মৃত্তিকা পরিলেখ কাকে বলে এবং মৃত্তিকা পরিলেখ-এর স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

মৃত্তিকা পরিলেখ কাকে বলে এবং মৃত্তিকা পরিলেখ-এর স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

মৃত্তিকা পরিলেখ:

একটি আদর্শ বা পরিণত মৃত্তিকাকেভূপৃষ্ঠ থেকে ক্রমশ নিচের দিকে মূল বা আদি শিরস্তর পর্যন্ত লম্বভাবে ছেদ করলে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে সুনির্দিষ্ট গ্ৰথন, গঠন, রং, রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম বিশিষ্ট কয়েকটি স্তর দেখা যায় একে মৃত্তিকা পরিলেখ বলে।

মৃত্তিকা বিজ্ঞানের জনক রুশ বিজ্ঞানী ডকুচেভ প্রথম মৃত্তিকার পরিলেখ তথা স্তরায়নের সম্পর্কে ধারণা দেন। তার মতে মৃত্তিকায় মোট পাঁচটি প্রধান স্তর আছে। এগুলি হল –

  1. O স্তর
  2. জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ A স্তর।
  3. খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ B স্তর।
  4. আবহবিকার গ্রস্ত C স্তর।
  5. ভূমি শিলা বা জনক শিলা যাকে D স্তর নামে অভিহিত করা হয়।

মৃত্তিকা পরিলেখ-এর স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য:

মৃত্তিকা পরিলেখের পাঁচটি স্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

1. জৈব স্তর বা O স্তর:

একটি পরিণত মৃত্তিকা পরিলেখে সর্বোচ্চ স্তরটি যখন উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ বা জৈব পদার্থ বা হিউমাস দ্বারা গঠিত হয়, তখন সেই স্তরটিকে জৈব স্তর বা O স্তর।

বৈশিষ্ট্য:

  • এই স্তরের গভীরতা কম।
  • এই স্তর প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ সম্পূর্ণ বা আংশিক বিয়োজিত অবস্থায় থাকে।
  • এই স্তরের রং গাঢ় কালো হয়।
  • অরণ্য বা তৃণভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকায় এই স্তর সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।

উপস্তর:

a. O1 স্তর:

এই স্তরটিতে উদ্ভিদের পাতা, শিকড়, ঘাস এবং জীবের দেহাংশ অবিশ্লেষিত অবস্থায় পড়ে থাকে ফলে একে অবিশ্লেষিত জৈব পদার্থের স্তর বলে।

b. O2 স্তর:

এই স্তরটিতে জৈব পদার্থ আংশিক বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে।

c. O3 স্তর:

এই স্তরটিতে জৈব পদার্থ সম্পূর্ণ বিয়োজিত অবস্থায় থাকে, এখানে হিউমাস সৃষ্টি হয়।

2. A স্তর:

এটি মৃত্তিকা পরিলেখের সর্বপ্রথম স্তর, এই স্তরে হিউমাসের পরিমাণ সর্বোচ্চ।

বৈশিষ্ট্য:

  • কাঁদা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ইত্যাদি পদার্থ বৃষ্টির জলের সাথে দ্রবীভূত হয়ে নীচের দিকে স্থানান্তরিত হয়, তাই স্তরটিকে এলুভিয়াল স্তর বলে।
  • এই স্তরটির ওপরের দিকে কিছু জৈব পদার্থ মিশ্রিত থাকে বলে এটি কালো। নীচের দিকে খনিজ পদার্থ ধৌত প্রক্রিয়ায় অপসারিত হওয়ায় মৃত্তিকার রং ফ্যাকাশে হয়।

উপস্তর:

a. A1:

পুরু ও হিউমাসযুক্ত গাঢ় রঙের খনিজ মৃত্তিকার স্তর। এখানে জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রণ থাকে।

b. A2:

এলুভিয়াল স্তর খুব বেশি গভীর নয়। হালকা রঙের স্তর অল্প দানাযুক্ত। এই স্তর থেকে কাঁদা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির অপসারণ ঘটে।

c. A3:

এটি একটি প্রান্তিক স্তর। B এর দিকে পরিবর্তনশীল কিন্তু অধিক পরিমাণে A এর সঙ্গে তুলনীয়।

3. B স্তর:

ভূপৃষ্ঠ থেকে নীচের দিকে A স্তরের নীচে B স্তরটি অবস্থিত।

বৈশিষ্ট্য:

  • এই স্তরটি প্রধানত খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত হয়।
  • উপরের A স্তর থেকে আসা খনিজ পদার্থ গুলি (লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, কাঁদা কণা) এই স্তরে সঞ্চিত হয় বলে একে ইলুভিয়াল স্তর বলে।
  • B স্তরে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ থাকে।
  • এই স্তরটিতে খনিজের সঞ্চয় ঘটায় স্তরটি গাঢ় রঙের হয়।

উপস্তর:

a. B1:

রূপান্তরিত গঠন। কিন্তু A এর তুলনায় অধিক B প্রকৃতির । বাহিত হিউমাস ও লৌহ এবং অ্যালুমিনিয়াম এই স্তরে দেখা যায়।

b. B2:

মূল সঞ্চিত স্তর, স্তেপ মৃত্তিকায় এই স্তরে কার্বনেটের সঞ্চয় থাকে। কখনো সালফেট যুক্ত উপস্তর বিশিষ্ট হয়। পডসল মৃত্তিকায় কর্দম কণা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম এবং হাইড্রাস অক্সাইড জমা হয়ে কঠিন স্তর সৃষ্টি হয়।

c. B3:

রূপান্তরিত স্তর,তবে B এর তুলনায় C এর অনুরূপ।

4. C স্তর:

B স্তরের নীচে C স্তরটি অবস্থিত। আবহবিকার দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত আদি শিলা ও খনিজ কিন্তু খন্ড বা ব্লক এর মতো এবং প্রিজমের ন্যায় গঠনের অভাব দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য:

  • এটি প্রধানত আবহবিকারগ্ৰস্ত শিলাচূর্ণ দ্বারা গঠিত।
  • এখানে মূল শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ বা প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা স্থানান্তরিত হয়ে মূল শিলার উপর সঞ্চিত হয়।
  • যেহেতু এই স্তরটি অনেক গভীরে তাই এই স্তরে কোন উদ্ভিদ প্রাণী ও জীবাণুর প্রভাব দেখা যায় না।

উপস্তর:

a. C1:

শিলা মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তিত।

b. C2:

শিলা মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়ায় প্রায় অপরিবর্তিত।

5. D স্তর:

C স্তরের নীচে এটি R স্তর নামেও পরিচিত। এটি প্রধানত মূল শিলা বা জনক শিলা, যা আবহবিকারগ্রস্ত ও কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।

FAQ/ বহু চর্চিত প্রশ্ন

আদর্শ মৃত্তিকা পরিলেখ কাকে বলে?

যে সমস্ত মৃত্তিকার পরিলেখতে প্রত্যেকটি স্তর (O,A,B,C,D) এবং তাদের উপস্তর সুস্পষ্টভাবে গড়ে ওঠে সেই মৃত্তিকা পরিলেখকে আদর্শ মৃত্তিকা পরিলেখ বলে।
পৃথিবীতে একমাত্র আর্দ্র শীতল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে আদর্শ মৃত্তিকা পরিলেখ দেখা যায়।

রেগোলিথ কাকে বলে?

আদি শিলার ঠিক উপরে চূর্ণ-বিচূর্ণ ও বিশ্লিষ্ট সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম শিলাজাত পদার্থের যে স্তর আছে তাকে রেগোলিথ বলে।
অবস্থানের তারতম্য অনুসারে রেগোলিথের গভীরতা ৩০ মিটার পর্যন্ত হয় এবং ইহার উপরে -3 মিটার গভীরতাতে মাটি বলে।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!