ভাগীরথী হুগলি নদীর জল কিভাবে দূষিত হচ্ছে এবং ভাগীরথী হুগলি নদীর উপর বর্জ্যের প্রভাব এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভাগীরথী-হুগলি নদীর জল দূষণের কারণ:
প্রায় 2500 km দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতের জীবনরেখা। কিন্তু মোহনা থেকে 600 km উত্তরে বা ভাগীরথী-হুগলি নদীতে বর্জ্যের পরিমাণ সর্বাধিক। ভাগীরথী-হুগলি দূষণের জন্য চিহ্নিত মূল উৎস গুলি হল –
- ভাগীরথী-হুগলি নদীর তীরে অবস্থানরত শহরগুলি থেকে নর্দমার মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ নোংরা জল নদীতে এসে পড়ছে।
- বিভিন্ন শিল্প থেকে নির্গত দূষিত জল, তরল বস্তু, জৈব ক্ষয়ী হয় এমন পদার্থ, ভারী ধাতু ইত্যাদি সরাসরি গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়।
- ভাগীরথী-হুগলির পার্শ্ববর্তী কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ভূমিক্ষয়ের মাটি জল বাহিত হয়ে এই নদীতে মেশে।
- নদীর তীরে মলত্যাগ, গবাদি পশুর স্নান, মৃত পশু নিক্ষেপ, ব্যবহৃত শুকনো ফুল, প্লাস্টিক প্রভৃতি সরাসরি নদীতে ফেলার জন্য জল দূষিত হচ্ছে।
- নদী তীরে অবস্থিত শশান গুলি থেকে ব্যাপক দূষণ ঘটে চলেছে।
- বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি নদীতে বিসর্জন দেওয়া, পাট পঁচানো, কাপড় কাঁচা এসবই নদীর জলকে বিষাক্ত করে তুলেছে।
- চর্ম শিল্প, রং শিল্প, রাসায়নিক শিল্প, পাট শিল্প, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্প প্রভৃতির বর্জ্য পদার্থ, গরম জল, বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত জল নদীতে এসে পড়ছে, যা নদীর জল দূষণ ঘটাচ্ছে।
- নদীতে যন্ত্রচালিত জলযান বৃদ্ধি পাওয়ায় পোড়া মোবিল, ডিজেল, পেট্রোল সবকিছুই নদীর জলে সংমিশ্রণ ঘটছে।
ভাগীরথী-হুগলি নদীর উপর বর্জ্যের প্রভাব:
1985 খ্রিস্টাব্দে ভাগীরথী-হুগলি নদীকে দূষণমুক্ত করার জন্য একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যেটি ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ নামে পরিচিত। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কিছুটা সার্থকতা পেলেও ভাগীরথী-হুগলি নদীতে এখনো বর্জ্যের যে কুপ্রভাব গুলি দেখা যায় সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –
a. নদীর জলের গুণগত মান হ্রাস:
নদী তীরে মলত্যাগ, গবাদি পশুর স্নান, মৃত পশু নিক্ষেপ, কৃষি ক্ষেত্রের ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এবং নদী পাড়ের আবর্জনা থেকে নির্গত দূষিত জল নদীর জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। ফলে নদীর জলের গুণগত মান ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে।
b. নদী ভরাট:
পলির সঙ্গে বর্জ্য মিশে নদীর উপত্যকার গভীরতা ক্রমশই কমছে, ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
c. মাছের সমগম হ্রাস:
নদীতে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য জমাট বাঁধায় নদীর বিষাক্ত জলে মাছের সমাগম কমছে। অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমনকি কিছু প্রানী বিলুপ্তির পথে।
d. পানীয় হিসেবে ব্যবহার যোগ্যতা:
ভাগীরথী-হুগলি নদীর জল টালা ট্যাংকে শোধন করে কলকাতা বাসীকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন বর্জ্য দ্বারা দূষণের মাত্রা এই হারে বাড়তে থাকলে খুব শীঘ্রই নদীর জল পানের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
e. জোয়ারের প্রকোপ:
বর্জ্য দ্বারা নদী ভরাট হওয়ায় জোয়ারের জল বেড়ে নদীতে মিষ্টি জলের পরিমাণ কমছে।
f. নদী পাড় ভাঙ্গন:
বর্জ্য দূষণে নদী পাড়ের ভাঙ্গন বাড়বে। ফলে হাজার হাজার হেক্টর জমি কৃষির অযোগ্য হয়ে পড়বে এবং ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে।
g. নদী পরিবহনে বিঘ্ন:
নদীতে ভাসমান নানা বর্জ্য নদীর জলপথে পরিবহন ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
h. কৃষি ফসলের দূষণ:
নদীর বিষাক্ত জল কৃষিতে জল সেচে ব্যবহার করলে জমি এবং কৃষি ফসলের দূষণ মাত্রা বেড়ে যায়।
This post was updated on 2023-02-22 17:56:25.