অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি? অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশকগুলি ব্যাখ্যা কর। মানব উন্নয়ন বলতে কী বোঝো এবংমানব উন্নয়ন সূচক কি?

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশকগুলি, মানব উন্নয়ন এবং মানব উন্নয়ন সূচক কি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন:

অর্থনৈতিক উন্নয়ন হল এমন এক বহুমুখী পরিকল্পনা যার ফলে আর্থসামাজিক কাঠামো ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিবর্তন আসে এবং আর্থিক বিকাশের সাথে সাথে বৈষম্য ও দারিদ্র্যের অবসান ঘটে ও বৈদেশিক নির্ভরশীলতা হ্রাস পায় অর্থাৎ এক কথায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন হল জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রাথমিক নির্দেশক সমূহ:

মাথাপিছু উৎপাদন:

মোট জাতীয় উৎপাদনকে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু উৎপাদনের পরিমাণ জানা যায়। মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সূচিত করে। এর ফলে বৈদেশিক নির্ভরশীলতালতা দূর হয়।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি:

জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানবীয় মূলধন গঠনে সহায়ক। এতে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। যা মোট উৎপাদনের বৃদ্ধি ঘটায়।

জাতীয় আয়ের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগত বন্টনের পরিবর্তন:

অর্থনৈতিকক্ষেত্র বলতে বোঝায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও তৃতীয় বা সেবাক্ষেত্রের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা। এদের পারস্পরিক ক্ষেত্রের পরিবর্তনকে ক্ষেত্রগত পরিবর্তন বলে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটলে প্রাথমিক ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতা কমে এবং সেবাক্ষেত্রে ও মাধ্যমিক ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়। এই প্রাথমিক ক্ষেত্র থেকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সাথে সাথে নগরায়নের হার উচ্চ হয়।

সঞ্চয়ের মূলধন:

কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ বিনিয়োগ ও মূলধনের হার বৃদ্ধি করা। উৎপাদন বেশি হলে বিনিয়োগের হার বেড়ে যায়। এইজন্য উন্নত দেশগুলিতে উন্নয়নের হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ উচ্চ বিনিয়োগ। বিনিয়োগ মূলধন গঠনে সাহায্য করে। এটি কর্মসংস্থানের সন্ধান দেয় ও দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রের অবসান ঘটাতে সাহায্য করে।

উন্নত পরিকাঠামো ও প্রযুক্তি ব্যবহার:

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পূর্ণ প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে দ্রব্যের গুণগত মান দ্রব্যের বিক্রির অন্যতম নির্দেশক। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রব্যের গুণগত মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অধিক বিক্রয়, অধিক মুনাফা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও মূলধন গঠনকে নিয়ন্ত্রণ করে।

শিক্ষার প্রভাব:

শিক্ষার হার দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। শিক্ষিত মানুষ দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে সক্ষম হয়। এর দ্বারা কম সময়ে প্রচুর পরিমাণে উন্নত মানের দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব হয়।

তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্তরের কার্যাবলীতে যোগদান:

কোনো দেশে উন্নয়নের প্রভাব বোঝা যায় সেই দেশে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্তরের কার্যাবলীতে বেশি সংখ্যক মানুষের যোগদান দেখে।

মানব উন্নয়ন:

মানব উন্নয়ন হল মানুষের জীবনযাত্রার বহুবিধ আর্থসামাজিক উপাদানের অর্থাৎ খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদির উন্নয়ন।

মানব উন্নয়ন সূচক:

পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ মেহেবুব উল হক 1990 সালে সর্বপ্রথম মানব উন্নয়ন সূচকের ধারণা উপস্থাপিত করেন। এই সূচকের সাহায্যে বিভিন্ন দেশের দারিদ্র, সাক্ষরতা, শিক্ষাগত সাফল্য, প্রত্যাশিত আয়ু, শিশুর জন্মহার এবং অন্যান্য বিষয় পরিমাপ করা হয়। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অধীনস্থ সংস্থা UNDP তিনটি নির্দেশকের ভিত্তিতে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের মানব উন্নয়নের স্তরের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই তিনটি সূচক ও তার উপসূচক গুলি হল –

  1. প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল।
  2. সাক্ষরতার হার – a. বয়স্ক শিক্ষার হার (%), b. শিক্ষাক্ষেত্রে মোট নথিভুক্তির অনুপাত (%)।
  3. মাথাপিছু মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন(মার্কিন ডলার)।

এই তিনটি সূচকের সম্মিলিত মানের ভিত্তিতে মানব উন্নয়ন সূচক নির্ধারণ করা হয়। যার মান ‘0’ থেকে ‘1’ এর মধ্যে থাকে।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!