মিশর ও পাকিস্তানের জলসেচ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে লেখ।

মিশর ও পাকিস্তানের জলসেচ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

মিশরের জলসেচ:

উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার নীলনদ অববাহিকায় অবস্থিত মিশর বা ইজিপ্ট একটি কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশের প্রায় ৭০% লোক জীবিকার জন্য কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। তুলো, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ধান, আখ, ফল এখানকার প্রধান কৃষি জাতীয় সামগ্রী। মিশরে তিন ধরনের শেষ ব্যবস্থা আছে। যথা –

a. অববাহিকা সেচ ব্যবস্থা বা Basin Irrigation:

এই সেচ ব্যবস্থা প্রায় 5000 বছরের প্রাচীন ও বহুল প্রচলিত। অববাহিকা সেচ বা বেসিন ইরিগেশন পদ্ধতিতে নীলনদের দুপাশে প্লাবনভূমিতে নদীর আড়াআড়ি প্লাবন খাল কেটে বন্যার অতিরিক্ত জল ঢুকিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। বন্যার জলে কৃষি জমি সিঞ্চিত হয় এবং বন্যার জমা জল থেকে প্রাপ্ত পলিতে মাটি উর্বর হয়ে ওঠে। মাটির উর্বরতা প্রতিবছরের বন্যায় বৃদ্ধি পায় আর এই কৃষিকাজ সুস্থায়ী হয়। প্লাবন খালগুলির মুখে স্লুইস গেট থাকে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিগুলিতে জল দেওয়ার জন্য স্যাজফ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

b. খালসেচ ব্যবস্থা:

এই খাল গুলি নিত্যবহ খাল। নীল নদের উপর বাঁধ নির্মাণ করে জলাধারে সঞ্চিত জল সেচকাজে ব্যবহার করা হয়। মিশরের সেচখালগুলি প্রধানত আসোয়ান বাঁধ, নাখামাদি বাঁধ, অ্যাসিউট বাঁধ এর সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে মিশরের সেচ খালগুলির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 30 হাজার কিলোমিটার। ছোটো ছোটো কৃষি জমিতে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য মূল থেকে বহু শাখা খাল খনন করা হয়েছে।

c. ভৌমজলের সাহায্যে জলসেচ:

মিশরের অপর একটি উল্লেখযোগ্য সেচ পরিকল্পনা নিউ ভ্যালি প্রকল্প। এই প্রকল্পে আর্টেজীয় কূপের সাহায্যে ভৌম জল তুলে পশ্চিমে মরুদ্যানের কৃষি কাজ করা হয়। এভাবে খারগা ও ডাকলা মরুদ্যানে জলসেচের মাধ্যমে প্রচুর শস্য উৎপাদন করা হয়।

পাকিস্তানের জলসেচ:

দক্ষিণ এশিয়ার একটি অন্যতম দেশ হলো পাকিস্তান। এটি মূলত কৃষি নির্ভর উন্নয়নশীল দেশ। এর আয়তন 7.96 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। দেশে প্রায় ৬০% লোক কৃষি কাজের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। পাকিস্তানের মোট তিন রকম পদ্ধতিতে জল সেচ করা হয়। যথা –

a. খাল সেচ ব্যবস্থা:

সিন্ধু ও তার উপনদী গুলিকে ব্যবহার করে পাকিস্তানের জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। পাকিস্তানের পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বে খালশেজ ব্যবস্থার প্রসার সব থেকে বেশি পাকিস্তানের প্রধান খাল গুলির নিত্যবহ খাল এদের মধ্যে অন্যতম হল – বৃহত্তম দল খাল প্রকল্প, নিম্ন বড়ি দোয়াব খাল প্রকল্প, কচ্চি খাল প্রকল্প, চশমার দক্ষিণ খাল প্রকল্প ইত্যাদি। দেশে খাল সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণ এর জন্য জিন্না ব্যারেজ, কোঠরি ব্যারেজ, গুড্ডু ব্যারেজ, চশমা ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে দেশের ১.৪ কোটি হেক্টর জমি সেচ ব্যবস্থার অধীন। 1960 সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের জলবন্টন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং বিভিন্ন মরশুমে জল বন্টনের ব্যাপারে তদারকি করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

পাকিস্তানের খাল সেচ ব্যবস্থা প্রসারণের ফলে গম, ধান, আখ, তুলো, ডাল ও সব্জির চাষ অনেক সুরক্ষিত হয়েছে।

b. ক্যারেজ সেচ ব্যবস্থা:

সূর্যের প্রখর তাপে জলের বাষ্পীভবন আটকাতে মাটির নীচে সুরঙ্গ কেটে এই পদ্ধতিতে জল সেচ করা হয়। চোলিস্তান ও থর মরুর প্রান্তবর্তী এলাকায় এই সেচ ব্যবস্থা প্রচলিত।

c. কূপ ও নলকূপ ব্যবস্থা:

এখানে পারস্য চক্র ও বিদ্যুৎ চালিত পাম্প দুই এর সাহায্যে কূপ ও নলকূপ পদ্ধতিতে জলসেচ হয়। দেশের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল ও নদী অববাহিকায় এই প্রথা প্রচলিত আছে। দেশের মোট সেচিত জমির প্রায় ১৮% অংশে এভাবে জলসেচ হয়।

এছাড়া ফোয়ারা সেচ পদ্ধতি, বিন্দুপতন সেচ পদ্ধতি প্রভৃতি ব্যবস্থায় সেচ কাজ করা হয়।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!