মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলি এবং ফলাফলগুলি আলোচনা কর।

মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলি এবং ফলাফলগুলি এই লেখাটিতে আলোচনা কর। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিক্ষয়:

মৃত্তিকা শিথিল হয়ে অপসৃত হলে তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয় যে কারণে সংঘটিত হয় সেগুলি হল –

প্রাকৃতিক কারণ:

1. ঝড়:

ঝড়ের ফলে গাছ উপড়ে পড়লে মৃত্তিকার বাঁধন আলগা হয়ে যায়। এর ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়।

2. বৃষ্টিপাত:

বৃষ্টিপাত খুব বেশি ও তার স্থায়িত্ব খুব বেশি হলে মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়। বৃষ্টিপাতের স্থায়িত্ব ও পরিমাণ কম হলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।

3. বায়ুপ্রবাহ:

উদ্ভিদহীন মরু অঞ্চলের তীব্র বায়ুপ্রবাহের জন্য মৃত্তিকার উপরিস্তর ক্ষয়ীভূত হয়। এর ফলে বিশাল এলাকা জুড়ে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

4. প্রণালীক্ষয়:

পার্বত্য অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের প্রভাবে সৃষ্ট জলপ্রবাহ দ্বারা বিপুল পরিমাণে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। স্তর ক্ষয়, নালি ক্ষয়, প্রণালী ক্ষয় জলপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয়ের বিভিন্ন রূপ।

5. ভূমিধ্বস:

জলের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে পাহাড় বা পর্বতের ঢাল থেকে শিলাখন্ড, কাঁদা, বালি, পলি প্রভৃতি স্তূপ আকারে অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভেঙে পড়লে তাকে ভূমিধ্বস বলে। এর ফলে মৃত্তিকার ব্যাপক আকস্মিক ক্ষয় ঘটে।

মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:

1. বৃক্ষচ্ছেদন:

নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে মৃত্তিকার বাঁধন আলগা হয়ে গিয়ে মৃত্তিকার ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

2. অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ:

অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করার ফলে মৃত্তিকা উপরিস্তরে ক্ষয়ের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

3. অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ:

অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণের ফলে মাটিতে তৃণভূমির আচ্ছাদন বিনষ্ট হয়। এটি মৃত্তিকা ক্ষয়ে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।

4. জনসংখ্যার চাপ:

ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গৃহনির্মাণ নগরায়ন, শিল্পায়ন, পরিবহন প্রভৃতি সংস্থান করতে গিয়ে ব্যাপক মৃত্তিকা ক্ষয় হচ্ছে।

মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল:

মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান ফলাফলগুলি হল –

1. মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস:

ক্রমাগত বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ, বৃক্ষচ্ছেদন, বিভিন্ন কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রয়োগ ইত্যাদি কারণে মৃত্তিকার উপরিস্তর ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত ও অপসারিত হয়। এর ফলে চাষযোগ্য উর্বর জমি অনুর্বর হয়ে পড়ে।

2. ভৌমজলের উচ্চতা হ্রাস:

মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণে ভূমির স্বচ্ছিদ্রতা হ্রাস পায়। ফলে বৃষ্টিপাতের সামান্য অংশ মৃত্তিকার স্তরের ভিতর দিয়ে ভৌমজল রূপে সঞ্চিত হওয়ার সুযোগ পায়।

3. মাটির আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস:

ভূমিক্ষয়ে মৃত্তিকার স্বচ্ছিদ্রতা হ্রাস পায়। মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা ও আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে মৃত্তিকার শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। মৃত্তিকা শুষ্ক হয়ে পড়লে কৃষির অযোগ্য হয়ে ওঠে।

4. মরু অঞ্চলের প্রসারণ:

মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। মাটি আলগা ও শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে উদ্ভিদশূন্য মরু অঞ্চলে পরিণত হয়।

5. বন্যা-খরার প্রবণতা বৃদ্ধি:

মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে খাল, বিল, নদী ও নালার গভীরতা হ্রাস পায়। ফলে বৃষ্টির জলধারণ ক্ষমতা কমে আসে সামান্য বেশি বৃষ্টি হলেই বন্যার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলেই মৃত্তিকার স্বাভাবিক জলধারণ ক্ষমতা নষ্ট হয়। ফলে রুক্ষ ও শুষ্ক অনুর্বর জমিতে পরিণত হয়ে খরার আশঙ্কা দেখা দেয়।

6. ভূমিধ্বস বৃদ্ধি:

পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে মাটি, শিলাখন্ড জলে ভিজে আলগা ও ভারী হয়ে মাধ্যাকর্ষণের টানে নীচের দিকে খসে পড়ে।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!