চ্যুতি কাকে বলে এবং চ্যুতির ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির বর্ণনা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
.png)
Read- ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী।
চ্যুতি:
বিভিন্ন ভূতত্ত্ববিদ ও পদার্থবিদ বিভিন্নভাবে চ্যুতির সংঞ্জা দিয়েছেন। ভূতত্ত্ববিদ বিলিংস এর মতে – “চ্যুতি বলতে সেই ফাটলকেই বোঝায় যেখানে ফাটলের বিপরীত দিকে অবস্থিত বা শিলা প্রাচীর গুলি একে অন্যের থেকে দূরে সরে যায়।”
সাধারণভাবে ভূ-আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ থেকে অন্য অংশের আপেক্ষিক সঞ্চালনকে চ্যুতি (Fault)বলে।
চ্যুতির ফলে সৃষ্ঠ ভূমিরূপ:
চুতির আকৃতি, প্রকৃতি ও গঠনগত তারতম্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। নিম্নে ভূমিরূপ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
1. চ্যুতি ভৃগুতট:
চ্যুতি সৃষ্টির প্রত্যক্ষ প্রভাবে ঊর্ধস্তুপ ও অধোস্তূপের মাঝে যে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতি ভৃগুতট চ্যুতি ভৃগু বলে। এদের উচ্চতা 1000 মিটারের বেশি হতে পারে।
উদাহরণ – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেট বেসিন অঞ্চল এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
2. চ্যুতিরেখা ভৃগু:
চ্যুতি রেখার দুপাশে কঠিন ও নরম শিলার অবস্থানের ফলে যে বৈষম্যমূলক ক্ষয়কাজ হয় তার ফলে প্রাথমিক ভৃগু কিছুটা ক্ষয় পায় ও চ্যুতিরেখা বরাবর নতুন করে ভৃগু সৃষ্টি হয়। এভাবে চ্যুতি রেখা বরাবর ক্ষয়প্রাপ্ত আংশিক পুরাতন ভৃগু ও পরে তৈরি হওয়া নতুন ভৃগুকে একত্রে চ্যুতিরেখা ভৃগু বলে।
চ্যুতিরেখা ভৃগু বিভিন্ন প্রকার হয়। যথা –
Read- অতিরিক্ত জলসেচের অসুবিধাগুলি লেখ।
a. পুনর্ভবা চ্যুতিরেখা ভৃগুতট:
চ্যুতিরেখার যেদিকে প্রথম চ্যুতিভৃগু সৃষ্টি হয়েছিল ক্ষয় কার্যের পরেও যদি সেই দিকেই ভৃগুতট অবস্থান করে তাকে পুনর্ভবা চ্যুতিরেখা ভৃগুতট বলে।

b. বিপরা চ্যুতি ভৃগুতট:
চ্যুতিরেখার যেদিকে প্রথম চ্যুতিভৃগু সৃষ্টি হয়েছিল ভূপৃষ্ঠ সমতলীকরনের পরে যদি তার বিপরীত পাশে নতুন ভৃগুর সৃষ্টি হয় তাকে বিপরা চ্যুতিরেখা ভৃগতট বলে।

c. বিমিশ্র চ্যুতি রেখা ভৃগু:
চ্যুতিরেখা বরাবর কোন ভৃগু যদি আংশিকভাবে ক্ষয়ের ফলে ও আংশিকভাবে পুনরায় ভূ-আলোড়নের ফলে সৃষ্টি হয় তবে তাকে বিমিশ্র চ্যুতিরেখা ভৃগু বলে।
উদাহরণ – U.S.A. এর নেভাডার ইস্ট হামবোল্ড পর্বতের উত্তর প্রান্ত।
3. পুনরুজ্জীবিত চ্যুতি ভৃগু:
কোন কারনে পলির দ্বারা চাপা পড়ে যাওয়া চ্যুতিভৃগু পলির অপসারণের ফলে পুনরায় ভূপৃষ্ঠে প্রকাশিত হলে তাকে পুনরুজ্জীবিত চ্যুতিভৃগু বলে।
4. হোর্স্ট স্তুপ পর্বত:
প্রায় সমান্তরাল দুটি চ্যুতির মাঝখানের ভূখণ্ড উপরে উঠে গিয়ে কিংবা বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগের চারপাশের অঞ্চল বসে গেলে যে বিস্তৃত উচ্চভূমির সৃষ্টি হয় তাকে হোর্স্ট বলে। প্রথমে হোর্স্টের শীর্ষদেশ মালভূমির মতো চ্যাপ্টা হয়। কিন্তু পরে এটি নদনদীর দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পর্বতের আকার ধারণ করে, তখন একে স্তুপ পর্বত বলে।
যেমন – ভারতের সাতপুরা ও শিলং মালভূমি, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট ইত্যাদি।
Read- হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।
5. তির্যকচ্যুত স্তূপ পর্বত:
দুটি তির্যক চ্যুতির মাঝখানে একদিকে বেশি হেলে থাকা স্তুপ পর্বত কে তির্যকচ্যুত স্তুপ পর্বত বলে। এই পর্বতের এক পাশের ঢাল খুব খাড়া হয় ও এটি তখন ভৃগু রূপে অবস্থান করে এবং অন্যপাশের ঢাল মৃদু হয়।
যেমন – ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বত।
6. স্রংস উপত্যকা:
দুটি স্বাভাবিক চ্যুতির মাঝখানের ভূভাগ বসে যাওয়ার ফলে অথবা চ্যুতি সংলগ্ন ভূমিভাগের চারপাশের অঞ্চল উঠে যাওয়ার ফলে যে নীচু ভূমিভাগ বা উপত্যকার সৃষ্টি হয় তাকে স্রংস উপত্যকা বলে।
যেমন – পূর্ব আফ্রিকার গ্ৰেট রিফট ভ্যালি পৃথিবীর বৃহত্তম স্রংস উপত্যকা।
