ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য সহ বন্টন আলোচনা কর।

ভারতের প্রধান প্রধান মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য সহ বন্টন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

ভারতের প্রধান মৃত্তিকা গুলি হল – 1. পলিমাটি, 2. কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালো মাটি, 3. লোহিত মৃত্তিকা, 4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, 5. মরু মৃত্তিকা, ও 6. পার্বত্য মৃত্তিকা। নিম্নে এই মৃত্তিকা গুলির বৈশিষ্ট্য ও বন্টন আলোচনা করা হল।

1. পলি বা পলিল মৃত্তিকা:

ভারতের প্রায় 15 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার বা 46% অঞ্চল জুড়ে এই মৃত্তিকা রয়েছে। এই মাটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

a. নদী উপত্যকার পলিমাটি:

বৈশিষ্ট্য:

  • প্লাবনের ফলে নদীবাহিত পলি, বালি, কাদা প্রভৃতি নদী উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে এই ধরনের মাটির সৃষ্টি হয়।
  • পলির উপস্থিতির কারণে এই মাটি উর্বর প্রকৃতির।
  • এই মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ধান, গম, পাট, তুলো, আখ, ডাল, তৈলবীজ, তামাক প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।

বন্টন:

গঙ্গা, সিন্ধু, বহ্মপুত্র প্রভৃতি নদ নদীর বিস্তীর্ণ উপত্যকা ও বদ্বীপ অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।

b. উপকূলের পলিমাটি:

বৈশিষ্ট্য:

  • প্রধানত সমুদ্র বাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে এই মাটির সৃষ্টি হয়।
  • এই মাটিতে বালি ও লবণের উপস্থিতির কারণে এই মাটির উর্বরা শক্তি মাঝারি ধরনের।
  • এই মাটিতে নারকেল ও সুপারি গাছ ভালো হয়।
  • নিচু ও বদি অঞ্চলে এই মাটি জোয়ারের প্রভাবে লবণাক্ত হয়ে যায় ফলে কেবল ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ জন্মায়।

বন্টন:

ভারতের পূর্ব পশ্চিম উপকূলে এই মাটি আছে। সুন্দরবন সহ ভারতের বিভিন্ন বদ্বীপ ও নিচু উপকূল অঞ্চলের লবণাক্ত মাটি দেখা যায়।

c. পীট ও জৈব মৃত্তিকা:

বৈশিষ্ট্য:

  • এই মৃত্তিকায় পলিমাটির সাথে প্রচুর তৃণ জাতীয় জৈব পদার্থের অবক্ষেপ ঘটে।
  • মালভূমি অধ্যুষিত বনাঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।

বন্টন:

কেরলের আলেপ্পি জেলা এবং উত্তরপ্রদেশের তরাই অঞ্চলে পীট ও জৈব মৃত্তিকা দেখা যায়।

2. কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালো মাটি:

বৈশিষ্ট্য:

  • লাভা থেকে সৃষ্ট ব্যাসল্ট শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটি উৎপন্ন হয়েছে।
  • এই মাটি খুব উর্বর তাই চাষাবাদ খুব ভালো হয়। বিশেষত তুলা চাষ খুব ভালো হয়।
  • কৃষ্ণ মৃত্তিকার জল ধারণ ক্ষমতাও খুব বেশি।

বন্টন:

ডেকানট্রাপ অঞ্চল, বিশেষত মহারাষ্ট্র মালভূমি, গুজরাটের ভারুচ, ভাদোদরা, সুরাট, মধ্যপ্রদেশের পশ্চিমাংশ, কর্নাটকের উত্তর অংশ।

3. লোহিত মৃত্তিকা:

বৈশিষ্ট্য:

  • প্রাচীন গ্রানাইট, নিস প্রভৃতি আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা ক্ষয় হয়ে এই মাটির সৃষ্টি হয়।
  • মাটিতে লৌহ কণার ভাগ বেশি থাকে বলে মাটির রং লাল হয়।
  • এই মাটির জল ধারণ ক্ষমতা খুব কম।
  • এই মাটি খুব একটা উর্বর নয় তবে জল সেচ ব্যবস্থা থাকলে তৈলবীজ জাতীয় শস্য উৎপাদন করা যায়।

বন্টন:

দাক্ষিণাত্যা মালভূমির অন্তর্গত তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা প্রভৃতি রাজ্যের মালভূমি অঞ্চল, ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল, মেঘালয় মালভূমিতে এই মাটি দেখা যায়।

4. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা:

বৈশিষ্ট্য:

  • এই মাটিকে লাল কাকুরে মাটি বলা হয়। এই মাটির স্থানীয় নাম মোরাম। এই মাটিতে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বেশি থাকে। এই মাটির জল ধারণ ক্ষমতা থাকে না বললেই চলে।
  • এই মাটিতে জৈব পদার্থের উপস্থিতি কম সেই জন্য এটি অনুর্বর।
  • এই মাটিতে কফি, রবার ও কাজুবাদামের চাষ হয়।

বন্টন:

পশ্চিমঘাট পর্বত, নীলগিরি, কার্ডামম পার্বত্য অঞ্চল, উড়িষ্যার পাহাড়ি অঞ্চল এবং ঝাড়খন্ডের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়।

5. মরু মৃত্তিকা বা সিলোজোম:

বৈশিষ্ট্য:

  • জৈব পদার্থহীন এই মাটিতে বালির ভাগ বেশি।
  • বৃষ্টিপাত খুব কম হয় বলে খনিজ পদার্থ গুলি মাটির উপরিস্থরে থাকে।
  • জল সেচ করা সম্ভব হলে জোয়ার, বাজরা, গম, তুলা প্রভৃতি ভূষণ চাষ করা যায়।

বন্টন:

রাজস্থানের মরু অঞ্চলে, গুজরাটের কচ্ছ ও কাথিয়াওয়াড়ের উত্তর অংশে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।

6. পার্বত্য মৃত্তিকা বা পডসল:

বৈশিষ্ট্য:

  • ভূমির ঢাল বেশি বলে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের মাটিগুলি অগভীর।
  • পার্বত্য অঞ্চলে অরণ্যময় এলাকায় এই মাটিতে হিউমাসের পরিমাণ বেশি।
  • হিমালয় পর্বতের সরলবর্গীয় বনাঞ্চলে অম্লধর্মী পডসল মৃত্তিকা দেখা যায়।
  • পর্ণমোচী উদ্ভিদ সমৃদ্ধ দক্ষিণ ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে অম্লধর্মী বাদামি চেস্টনাট মৃত্তিকা দেখা যায়। রবার, চা, কফি, বিভিন্ন মসলা, ক্রান্তীয় ফল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

বন্টন:

পূর্ব-পশ্চিম হিমালয়, পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট, নীলগিরি ও কার্ডামম পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত।

This post was updated on 2023-02-22 17:56:44.

Leave a Comment

error: Content is protected !!