কালবৈশাখী, লু, আঁধি, পশ্চিমি ঝঞ্ঝা, আশ্বিনের ঝড় সম্পর্কে টীকা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
কালবৈশাখী:
বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে প্রত্যহ বিকেলের দিকে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে বজ্র বিদ্যুৎসহ যে ঝড়-বৃষ্টি হয় তাকে নরওয়েস্টার বা কালবৈশাখী বলে।
উৎপত্তি:
অনেক সময় স্থানীয় কারণে আঞ্চলিক নিম্নচাপ কেন্দ্রে সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপ পূরণ করার জন্য উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা স্থানীয় বায়ুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।
নামকরণ:
উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড় আসে বলে একে নরওয়েস্টার বলে।
প্রভাব:
- তাপমাত্রা মূহুর্তের মধ্যে 10°-15°c কমে যায়।
- মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়।
- তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে সাময়িক মুক্তি ঘটে।
- Thunder storme শস্যহানি ঘটায় কারণ এই ঝড়ে শিলাবৃষ্টিও ঘটে থাকে।
লু:
গ্ৰীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভূপৃষ্ঠের যে উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় তাকে লু বলে।
অবস্থান:
রাজস্থান, পাঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে লু বায়ু প্রবাহিত হতে দেখা যায়।
উৎপত্তি:
গ্ৰীষ্মকালে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠ প্রচন্ড উষ্ণ হয়। এই উষ্ণ ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে বায়ু গরম হয়ে ওঠে। এই গরম বায়ু প্রবলবেগে শোঁ শোঁ শব্দ করে প্রবাহিত হলে লু সৃষ্টি হয়।
প্রভাব:
- এই বায়ুর প্রভাবে তাপমাত্রা 40°-50°c হয়ে থাকে।
- গতিবেগ গড়ে ঘন্টায় 30-40 km হয়।
- এটি ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবাহিত হয়।
- আবহাওয়া শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
- মানুষ ও গবাদি পশু মারা যায়।
আঁধি:
গ্ৰীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমিতে যে প্রবল ধূলিঝড়ের সৃষ্টি হয় তাকে আঁধি বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- বায়ুর গতিবেগ 50-60 km /hr।
- মেঘের সঞ্চার ঘটে না।
- এই ঝড়ে বৃষ্টি হয় না।
- প্রচুর ধূলো সৃষ্টি হয়।
- তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পায়।
পশ্চিমি ঝঞ্ঝা:
শীতকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণবাতের ফলে শীতকালীন শান্ত আবহাওয়ায় বিঘ্ন ঘটে, একে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে।
উৎপত্তি:
শীতকালে ভূমধ্যসাগর ও স্পেনের নিকটবর্তী আটলান্টিক মহাসাগরে একটি ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় এবং এই ঘূর্ণবাত ক্রমশ পূর্ব দিকে এগিয়ে আসে। এটি যখন স্থলভাগে থাকে তখন দুর্বল হয় কিন্তু সমুদ্রের কাছাকাছি এলে আরো প্রবল আকার ধারণ করে। এর ফলে এই ঘূর্ণবাতের বায়ু উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে পশ্চিমি ঝামেলা ঘটায়।
অবস্থান:
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব দেখা যায়।
প্রভাব:
- হালকা বৃষ্টিপাত হয়।
- পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়।
- শান্ত আবহাওয়ার বিঘ্ন ঘটে।
আশ্বিনের ঝড়:
প্রত্যাগমনকারী মৌসুমী বায়ুর সঙ্গে সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়, একে সাইক্লোন বলে। পশ্চিমবঙ্গে এই ঝড় যেহেতু আশ্বিন মাসে দেখা যায় তাই এটি আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
প্রভাব:
- বঙ্গোপসাগর থেকে আসা শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়।
- এই ঝড়ের প্রভাবে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে জলোচ্ছ্বাস সহ প্লাবন হয়।
- আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
- হঠাৎ করেই বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা কমে যায়।