জনসংখ্যা সংক্রান্ত কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।

Read- সবুজ বিপ্লব কি? সবুজ বিপ্লব সম্পর্কে বিস্তারিত লেখ।
জনঘনত্ব কাকে বলে?
কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যার বন্টনের তারতম্যের সূচক হল জনঘনত্ব। কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ও মোট জমির পরিমাণ বা ক্ষেত্রমানের অনুপাতকে জনঘনত্ব বলে। অর্থাৎ কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যাকে ওই দেশ বা অঞ্চলের মোট ক্ষেত্রফল দিয়ে ভাগ করলে জনঘনত্ব পাওয়া যায়। জনঘনত্ব সর্বদা পূর্ণমানের প্রকাশ করা হয়। সূত্র অনুসারে –
জনঘনত্ব = দেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা/ ওই দেশ অঞ্চলের মোট ক্ষেত্র মান।
উদাহরণ – ২০১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা ছিল 121 কোটি 1 লক্ষ 93 হাজার 422 জন এবং ভারতের ক্ষেত্র মান 31 লক্ষ 66 হাজার 414 বর্গ কিলোমিটার।
সুতরাং, ভারতের জনঘনত্ব = 121,01,93,422 জন / 31,66,414 বর্গ কিমি = 382 জন/ বর্গ কিমি।
নিশ্চল জনসংখ্যা বা শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলতে কী বোঝো?
যে অবস্থায় কোনো দেশে দীর্ঘদিন ধরে জন্মহার, মৃত্যুহারের সংখ্যা সমান হয়। ফলে জনসংখ্যা বাড়েও না, কমেও না, একই রকম থাকে তখন তাকে জনসংখ্যার শূন্য বৃদ্ধি বা নিশ্চয় জনসংখ্যা বলে।
কারণ:
জন্মহার নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি, জীবনযাত্রার মানের উন্নতি।
ফলাফল:
দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নত হয়।
দেশ:
জার্মানি, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি।
Read- জেট বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে? মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক লেখ।
কাম্য জনসংখ্যা কী?
কোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বাধিক যত সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রা মানের চরমতম স্বাচ্ছন্দ বজায় রাখা যায় সেই সংখ্যাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে।
জিমারম্যান এর মতে – “আদর্শ মানুষ-জমি অনুপাতই হল কাম্য জনসংখ্যা।”
বৈশিষ্ট্য:
- জনসংখ্যার পরিমাণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আদর্শ।
- এই অবস্থায় দেশের মাথাপিছু আয় সর্বাধিক।
- মাথাপিছু জমির অনুপাত আদর্শ হয়।
- দেশের সম্ভাব্য সম্পদ জনসাধারণের ভোগবিলাসের ব্যবস্থা উপযোগী।
- এই অবস্থায় সম্পদ উৎপাদনে শ্রম শক্তির অভাব হয়না, ফলে সম্পদ উৎপাদন সম্ভব হয়।
- কাম্য জনসংখ্যা একটি সাময়িক অবস্থা অর্থাৎ এটি গতিশীল প্রকৃতির।
অতি জনকীর্ণতা কী?
যখন কোনো দেশের জনসংখ্যা আদর্শ জনসংখ্যা থেকে বেশি হয়, অর্থাৎ মানুষ জমি অনুপাত কাম্য জনসংখ্যার থেকে বেশি হয়। তখন তাকে অতি জনকীর্ণতা বা উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- শ্রমশক্তি উদ্বৃত্ত হওয়ায় ছদ্ম বেকারত্বের সৃষ্টি হয়।
- কার্যকরী জমির উপর চাপ বাড়ে, ফলে মৃত্তিকা অবক্ষয়ের সম্ভাবনা থাকে।
- শিক্ষার সুযোগ কমে যায়, ফলে প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক দূষণ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
- মাথাপিছু আয় কমে যায় ফলে জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হয়।
- দারিদ্রতা, অসন্তোষ, অশিক্ষা, অপরাধ প্রবণতা, বাসস্থানের অভাব, জনকীর্ণতার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
যেমন – ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার।
জনস্বল্পতা কী?
কোন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কম হলে তাকে জনস্বল্পতা বা অপ্রতুল জনসংখ্যা বলে। অর্থাৎ মানুষ জমি অনুপাত কাম্য জনসংখ্যা অপেক্ষা কম হলে তাকে জনস্বল্পতা বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য:
- প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কম হয়।
- শ্রম শক্তির অভাবে সম্পদ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
- সম্পদ উৎপাদন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি ধীরগতিতে হয়।
- কৃষি ও শিল্পে তেমন উন্নতি লাভ করে না।
যেমন – কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, নরওয়ে ইত্যাদি।
নারী-পুরুষ অনুপাত বলতে কী বোঝো?
দেশের জনসংখ্যার গঠনগত বৈশিষ্ট্য অনুধাবনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ অনুপাত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি 1000 পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যাকে নারী-পুরুষ অনুপাত বলে।
নারী পুরুষ অনুপাত = [ নারীসংখ্যা/পুরুষ সংখ্যা * 1000 ]
ভারতের নারী সংখ্যা প্রতি 1000 পুরুষে 944 জন (সেন্সাস 2011)। উন্নত দেশগুলিতে নারী পুরুষের সংখ্যার মধ্যে কোন ব্যবধান থাকে না। মূলত নারীদের সংখ্যা পুরুষের সংখ্যা থেকে বেশি।
জনসংখ্যার অভিক্ষেপ কাকে বলে?
পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যাগত গঠন, জন্মহার, মৃত্যুহার বা পরিব্রাজন প্রভৃতির উপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ জনসংখ্যা সম্পর্কে যখন ধারণা করা হয়, তখন তাকে জনসংখ্যা অভিক্ষেপ (Population Projection) বলে।
যেমন – পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় 700 কোটি, আগামী 2025 সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে 750 কোটি।
গুরুত্ব:
- ভবিষ্যতে জনসংখ্যা কতটা বাড়বে বা কমবে তা ধারণা করা যায়।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সাহায্য করে।
- মাথাপিছু জমির পরিমাণ কি রকম হবে সে সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
মানব উন্নয়নের সূচক বলতে কি বোঝো?
মানব উন্নয়নের প্রধান চারটি সূচক হল –
- জন্মকালে শিশুর সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল।
- শিশুর সাক্ষরতার হার।
- মাথাপিছু আয়।
- জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য – শিশুর মৃত্যুহার, জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বয়স লিঙ্গ কাঠামো ইত্যাদি।
জনসংখ্যার পিরামিড কাকে বলে?
নারী পুরুষের বয়সভিত্তিক যে পিরামিডের অনুভূমির অক্ষে নারী-পুরুষের পরিমাণ এবং উলম্ব অক্ষে তাদের বয়স দেখানো হয়, তাকে জনসংখ্যা পিরামিড বলে বা Age-Sex Pyramid বলে।
গুরুত্ব:
- এর সাহায্যে জনসংখ্যার গঠন প্রকাশ ও বিশ্লেষণ করা যায়।
- কোন দেশ জনসংখ্যার বিবর্তনের কোন পর্যায়ে আছে তা জানা যায়।
- কর্মক্ষম জনসংখ্যার পরিমাণ, নির্ভরশীল জনসংখ্যার পরিমাণ এবং জন্মহার ও মৃত্যুহার সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
Read- জনসংখ্যার বিবর্তন তত্ত্ব সম্পর্কে লেখ।