পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের বর্ণনা এই লেখাটিতে বর্ণনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
Read- হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের একদেশী ভবনের কারণগুলি লেখ।

অবস্থান:
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে সমগ্র পুরুলিয়া জেলা এবং সংলগ্ন পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া জেলার পশ্চিমাংশ নিয়ে এই মালভূমি অঞ্চলটি গঠিত। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশে অবস্থিত বলে একে ‘পশ্চিমের মালভূমি’ বলা হয়।
গঠন:
ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুসারে ইহা গ্রানাইট ও নিস জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত। এটি প্রাচীন গন্ডোয়ানা মালভূমির ছোটনাগপুরের অংশ। বিভিন্ন যুগে প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়ের ফলে বর্তমানে ঢেউ খেলানো উঁচু নীচু তরঙ্গায়িত মালভূমি বা সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে। মালভূমি অঞ্চলের গড় উচ্চতা 100 মিটারের বেশি।
ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ:
ভূ-তত্ত্ব, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা ও অন্যান্য ভূ-গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এই অঞ্চলকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –
1. অযোধ্যা মালভূমি অঞ্চল:
পুরুলিয়া জেলার সুবর্ণরেখা ও কংসাবতী নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অযোধ্যা মালভূমি অবস্থিত। পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তার 21 কিলোমিটার এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তার প্রায় 10 কিলোমিটার। এই অঞ্চলে অনেকগুলি গোলাকার খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড়ও দেখা যায় যাকে মোনাডনক বলে। এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়গুলিকে স্থানীয় ভাষায় ডংরী বলে। পশ্চিমের এই মালভূমিতে অযোধ্যা পাহাড়ের গোর্গাবুরু (677 মি) হল পশ্চিমবঙ্গের মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এখানকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পাহাড়গুলি হল – বাগমুন্ডি(670 মি), পাঞ্চেত(643 মি), ভান্ডারী, গুর্মা প্রভৃতি।
পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ক্রমশ ঢালু হওয়ায় এই অঞ্চলে প্রবাহিত পাহাড়ি নদী অনেক জলপ্রপাত সৃষ্টি করেছে। অযোধ্যা পাহাড়ের ব্রাহ্মণী নদীর ব্রাহ্মণী জলপ্রপাত (61 m), এছাড়া টুর্গা জলপ্রপাত ইত্যাদি।
Read- পশ্চিমবঙ্গের পাটশিল্পের সমস্যা আলোচনা করো।
2. পুরুলিয়ার উচ্চভূমি:
পুরুলিয়া উচ্চভূমির পশ্চিমে সুবর্ণরেখা নদী এবং উত্তর দিকে দামোদরের উপনদী গরি পর্যন্ত বিস্তৃত। ত্রিভুজাকৃতি পুরুলিয়া জেলার একেবারে দক্ষিণাংশে এবড়ো খেবড়ো ভূমিভাগকে স্থানীয় ভাষায় বরাভূমি বলে। এখানে বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন পাহাড় দেখা যায়, যেমন – বেলপাহাড়ি, ঠাকুরান, লাকাই, সিনি।
অযোধ্যা মালভূমির পূর্বাংশ পুরুলিয়া উচ্চভূমি নামে পরিচিত। এখানকার গড় উচ্চতা 300 মিটারের কাছাকাছি। এখানকার প্রধান পাহাড় গুলি হল – ভান্ডারী, জয়চন্ডী, বেড়ো পাহাড়, ধলাই চণ্ডী।
পশ্চিমে মালভূমি অঞ্চলের উত্তর-পূর্ব ভাগ ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে পূর্বদিকে সমতল ভূমিতে মিশেছে। এখানকার বীরভূম জেলার মামা-ভাগ্নে ও মথুরখালি, বাঁকুড়া জেলার বিহারীনাথ (452 মি), শুশুনিয়া (440 মি) প্রভৃতি পাহাড় দেখা যায়।
নদনদী:
a. দামোদর নদ(592 কিমি):
পশ্চিমের রাজধানী অঞ্চলের ওপর দিয়ে যেসব নদনদী প্রবাহিত হয়েছে তার মধ্যে দামোদর নদ প্রধান।ঝাড়খণ্ডের পালানো জেলার খামারপাথ পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে দামোদর মালভূমি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দিতে পড়েছে। মুণ্ডেশ্বরী নামে দামোদরের একটি শাখা রূপনারায়ণের মিলিত হয়েছে। পূর্বে এই নদীতে বন্যা হতে বলে একে ‘বাংলার দুঃখ’ বা ‘দুঃখের নদ’ বলা হয়।
b. কংসাবতী বা কাঁসাই(336 কিমি):
অযোধ্যা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কংসাবতী পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রবেশ করে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। এর একটি শাখা রূপনারায়ণের সঙ্গে মিলিত হয়েছে ও অপর শাখাটি কেলেঘাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে হলদি নাম নিয়ে হুগলি নদীতে পড়েছে। এর একটি উপনদী হল কুমারী।
c. রূপনারায়ণ(138 কিমি):
মেদিনীপুরের ঘাটালের কাছে দারকেশ্বর ও শিলাবতু বা শিলাই নদী মিলিত হয়ে রূপনারায়ণ সৃষ্টি হয়েছে। এই নদী দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে গেঁওখালির কাছে হুগলি নদীতে মিশেছে।
d. সুবর্ণরেখা(477 কিমি):
ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়ে এই নদী পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের খুব অল্প স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
এছাড়াও এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে আরো বহু নদনদী বয়ে গেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – ময়ূরাক্ষী(241 কিমি), অজয়(276 কিমি), দারোকা, ব্রাহ্মণী, বক্রেশ্বর, কোপাই, দারকেশ্বর প্রভৃতি।
Read- যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রক্রিয়াগুলি আলোচনা করো।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:19.