বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির নাম এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ভূমিকা:
পার্বত্য অঞ্চলেনদী প্রধানত ক্ষয় কাজ করে এবং সমভূমি অঞ্চলে নদীর প্রধানত সঞ্চয় কাজ করে, নদীর এই সঞ্চয় কাজের ফলে কতগুলি ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। যেমন –
পলল শঙ্কু ও পলল ব্যজনী:
পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে নদীর সমভূমিতে এসে পড়লে ভূমির ঢাল হঠাৎ কমে যায় বলে নদীর স্রোত এবং বহন ক্ষমতা দুটি হ্রাস পায়। এর ফলে সমভূমিতে পড়ার মুখে নদী উপত্যকায় পলি,বালি, কাঁকড় প্রভৃতি জমে পর্বতের পাদদেশে শঙ্কুর আকারে সঞ্চিত হয় একে পলল শঙ্কু বা ত্রিকোণ পলল ভূমি বলে।
পলল শঙ্কুর উপর দিয়ে নদী বিভিন্ন খাতে প্রভাবিত হলে পলল শঙ্কু অর্ধ গোলাকার আকৃতিতে ভাগ হয়ে পড়ে। হাত পাখার মত দেখতে প্রায় গোলাকার এই ভূমিরূপকে পলল ব্যজনী বা পাখা বলে। যেমন- হিমালয়, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি পর্বতের পাদদেশে প্রায় সকল রোজিতে গড়ে ওঠে।

নদী চড় ও নদী দ্বীপ:
সমভূমিতে নদীর গতিবেগ কম থাকার দরুণ পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে আনা বিপুল পরিমাণ নুড়ি, পাথর, বালি প্রভৃতি নদী বক্ষে সঞ্চিত হয় এর ফলে নদীবক্ষে চড় বা দ্বীপ সৃষ্টি হয় একেই নদীচড় বলে। চড় বা চড়া অংশে সঞ্চয় আরও বাড়লে তা ক্রমশ দ্বীপে পরিণত হয়। একে নদী দ্বীপ বলে।
যেমন ব্রহ্মপুত্র হ্রদের ওপর মাজুলি ভারতের বৃহত্তম নদী দ্বীপ, আমাজন নদীর ওপর ইলহা-দ্য-মারাজো পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ।

প্লাবন ভূমি:
সমভূমিতে ভূমির ঢাল কম থাকে বলে নদী ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে গতিপথের এই অংশে নদীতে হঠাৎ জল বেড়ে গেলে উপত্যকায় বন্যা বা প্লাবন হয়।প্লাবিত অঞ্চলে পলি, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমি বা প্লাবন সমভূমির সৃষ্টি হয়।
যেমন বিহারের গঙ্গা নদীর গতিপথের দুপাশে প্লাবনভূমি লক্ষ্য করা যায়।

স্বাভাবিক বাঁধ:
সমভূমিতে নদীর গতিবেগ কম থাকে বলে উচ্চ গতিতে নদীর জলের সঙ্গে যে সব পলি, বালি, কাঁদা প্রভৃতি বাহিত হয়ে আসে সেগুলি নদী আর বহন করতে পারে না। সেগুলি নদীর দুই তীরে সঞ্চিত হয়ে বাঘের মতো উঁচু হয়ে যায়। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয় বলে একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে। সমভূমিতে গঙ্গা নদীর দুই তীরে এরূপ স্বাভাবিক বাঁধের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।
বদ্বীপ:
নদী প্রবাহের শেষ অবস্থায় নদী যখন সাগর বা হ্রদে মিলিত হয় তখন নদীর স্রোতের বেগ মন্দীভূত হওয়ায় নদী বাহিত বস্তুভার ক্রমান্বয়ে সঞ্চিত হয়ে কালক্রমে বাংলা মাত্রাহীন ‘ব’ বা গ্ৰিক অক্ষর ডেল্টার মতো এক ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, একে বদ্বীপ বলে।
যেমন – গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা ব দ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের উদাহরণ।

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ:
নদীর নিম্ন প্রবাহে সমভূমি অঞ্চলের ওপর দিয়ে নদী আঁকাবাঁকা বা সর্পিল গতিতে প্রবাহিত হয়। এই নদী বাঁকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা দুই তীরে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। নদীর অবতল তীরে জলস্রোত ক্ষয় করে অর্থাৎ উত্তর তীরে সঞ্চয় হয়। এইভাবে নদী বাঁক ক্রমশ বাড়ে ও স্থানে স্থানে বাঁকের মধ্যবর্তী স্থানে সংকীর্ণ হয়ে অবশেষে সামান্য ব্যবধান ও লুপ্ত হয় এবং নদী সোজাসুজি প্রবাহিত হয়। পরিত্যক্ত বা অবশিষ্ট বাঁকটি তখন হ্রদের আকারে অবস্থান করে। এই ধরনের হ্রদ দেখতে ঘোড়ার খুরের মতো বলে একে অস্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।

ষষ্টঘাতের সূত্র কী?
নদী অববাহিকায় অধিক বৃষ্টিপাত বা নদী বাহিত উপাদানের বোঝা হ্রাস বা ভূমির ঢাল বৃদ্ধির দরুণ নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেলে নদীর বহন ক্ষমতা 64 গুণ অর্থাৎ 2 to the power 6 গুণ বৃদ্ধি পায়। নদী বিজ্ঞানে নদীর গতিবেগের সঙ্গে বহন ক্ষমতার এই অনুপাতকে ষষ্ঠ ঘাতের সূত্র বলে।
আদর্শ নদী কাকে বলে?
ভূমির ঢাল ও নদীর কার্যের তারতম্য অনুসারে নদী গতিপথ কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – উচ্চগতি, মধ্যগতি, নিম্নগতি।
যেসব নদীর এই তিনটি গতি স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় তাকে আদর্শ নদী বলে।