উষ্ণ-মরু ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল বলতে কী বোঝো এবং তাদের বৈশিষ্ট্য লেখ।

উষ্ণ-মরু ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল বলতে কী বোঝো এবং তাদের বৈশিষ্ট্য এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

উষ্ণ-মরু জলবায়ু অঞ্চল:

রুক্ষ ও শুষ্ক প্রাণহীন উন্মুক্ত প্রান্তরকে মরুভূমি বলে। চরম উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের অভাবে পৃথিবীর যেসব স্থানে উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু অনুভূত হয়, তাকে উষ্ণ-মরু জলবায়ু অঞ্চল বলে। ক্রান্তীয় মন্ডলের অধিকাংশ স্থানে এই জলবায়ু অনুভূত হয় বলে একে ক্রান্তীয় উষ্ণ-মরু জলবায়ু বলে।

অবস্থান:

সাধারণত 15°-35° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে উষ্ণ-মরু জলবায়ু দেখা যায়। পৃথিবীর প্রধান প্রধান উষ্ণ-মরু জলবায়ু অঞ্চল হল –

a. উত্তর আমেরিকা:

সোনেরান, মোজে।

b. দক্ষিণ আমেরিকা:

চিলির আটাকামা মরুভূমি।

c. আফ্রিকা:

সাহারা, কালাহারি।

d. এশিয়া:

ভারত-পাকিস্তানের থর মরুভূমি, আরব উপদ্বীপের বাজ-আল-খালি।

e. ওশিয়ানিয়া:

পশ্চিম অস্ট্রেলিয় মরুভূমি।

উষ্ণ-মরু জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:

সাধারণত 15°-35° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত মহাদেশ গুলির পশ্চিমাংশে উষ্ণ-মরু জলবায়ু দেখা যায়। এখানকার জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

1. উষ্ণতা:

  • এই অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 30° থেকে 35° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
  • এই অঞ্চলে পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চলটি অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির অন্তর্গত আল আজিনিয়া (58°c) সব থেকে উষ্ণতম স্থান।
  • শীতকালীন গড় উষ্ণতা 10°-15° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
  • দৈনিক উষ্ণতার ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
  • বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার 17° থেকে 22° সেলসিয়াস।

2. বায়ুর চাপ ও বায়ু প্রবাহ:

  • উষ্ণ-মরু জলবায়ু অঞ্চলের মেরুর দিকের অংশ উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের অন্তর্গত। ফলে বিক্ষিপ্ত বায়ুপ্রবাহ ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।
  • এই অঞ্চলের উপর দিয়ে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রবাহিত হয়।
  • গ্রীষ্মকালীন স্থানীয় নিম্নচাপের কারণে কিছু স্থানীয় বায়ু প্রবাহিত হয়।
  • যেমন – সাইমুম, হারমাট্টান, খামসিন ইত্যাদি।

3. মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাত:

  • উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চলের আকাশ প্রায় সারা বছর ধরেই মেঘমুক্ত থাকে।
  • মাঝে মাঝে এই অঞ্চলে ঘন কৃষ্ণবর্ণের কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি হয় এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের সৃষ্টি হয়।
  • মরু অঞ্চলে মাঝে মাঝে ক্ষণস্থায়ী পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়।
  • বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম গড়ে 25-27 cm।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল:

পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের অন্তর্গত মহাদেশ গুলির পশ্চিমাংশে একপ্রকার উষ্ণ-শুষ্ক গ্ৰীষ্ম ও আর্দ্র শীত সম্পন্ন জলবায়ু দেখা যায়। এটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে বিশেষ পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু দেখা গেলেও ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলিতে এই জলবায়ুর বিস্তার ও প্রভাব সর্বাধিক বলেই একে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। এই অঞ্চলে মৃদু গ্ৰীষ্মকাল ও আর্দ্র শীতকাল এবং সারা বছর রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করে বলে একে পৃথিবীর বিনোদন জলবায়ু বলা হয়।

অবস্থান:

উপক্রান্তীয় মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তে 30°-40° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু লক্ষ করা যায়। পৃথিবীর প্রধান প্রধান ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল হল –

a. ইউরোপ:

ইউরোপের অন্তর্গত পোর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া-হার্জিগোভিনা, যুগোস্লাভিয়া, আলবানিয়া, গ্ৰিস প্রভৃতি দেশে এই জলবায়ুর বিস্তার রয়েছে।

b. এশিয়া:

এশিয়ার তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইজরায়েল, সাইপ্রাস প্রভৃতি দেশে।

c. আফ্রিকা:

আফ্রিকার মিশর, কেপটাউন অঞ্চল, লিবিয়া, টিউনিশিয়া, আলজিরিয়া ও মরক্কো প্রভৃতি দেশের উপকূল বরাবর এই জলবায়ু দেখা যায়।

d. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র:

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্য ও দক্ষিণ অংশ।

e. দক্ষিণ আমেরিকার:

দক্ষিণ আমেরিকার চিলির মধ্যাংশ।

f. অস্ট্রেলিয়া:

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, অর্থাৎ পার্থ, অ্যাডিলেড, ভিক্টোরিয়া ইত্যাদি প্রদেশ এই জলবায়ুর অন্তর্গত।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:

উভয় গোলার্ধে 30°-40° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল অবস্থান করে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল –

1. উষ্ণতা:

  • এখানে বার্ষিক গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 21°-27°c এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা 5°-10° c এর মধ্যে থাকে।
  • বার্ষিকী গড় উষ্ণতার প্রসার 15°-27°c।
  • এই অঞ্চলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন হয় অর্থাৎ শীত গ্রীষ্মের তীব্রতা বেশি নয়।

2. বায়ুর চাপ:

  • ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় অবস্থিত।
  • এই জলবায়ু অঞ্চলে ঋতুভিত্তিক বায়ুচাপ বলয় ও নিয়ত বায়ুচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
  • উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মঋতু চলাকালীন সময়ে সূর্যের উত্তরায়নের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বায়ুচাপ বলয় কে উত্তর দিকে সরতে দেখা যায়।
  • এই অঞ্চলের বায়ুর চাপ 1020-1026 mb এর মধ্যে থাকে।

3. বায়ুপ্রবাহ:

  • গ্রীষ্মকালে বায়ু চাপ বলয়ের উত্তর দিকে স্থান পরিবর্তনের ফলে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়।
  • শীতকালে বায়ুচাপ বলয় গুলি দক্ষিণ দিকে সরে আসায় এই অঞ্চলে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ুর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
  • এই জলবায়ু অঞ্চলের উপর দিয়ে বেশ কিছু শীতল স্থানীয় বায়ু প্রবাহিত হয়। যেমন – মিস্ট্রাল ও বোরো।

4. মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাত:

  • ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে অধিকাংশ সময়ে আকাশে মেঘ-পুঞ্জ থাকে।
  • গ্রীষ্মকালে এই জলবায়ু অঞ্চল আয়ন বায়ুর অন্তর্গত হওয়ায় উচ্চচাপের সৃষ্টি হয় তাই গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয় না।
  • শীতকালে এই অঞ্চল আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুচাপ বলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
  • বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 25-27 cm।
  • বৃষ্টিপাতের বন্টনে আঞ্চলিক বৈষম্য দেখা যায়।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!