ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলির ব্যাখ্যা কর।

ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলির ব্যাখ্যা কর

ভূমিকা:

সুবিশাল বিস্তৃতির কারণে ভারতের জলবায়ু বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। জলবায়ু নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতিতে জলবায়ু বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রক গুলি হল –

অক্ষাংশ:

ভারতের অবস্থান প্রায় 8°4′ উত্তর থেকে 37°17′ উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে। ভারতের প্রায় মাঝ বরাবর কর্কটক্রান্তি রেখা বিস্তৃত। কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণাংশ ক্রান্তীয় মন্ডল এবং উত্তরাংশ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের অন্তর্গত। ফলে উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারতের শীতের প্রকোপ কম।

উচ্চতা:

ভূমির উচ্চতা ভারতের জলবায়ুর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। যেহেতু উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা কমে যায় তাই গাঙ্গেয় ভূমির তুলনায় সুউচ্চ হিমালয় অঞ্চলের গড় উষ্ণতা সারাবছর অনেক কম থাকে, এমনকি শীতকালে হিমালয় অঞ্চলে তুষারপাত হয়।

সমুদ্রের অবস্থান:

দক্ষিণ ভারতের তিনদিক সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় উপকূলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন। সামুদ্রিক ঘূর্ণবাতের প্রভাবে সমুদ্র উপকূলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়।

সমুদ্র থেকে দূরত্ব:

উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারত সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ায় সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাব কম। তাই, জলবায়ু চরমভাবাপন্ন তাছাড়া উপকূল থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রভাব কম।

পর্বতের অবস্থান:

ভারতের উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বত অবস্থান করায় শীতকালে মধ্য এশিয়ার অতি শীতল বায়ু ভারতে প্রবেশ করতে বাঁধা পায়। আবার মৌসুমী বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে বাঁধা পেয়ে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। অপর দিকে দক্ষিণ ভারতে পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাঁধা পেয়ে মৌসুমী বায়ু প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।

মৌসুমী বায়ু:

ভারতের জলবায়ুর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হল মৌসুমী বায়ু। উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, আদ্রতা, ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় মৌসুমী বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত:

ভারতে বঙ্গোপসাগর, আরব সাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেলে ক্রান্তীয় নিম্নচাপ যুক্ত ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। যা ভারতীয় জলবায়ুর উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

পশ্চিমী ঝঞ্ঝা:

শীতকালে ITCZ নিরক্ষরেখা থেকে দক্ষিণে সরে গিয়ে অবস্থান করে, ফলে বায়ুচাপ বলয় কিছুটা দক্ষিণে সরে যায়। তখন ভূমধ্যসাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে ঝড়-বৃষ্টি ও তুষারপাত ঘটায় যা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা নামে পরিচিত।

✓ পশ্চিমি ঝঞ্ঝা:

শীতকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণাবর্তের ফলে শীতকালীন শান্ত আবহাওয়ায় বিঘ্ন ঘটে একে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে।

উৎপত্তি:

শীতকালে ভূমধ্যসাগর ও স্পেনের নিকটবর্তী আটলান্টিক মহাসাগরে একটি ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় এবং এই ঘূর্ণবাত ক্রমশ পূর্ব দিকে এগিয়ে আসে। এটি যখন স্থলভাগে থাকে তখন দুর্বল হয় কিন্তু সমুদ্রের কাছাকাছি এলে আরো প্রবল আকার ধারণ করে। এর ফলে ওই ঘূর্ণবাতের বায়ু উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে পশ্চিমী ঝামেলা ঘটায়।

অবস্থান:

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে পশ্চিম ঝঞ্ঝার প্রভাব দেখা যায়।

প্রভাব:

  • হালকা বৃষ্টিপাত হয়।
  • পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়।
  • শান্ত আবহাওয়ার বিঘ্ন ঘটে।

This post was updated on 2023-02-22 17:56:52.

Leave a Comment

error: Content is protected !!