ভারত মহাসাগরের অবস্থান, ভূপ্রকৃতি ও দ্বীপসমূহ সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভারত মহাসাগরের অবস্থান, ভূপ্রকৃতি ও দ্বীপসমূহ সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভারত মহাসাগরের অবস্থান:

এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত ভারত মহাসাগর ক্ষেত্রমানে পৃথিবীতে তৃতীয়। এই মহাসাগর 73.5 কোটি বর্গকিমি স্থান জুড়ে বিস্তৃত, যা ভূপৃষ্ঠের প্রায় 14 % এবং জলভাগের প্রায় 20% অধিকার করে আছে। ভারত মহাসাগরের আকৃতি একটি ত্রিভুজের মতো এবং এর প্রায় তিন দিক স্থলবেষ্টিত।

ভারত মহাসাগরের উত্তরে এশিয়া, দক্ষিণে কুমেরু মহাদেশ, পূর্বে অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশ অবস্থান করছে। এই মহাসাগর 30° উঃ থেকে 66°30′ দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং 30° পূর্ব থেকে 115° পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত।

ভারত মহাসাগরের ভূপ্রকৃতি:

মহিসোপান:

ভারত মহাসাগরের মহিসোপান অংশ বেশি নয় এবং এর বিস্তৃতিও সর্বত্র এক নয়। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে মহীসোপান খুবই প্রশস্ত সর্বাধিক ৬৫০ কিলোমিটার। আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের মহীসোপান সাধারণভাবে অপ্রশস্ত হলেও মাদাগাস্কার দ্বীপের নিকট প্রশস্ততা অনেক বেশি। ভারত মহাসাগরের পূর্ব অংশে জাভা ও সুমাত্রার উপকূলে মহীসোপান অনেক সংকীর্ণ – মাত্র 150 কিলোমিটার এবং এই মহীসোপানটি আরো দক্ষিণে অস্ট্রেলিয়ার উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত। কুমেরু মহাদেশের সন্নিকটে মহীসোপান আরও বেশি সংকীর্ণ হয়েছে।

শৈলশিরা ও উচ্চভূমি:

ভারত মহাসাগরে অনেকগুলি নিমজ্জিত শৈলশিরা দেখা যায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –

  1. মহাসাগরের মাঝ বরাবর উত্তরে লাক্ষাদ্বীপ থেকে দক্ষিণের কুমেরু মহাদেশ পর্যন্ত প্রসারিত শৈলশিরা। এই শৈলশিরার বৈশিষ্ট্য হল – এটি কোথাও 300 কিলোমিটারের কম প্রশস্থ নয় এবং এর গভীরতা 2000 মিটারের কম। এর বিভিন্ন অংশ, যেমন – উত্তর অংশ লাক্ষাদ্বীপ-চাগোস শৈলশিরা, মাঝের অংশ মধ্য-ভারত মহাসাগরীয় শৈলশিরা এবং দক্ষিণ অংশ কারগিলিন-গাউসবার্গ শৈলশিরা নামে অভিহিত।
  2. উত্তরে এডেন উপসাগরের পূর্বে সোকোট্রা দ্বীপ থেকে সোকেট্রা-চাগোস শৈলশিরা।
  3. দক্ষিণে প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরীয় শৈলশিরা।

এছাড়া,

  • মাদাগাস্কার দ্বীপের উত্তরে সিচিলি-মরিশাস শৈলশিরা।
  • ক্রুজেট দ্বীপের পশ্চিমে প্রিন্স এডওয়ার্ড ক্রুজেট শৈলশিরা।
  • কুমেরুর উত্তর পূর্বে ভারত মহাসাগর-কুমেরু শৈলশিরা।

বেসিন:

ভারত মহাসাগরের তলদেশের মোট ক্ষেত্রফলের প্রায় 60% গভীর সমুদ্রের সমভূমির অন্তর্গত, যার গভীরতা 4000-6000 মিটার। বিভিন্ন শৈলশিরা ও উচ্চভূমি এই মহাসাগরের গভীর সমভূমিকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করেছে। যেমন –

  • কুমেরু মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে আটলান্টিক ভারতীয় কুমেরু বেসিন।
  • অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া বেসিন, গভীরতম ও বৃহত্তম বেসিন সর্বাধিক গভীরতা 6459 মিটার।
  • ভারত ও এডেন উপসাগরের মাঝখানে আরব বেসিন।
  • মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে মরিশাস বেসিন।
  • চাগোস দ্বীপের কাছে মধ্য ভারতীয় বেসিন।

সমুদ্রখাত:

ভারত মহাসাগরে গভীর সমুদ্র খাত খুবই কম। উল্লেখযোগ্য খাত হল – সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপের দক্ষিণে ভঙ্গিল পর্বত বরাবর উপকূলের সমান্তরালে অবস্থিত সুন্দা খাত এর সর্বাধিক গভীরতা 7450 মিটার।

চ্যুতি:

ভারত মহাসাগরের গভীর সমুদ্রের সমভূমি তিনটি চ্যুতিরেখা দ্বারা বিচ্ছিন্ন। যথা –

  1. প্রথম চ্যুতি রেখাটি আরবের দক্ষিণে অবস্থিত ওয়েন চ্যুতিরেখা। এর একটি শাখা দক্ষিণ-পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার দিকে প্রসারিত ও অন্য শাখাটি মরিশাস খাতের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত।
  2. দ্বিতীয় চ্যুতিরেখাটি আদ্রিগুয়েজ দ্বীপ থেকে পূর্ব দিকে আরব সাগরের মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিম উপকূলের দিকে প্রসারিত হয়েছে।
  3. তৃতীয় চ্যুতি রেখাটি 90° পূর্ব দ্রাঘিমা বরাবর উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে।

ভারত মহাসাগরের দ্বীপসমূহ:

  • ভারত মহাসাগরে অবস্থিত মহাদেশের নিমজ্জিত অংশ দিয়ে গঠিত দ্বীপ গুলি হল – মাদাগাস্কার, জাঞ্জিবার, শ্রীলংকা, সোকোট্রা, কোমোরো প্রভৃতি।
  • আরাকান-ইয়োমো ভঙ্গিল পর্বতের নিমজ্জিত অংশ দিয়ে গঠিত হয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
  • ভারতের পশ্চিমে লাক্ষা ও মিনিকয় দ্বীপ ও দক্ষিণে মালদ্বীপ – প্রবালগঠিত দ্বীপ এবং মরিশাস ও রিইউনিয়ন – আগ্নেয় দ্বীপরূপে খ্যাত।
  • এছাড়া ভারত মহাসাগরে অ্যালডেবরা, সেচিলিস, চাগোস, রডরিগস, প্রিন্স এডওয়ার্ড, ক্রুজেট, কারগুলিন, কোকোস, ক্রিসমাস প্রভৃতি দ্বীপ রয়েছে।

FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

সিন্ধুকর্দ কী?

পিলেজিক সঞ্চয় বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক শ্যাওলার অবশেষে নিয়ে গঠিত এবং তরল কর্দমরূপে অবস্থান করে। এই তরল কর্দমকে সিন্ধুকর্দ বলে।

হেমিপিলেজিক সঞ্চয় কী?

আংশিক স্থলবিধৌত ও আংশিক সামুদ্রিক পদার্থে সমৃদ্ধ হওয়ায় এধরনের অবক্ষেপকে হেমিপিলেজিক সঞ্চয় বলে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!