পূর্ব ও মধ্য ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভূমিকা:
পূর্ব-মধ্য ভারতে, যেমন – পূর্ব ভারতের দুর্গাপুর, কুলটি-বার্নপুর, জামশেদপুর, রৌরকেলা, বোকারো ও মধ্য ভারতের ভিলায় প্রভৃতি স্থানে লৌহ ইস্পাত কারখানার কেন্দ্রীভবন ঘটেছে। এছাড়াও এই অঞ্চলে আরো কয়েকটি লৌহ ও ইস্পাত কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এই অঞ্চলের লোহা ও ইস্পাত কারখানার কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি হল –
1. প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সহজলভ্যতা:
a. কয়লা:
দামোদর অববাহিকা অঞ্চলের ঝরিয়া, বোকারো, গিরিডি, ডালটনগঞ্জ, রানীগঞ্জ, উড়িষ্যার তালচের ছত্রিশগড়ের কোরবা, সোনহাট এবং মধ্যপ্রদেশের সিঃগ্ৰাউলি, উমারিয়া কয়লাক্ষেত্রের বিটুমিনাস শ্রেণীর কয়লা এই শিল্প কেন্দ্রগুলিতে ব্যবহার করা হয়।
b. আকরিক লোহা:
ঝাড়খণ্ডের গুয়া, নোয়ামুন্ডি, চিরিয়া, ওড়িশার গোরুমহিষানি, বাদামপাহাড়, সুলাইপাত এবং ছত্রিশগড়ের বায়লাডিলা, দাল্লিরাজহারা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে উচ্চমানের ম্যাগনেটাইট ও হেমাটাইট জাতীয় আকরিক লোহা এই শিল্প কেন্দ্রগুলিতে ব্যবহার করা হয়।
c. চুনাপাথর:
এই অঞ্চলের শিল্প কেন্দ্রগুলি ওড়িশার বীরমিত্রপুর, ঝাড়খণ্ডের ভবনাথপুর ও ডালটনগঞ্জ, ছত্রিশগড়ের পূর্ণপাণি এবং মধ্যপ্রদেশের কাটনি, সাতনা প্রভৃতি স্থানের চুনাপাথর ব্যবহার করে।
d. ডলোমাইট ও ম্যাঙ্গানিজ:
ওড়িশার গাংপুর, সুন্দরগড়, মধ্যপ্রদেশের কাটনি, ছত্রিশগড়ের হিররি থেকে ডলোমাইট এবং ওড়িশার গাংপুর ও বোনাই থেকে ম্যাঙ্গানিজ আমদানি করা হয়।
২. জলের সহজলভ্যতা:
দামোদর, সুবর্ণরেখা, মহানদী, ব্রাহ্মণী, খরকাই, বরাকর প্রভৃতির নদনদী থেকে সহজেই শিল্পের প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ জল পাওয়া যায়। এছাড়া তেন্ডুলা জলাধার থেকেও জল পাওয়া যায়।
3. পর্যাপ্ত বিদ্যুৎশক্তি:
এই অঞ্চলে প্রচুর কয়লা নির্ভর বৃহদায়তন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যেমন – পূর্ব ভারতের দুর্গাপুর, মেজিয়া, দিশেরগড়, ওয়ারিয়া, বোকারো, পাত্রাতুর, তালচের প্রভৃতি এবং মধ্য ভারতের কোরবা, বিন্ধ্যাচল প্রকৃতি। এছাড়া হিরাকুঁদ ও সিলেরুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলবিদ্যুৎ প্রাপ্তির সুবিধা পূর্ব ও মধ্য ভারতের লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রীভবনের সহায়ক হয়েছে।
4. উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা:
ভারতীয় রেলপথের বিভিন্ন শাখা, পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেলপথ এবং NH2, NH6, NH23, NH31, NH33 প্রভৃতি জাতীয় সড়ক এই অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রসারিত হওয়ায় দেশের যেকোনো অঞ্চলের সাথে সহজেই যোগাযোগ ও পণ্য দ্রব্য সহজেই আদান প্রদান করা যায়।
5. বন্দরের নৈকট্য:
কলকাতা-হলদিয়া, পারাদ্বীপ ও বিশাখাপত্তনম প্রভৃতি বন্দরের সান্নিধ্য এই অঞ্চলের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের উন্নতিতে বিশেষ সহায়তা করেছে।
6. সুলভ শ্রমিকের প্রাচুর্য:
পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্য ভারতের ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য যথেষ্ট জনবহুল হওয়ায় এখানে যথেষ্ট সংখ্যক সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।
7. উন্নত বাজার ও চাহিদা:
পূর্ব ও মধ্য ভারত ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে খুবই সমৃদ্ধ। তাই এই অঞ্চলের লোহা ও ইস্পাতের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
✓ কাকে ভারতের রূঢ় বলে?
দুর্গাপুর কে ভারতের রূঢ় বলে।
✓ ভারতের বৃহত্তম লৌহ ইস্পাত কেন্দ্র কোনটি?
ভারতের বৃহত্তম লৌহ ইস্পাত কেন্দ্র ভিলাই স্টিল প্ল্যান্ট।
✓ ভারতের একটি মিশ্র লৌহ ইস্পাত কেন্দ্রের নাম লেখ।
ভারতের একটি মিশ্র লৌহ ইস্পাত কেন্দ্রের নাম সালেম।
✓ ইস্পাত দৃঢ় করার জন্য কোন ধাতু ব্যবহার করা হয়?
ইস্পাত দৃঢ় করার জন্য ম্যাঙ্গানিজ ধাতু ব্যবহার করা হয়।
✓ কোন শিল্পকে সকল শিল্পের মেরুদন্ড বলে?
লৌহ-ইস্পাত শিল্পকে সকল শিল্পের মেরুদন্ড বলে।