্য পথে প্রবাহিত হয়, তাকে পরাজিত নদী বলে।
নিক বিন্দু কাকে বলে?
নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর গতিপথে যে বিন্দুতে ঊর্ধ্ব উপত্যকার পুরনো ঢালের সাথে নিম্ন উপত্যকার খাড়া ঢালের সংযোগ ঘটে তাকে নিক বিন্দু বলে।