ওজোন স্তর কী, ওজোন গহ্বর বলতে কি বোঝো এবং জীব মণ্ডলের ওপর ওজোন স্তর ক্ষয়ের প্রভাব সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
Read- ইক্ষু উৎপাদনে অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।

ওজোন স্তর:
বায়ুমন্ডলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চ অংশে প্রাকৃতিক কারণে অক্সিজেন অনু এবং অক্সিজেন পরমাণুর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ওজোন গ্যাস উৎপন্ন হয় (ওজন হল নীল রঙের মৎস্য গন্ধযুক্ত এক ধরনের গ্যাস)। সমগ্র স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও এর ঘনত্ব সর্বাধিক থাকে 15 থেকে 35 কিলোমিটার উচ্চতায়। এই অংশ ওজোন স্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
ওজোনোস্ফিয়ারে ওজনের গাঢ়ত্ব খুবই কম – মাত্র 10 ppm। ওজনের সর্বাধিক গাঢ়ত্ব ক্রান্তীয় অঞ্চলে 25 কিলোমিটার ঊর্ধ্বে, 21 কিলোমিটার উর্দ্ধে মধ্য অক্ষাংশে এবং 18 কিলোমিটার ঊর্ধ্বে মেরু অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়।
সাধারণত বায়ুমন্ডলে ওজনের ঘনত্বকে ডবসন এককে (Dobson unit) প্রকাশ করা হয়। এক ডবসন একক বলতে এক বায়ুমন্ডলীয় চাপে 0.001 মিলিমিটার পুরু ওজোনের ঘনত্বকে বোঝায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলে (0° – 30°) এই ঘনত্ব 250 DU। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে (30° – 60°) বায়ুমন্ডলে ওজোনের স্বাভাবিক ঘনত্ব 350 DU এবং মেরু অঞ্চলে (60° এর অধিক) প্রায় 450 DU।
ওজোন গহ্বর:
বর্তমানে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগের সাথে (CFC, NO2 ইত্যাদি) ওজোন গ্যাসের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোন কোন অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলের স্ট্যাটাস্ফিয়ারে ওজন স্তরের অবক্ষয় ঘটে অর্থাৎ ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যায় সেইসব স্থান সমূহকে ওজন গহ্বর বলে।
ওজোন স্তরে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব 200 DU এর নীচে নেমে গেলে ওজোন গহবর সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়। বিজ্ঞানী J.C.Farmen 1985 সালে প্রথম আন্টার্টিকায় ওজোন গহ্বর আবিষ্কার করেন।
জীবমণ্ডলের ওপর ওজোন স্তর ক্ষয়ের প্রভাব:
মানুষের উপর প্রভাব:
- মানুষের ত্বকের বহিরাংশ অতিবেগুনী রশ্মি দ্বারা দ্বগ্ধ হয় একে সান বার্ন বলে। এর ফলে ত্বকে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। U.S.A এর বেশিরভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।
- চোখের লেন্স ও কর্নিয়া দ্বারা UV Ray শোষণের ফলে অল্প বয়সে চোখে ছানি পড়ে।
- মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
- লিউকোমিয়া ও স্তন ক্যান্সারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় ও বন্ধ্যাত্ব বৃদ্ধি পায়।
Read- গম উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
অন্যান্য প্রাণীদের উপর প্রভাব:
- জলজ বাস্তুতন্ত্রের মুখ্য উপাদান ফাইটোপ্লাংটন যথেষ্ট হারে কমে যায়। জলজ বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হয়।
- UV Ray দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পরিবেশে প্রাণীদের বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার ব্যাহত হয়।
- উভচর প্রাণীর সংখ্যা কমতে থাকে।
- পশুপাখিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
উদ্ভিদের উপর প্রভাব:
- উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
- সংবহনতন্ত্রের কার্যকারিতা কমে যায়।
- গাছের পাতা, ফল ও বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
জলবায়ুর উপর প্রভাব:
- নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উষ্ণতার বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়।
- বিশ্বব্যাপী উষ্ণতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- অ্যাসিড বৃষ্টির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে।
- বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা প্রভৃতি আবহিক উপাদানের গতি প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়।
Read- কার্পাস উৎপাদনে অনুকূল ভৌগলিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:18.