আটলান্টিক মহাসাগরের অবস্থান, ভূপ্রকৃতি ও দ্বীপসমূহ সম্পর্কে আলোচনা কর।

আটলান্টিক মহাসাগরের অবস্থান, ভূপ্রকৃতি ও দ্বীপসমূহ সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

আটলান্টিক মহাসাগরের অবস্থান:

আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। এটি ভূপৃষ্ঠের মোট ক্ষেত্রফলের প্রায় ১৬ শতাংশ স্থান জুড়ে অবস্থান করছে। এই মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় অর্ধেক।

এই মহাসাগরের আকৃতি অনেকটা ইংরেজি এস অক্ষরের মত এর দুদিকের উপকূল রেখার বিন্যাস লক্ষ্য করে অনুমান করা হয় যে আটলান্টিকের উভয় পাশের মহাদেশ গুলি প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক যুগে একটি মাত্র ভূখণ্ডের অংশ ছিল।

৪০° উত্তর অক্ষাংশে এর বিস্তার প্রায় 4800 কিলোমিটার এবং ৩৫° দক্ষিণ অক্ষাংশের নিকট এর পূর্ব-পশ্চিমে এর দূরত্ব সর্বাধিক প্রায় ৫৯০০ কিলোমিটার। প্রশান্ত মহাসাগরের মতো এর উত্তর অংশ আবদ্ধ না হলেও গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড দ্বারা আংশিক আবদ্ধ এবং দক্ষিণভাগের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব দিকে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ পশ্চিম দিকে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ উত্তরে সুমেরু মহাসাগর ও দক্ষিণের কুমির মহাসাগর অবস্থিত এই মহাসাগরটি ৭০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৬৬ ডিগ্রি ৩০ মিনিট দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ৮৫° পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩০ ডিগ্রি পূর্ব দর্শন পর্যন্ত বিস্তৃত।

আটলান্টিক মহাসাগরের ভূপ্রকৃতি:

মহীসোপান:

200 মিটারের কম গভীরতা সম্পন্ন মহীসোপান আটলান্টিক মহাসাগরের সমস্ত উপকূল বরাবর দেখা যায়, তবে মহিসোপনের বিস্তৃতি সর্বত্র সমান নয়। ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বিস্কে উপসাগর থেকে দক্ষিণে আফ্রিকার সমগ্র পশ্চিম উপকূল ধরে উত্তমাশা অন্তরীপ পর্যন্ত মহিসোপানের বিস্তৃতি 80 থেকে 150 কিলোমিটার। উত্তর আমেরিকার ল্যাব্রাডর উপকূলে মহিসোপান 200 কিলোমিটার থেকে 400 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের নিকট ডগার্স ব্যাঙ্ক ও ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে উত্তরসাগরে অবস্থিত গ্র্যান্ড ব্যাংক – পৃথিবীর প্রশস্ততম মহিসোপান।

শৈলশিরা ও উচ্চভূমি:

উত্তরে আইসল্যান্ড থেকে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণে বুভেট দ্বীপ পর্যন্ত প্রসারিত আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝ বরাবর ‘S’ আকৃতির একটি নিমজ্জিত শৈলশিরা অবস্থান করছে। এটি বিখ্যাত মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা নামে পরিচিত।

বৈশিষ্ট্য:

  • এটি উপকূলের সমান্তরালে প্রসারিত, এটি দৈর্ঘ্যের দীর্ঘতম (16,200কিমি)।
  • সমুদ্র তলদেশ থেকে স্থানে স্থানে 1000 মিটার থেকে 2000 মিটার পর্যন্ত উঁচু এই শৈলশিরা বরাবর আগ্নেয়গিরি অবস্থিত।
  • শৈলশিরা তলদেশে কোন মাধ্যাকর্ষণ অসঙ্গতি নেই কিন্তু শীর্ষ দেশ থেকে পার্শ্বদেশ বরাবর এর অসঙ্গতি রয়েছে।
  • নিরক্ষরেখার ওপর রোমানশ খাত দ্বারা মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা দ্বিধা বিভক্ত। যার একটি অংশ উত্তর আটলান্টিকে ডলফিন উচ্চভূমি ও অন্য অংশ দক্ষিণ আটলান্টিকের চ্যালেঞ্জার উচ্চভূমি নামে পরিচিত।
  • মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা উত্তর দিকে ধীরে ধীরে প্রশস্ত হয়ে ল্যাব্রাডর ও আয়ারল্যান্ডের নিকট একটি নিমজ্জিত মালভূমিতে পরিণত হয়েছে এর নাম টেলিগ্রাফ মালভূমি।

এছাড়া উত্তর আটলান্টিকের ছোট ছোট শৈলশিরা গুলি হল – উইভিল-থমসন, এজোর্স সেন্ট ভিনসেন্ট, নিউ ফাউন্ডল্যান্ড উচ্চভূমি।

দক্ষিণ আটলান্টিকের প্রধান শৈলশিরা গুলি হল – ব্রমলি মালভূমি, রিও গ্রান্ডি শৈলশিরা, স্কোশিয়া শৈলশিরা, কুমেরু শৈলশিরা প্রভৃতি।

খাত:

আটলান্টিক মহাসাগরে গভীর খাতের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। তবে বিভিন্ন সমুদ্র খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  • কিউবার দক্ষিণে কেম্যান খাত, গভীরতা প্রায় 7119 মিটার।
  • পুয়ের্তোরিকো দ্বীপের উত্তরে পুয়ের্তোরিকো খাত, এটি আটলান্টিকের গভীরতম খাত – গভীরতা প্রায় 9219 মিটার।
  • দক্ষিণ আটলান্টিকের দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপের পূর্বে দক্ষিণ স্যান্ডউইচ খাত, গভীরতম অংশটি মিটিওর ডেপথ (8264 মিটার) নামে পরিচিত।
  • মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা অবস্থিত রোমানশ খাত গভীরতা 7594 মিটার।

বেসিন:

মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা আটলান্টিক মহাসাগরকে প্রধান দুটি বড় বেসিন বা অবনমিত অঞ্চলে ভাগ করেছে। এই দুই বেসিন পুনরায় কতগুলি ছোট আকারের অবনমিত অংশে বিভক্ত। বেসিন গুলির ভূপ্রকৃতি সমতল এবং এদের গভীরতা ৬০০০ মিটার।

এই মহাসাগরটির উত্তর থেকে দক্ষিণের প্রধান মেশিন গুলি হল –

  • শৈলশিরার পশ্চিমে অবস্থিত ল্যাব্রাডর বেসিন, উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক বেসিন, গুইয়ানা বেসিন, ব্রাজিল বেসিন, আর্জেন্টিনা বেসিন।
  • শৈলশিরার পূর্বদিকে অবস্থিত উত্তর-পূর্ব আটলান্টিক বেসিন, ক্যানারি ও কেপ ভার্দে বেসিন(সর্বাধিক গভীরতা 7292 মিটার), গিনি অববাহিকা, অ্যাঙ্গলা বেসিন, কেপ বেসিন, আগুলহাস বেসিন।
  • কুমেরুর উত্তরে আটলান্টিক ভারত কুমেরু বেসিন।

আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপসমূহ:

  • আটলান্টিক মহাসাগরের মহীসোপনের উঁচু অংশে গঠিত ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নিউফাউন্ডল্যান্ড।
  • ভূগঠনিক প্রক্রিয়ায় গঠিত পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ।
  • সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে উত্থিত শৈলশিরা অংশ নিয়ে গঠিত আইসল্যান্ড, ফ্যারোস, ফকল্যান্ড, দক্ষিণ ওর্কনে, দক্ষিণ শেটল্যান্ড, জর্জিয়া প্রভৃতি।
  • সেন্ট হেলেনা ও ত্রিনিতর দ্বীপ সরাসরি গভীর সমুদ্রের সমভূমি থেকে উত্থিত।।
  • প্রবল গঠিত দ্বীপ বারমুডা নিমজ্জিত আগ্নেয় শঙ্কুর ওপর গঠিত।
  • আগ্নেয় পদার্থের সঞ্চয় গঠিত মদিরা দ্বীপ।
  • নিমজ্জিত মালভূমি থেকে উত্থিত উল্লেখযোগ্য দ্বীপ হল – ক্যানারি ও কেপ ভার্দে।

FAQ/বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

টেরোপড সিন্ধুকর্দ কী?

তেরো কোড নামক ভাসমান শামুক থেকে এই সিন্ধুকর্দের সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্যালসিয়াম কার্বনেট থাকে। আটলান্টিক মহাসাগরের চ্যালেঞ্জার ও ডলফিন উচ্চভূমি এবং অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাংশে এদের সঞ্চয় বেশি।

গ্লোবিজেরিনা সিন্ধুকর্দ কী?

এই সিন্ধুকর্দ বিভিন্ন ধরনের ফোরামিনিফেরা নামক জীবের খোলক দিয়ে গঠিত হলেও গ্লোবিজেরিনা নামক জীবাণুর প্রাধান্য থাকে বলে এই নামে পরিচিত। ৪০০০ থেকে ৮০০০ মিটার গভীরতায় ক্রান্তীয় ও নতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মহাসাগর গুলিতে এই সিন্ধুকর্দ দেখা যায়।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!