ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।

Read- সামাজিক বনসৃজন কাকে বলে ও এর উদ্দেশ্য উল্লেখ কর। সামাজিক বনসৃজনের উপযুক্ত গাছগুলির বর্ণনা দাও।

ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা

ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা:

ভারতীয় কৃষিতে জলসেচের প্রয়োজনীয়তা সীমাহীন। কারণ –

1. মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালি চরিত্র:

ভারতীয় জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনা। এইবারও কখনো নির্দিষ্ট সময় আগে বা কখনো পরে আসে। আবার কখনো কখনো পরে এসে আগে ফিরে যায়। এই বায়ুর অনিশ্চয়তায় কখনো অনাবৃষ্টি আবার কখনো প্রবল বৃষ্টি হয়। অনাবৃষ্টি জনিত খরা থেকে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে জলসেচ একান্ত প্রয়োজন।

2. মৌসুমী বায়ুর স্থায়িত্ব:

দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে মৌসুমী বায়ুর স্থায়িত্বকাল দীর্ঘ (গড়ে চার মাস) হলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতের এর স্থায়িত্ব কম (দেড়-দু মাস)। তাই উত্তর-পশ্চিম ভারতের কৃষি উৎপাদনের জন্য জলসের অপরিহার্য।

3. বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন:

ভারতে মৌসুমী বৃষ্টিপাত সব জায়গায় সমান হয় না। উত্তর-পশ্চিম ভারতের অধিকাংশ জায়গায় বছরে 75 cm বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের বন্টনের এই আঞ্চলিক বৈষম্যের দরুণ উত্তর-পশ্চিম ভারতে কৃষি কাজের জন্য জলসেচ অপরিহার্য।

4. শুষ্ক শীতকাল:

উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশ এবং করমন্ডল উপকূলে দক্ষিণাংশ – এই দুটি অঞ্চল ছাড়া ভারতের অন্যত্র শীতকালে বিশেষ বৃষ্টিপাত হয় না। সুতরাং শীতকালে ভারতের রবিশস্য, যেমন – গম, ডাল, তৈল বীজ, প্রভৃতি চাষের জন্য জলসেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

5. মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা ও তারতম্য:

লোহিত মৃত্তিকা এবং ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার জল ধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। তাই লোহিত ও ল্যাটেরাইট সমৃদ্ধ অঞ্চলে কৃষির জন্য জলসেচের বিশেষ প্রয়োজন।

6. উচ্চ ফলনশীল শস্যের চাষ:

বর্ধিত খাদ্য চাহিদার জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে উচ্চ ফলনশীল বীজের চাষ করা হয়। কিন্তু উচ্চ ফলনশীল শস্য চাষে নিয়মিত জল প্রয়োজন একমাত্র জল সেচের মাধ্যমেই তা সরবরাহ করা সম্ভব।

7. সারাবছর ব্যাপী চাষ:

কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জমিতে প্রতিবছর তিন থেকে চারবার চাষ করা হয়। একমাত্র জলশীষ ব্যবস্থা থাকলেই জমিতে সারা বছর চাষ করা সম্ভব।

8. পতিত জমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তর:

জলসেচ ব্যবস্থা বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে বর্তমানে পতিত জমিতেও চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।

9. বিভিন্ন ফসলের জন্য জলের প্রয়োজনীয়তা:

ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন সময়ে জল সেচের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন হয়। শাকসবজি, কার্পাস, আলু, বাদাম, আখ প্রভৃতি চাষে জলের প্রয়োজনীয়তা বেশি, তার জন্য জল সেচ অনিবার্য।

Read- ভারতের ভূপ্রকৃতি সম্পর্কিত অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী।

বহুমুখী পরিকল্পনা:

যে পরিকল্পনার সাহায্যে কোনো নদীতে বাঁধ দিয়ে তার অববাহিকা অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে যখন ঐ নদীর জলকে বা নদীর প্রবাহকে বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা হয়, তখন তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলে।

যেমন – ভাকরানাঙ্গাল পরিকল্পনা ( পাঞ্জাবে বিপাশা ও শতদ্রু নদীর উপর নির্মিত), ভারতের বৃহত্তম নদী পরিকল্পনা, হীরাকুঁদ নদী পরিকল্পনা (মহানদীর উপরে নির্মিত)।

উদ্দেশ্য:

  • জলাধার সংলগ্ন অঞ্চলে সারাবছর জলসেচ ব্যবস্থা করা হয়।
  • বর্ষার অতিরিক্ত জল জলাধারে সঞ্চয় করে নদী উপত্যকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • জলাধার থেকে কৃত্রিম জলপ্রপাত সৃষ্টি করে তার সাহায্যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
  • নদীতে ও খালে সারাবছর জল থাকায় জলপথে পরিবহন করা যায়।
  • জলাধারে মাছ চাষ করা হয়।
  • জলাধারে জল পরিস্রুত করে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়।
  • জলাধার সংলগ্ন স্থানে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ভূমিক্ষয় রোধ।
  • পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা।
  • নতুন জনপদ সৃষ্টি।
  • সেতু নির্মাণ।

This post was updated on 2023-02-22 17:56:53.

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!