সামুদ্রিক সঞ্চয় বা অবক্ষেপ বলতে কী বোঝো, অবক্ষেপের কারণ, শ্রেণীবিভাগ এবং বৈশিষ্ট্য প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
সামুদ্রিক সঞ্চয় বা সামুদ্রিক অবক্ষেপ বলতে কী বোঝো?
বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি বিশেষত নদীবাহিত পলল, সমুদ্রের উদ্ভিদ, প্রাণীর দেহাবশেষ প্রভৃতি সমুদ্রগর্ভে সঞ্চয় হয়, সমুদ্র তলদেশে এই সঞ্চয়কে সামুদ্রিক সঞ্চয় বলে।
বিখ্যাত সামুদ্রিক বিঞ্জানী F.J.Monkhouse এর মতে সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত যাবতীয় পদার্থকে একত্রে সামুদ্রিক সঞ্চয় বলে।
সামুদ্রিক অবক্ষেপের কারণ লেখ।
দীর্ঘ প্রায় দু শতক ধরে গবেষণা ও অনুসন্ধানের পরে বিজ্ঞানের জনস সারি, সামুদ্রিক অবক্ষেপের নিম্নলিখিত কারণ উল্লেখ করেছেন –
- ভূত্বকের ক্ষয়সাধন ও ক্ষয়জাত পদার্থের সমুদ্র গর্ভে অবক্ষেপ।
- নিমজ্জিত আগ্নেয়গিরি নিক্ষিপ্ত পদার্থের সঞ্চয়।
- সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহবশেষ সঞ্চয়।
- হিমশৈল বাহিত পদার্থের সঞ্চয়।
- বায়ুবাহিত পদার্থের সঞ্চয়।
- বায়ুমণ্ডল থেকে আগত পদার্থের সঞ্চয়।
সামুদ্রিক অবক্ষেপ এর শ্রেণীবিভাগ কর।
সামুদ্রিক অবক্ষেপকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
উৎপত্তি অনুসারে শ্রেণীবিভাগ:
- স্থলভাগ থেকে ধুয়ে আসা পদার্থের উপকূল সঞ্চয় বা স্থল বিধৌত অবক্ষেপ। যেমন – a. নুড়ি, কাকড়, b. বালুকণা, c. পঙ্কজ ও কর্দম।
- অগ্ন্যুৎপাত জনিত অবক্ষেপ। যেমন – a. অন্তঃবায়বীয় অবক্ষেপ, b. অন্তঃসাগরীয় অবক্ষেপ।
- জৈব অবক্ষেপ। যেমন – a. নেরিটিক, b. পিলেজিক।
- অজৈব পদার্থের অবক্ষেপ। যেমন – a. ডলোমাইট, b. ম্যাঙ্গানিজ, c. অক্সাইড, d. ফসফেট, e. ব্যারাইট, f. সিলিকা, g. লোহা, h. ফেল্ডসপার।
- রাসায়নিক অবক্ষেপ। যেমন – a. গ্লুকোনাইট, b. ফসফরাইট, c. ফিলিপসাইট, d. ক্লেমিনারেলস।
- অপার্থিব অবক্ষেপ।
অবস্থান অনুযায়ী সামুদ্রিক অবক্ষেপ:
অবস্থান অনুযায়ী সামুদ্রিক অবক্ষেপ দুই প্রকার। যথা –
মহীসোপান ও মহীঢালের সঞ্চয় বা সিন্ধুমল বা সিন্ধু কর্দ:
মহিসোপান ও মহীঢালের সঞ্চয়কে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
- তটদেশীয় সঞ্চয়।
- অগভীর মহিসোপান অঞ্চলে সঞ্চয়।
- গভীর মহীসোপান অঞ্চলে সঞ্চয়।
গভীর সমুদ্রে সঞ্চয়:
- চুন জাতীয় সিন্ধুমল। যেমন – a. টেরোপড কাঁদা, b. গ্লোবিজারিনা কাঁদা।
- সিলিকা/ বালুকা জাতীয় সিন্ধুমল। যেমন – a. রেডিও ল্যারিয়ান কাঁদা, b. ডায়াটম কাঁদা।
সামুদ্রিক অবক্ষেপের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।
a. ক্ষয়প্রাপ্ত নুড়ি, কাকড়, শিলা:
সামুদ্রিক অবক্ষেপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এখানে ক্ষয়প্রাপ্ত নুড়ি, বালি, শিলা, মৃত্তিকা প্রভৃতি জমা হয়।
b. মাধ্যম:
সামুদ্রিক অবক্ষেপের ফলে বৃষ্টির জল ও নদী জলের সাথে ক্ষয়ীভূত পদার্থ সমুদ্রে জমা হয়।
c. বিভিন্ন খনিজ:
সামুদ্রিক অবক্ষেপে নানা ধরনের খনিজ দ্রব্য দেখা যায়। যেমন – ডলোমাইট, লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি।
d. প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল:
এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল পাওয়া যায়।
e. গলিত পদার্থ:
সামুদ্রিক অপক্ষেপে অগ্ন্যুৎপাতের বিভিন্ন গলিত পদার্থ থাকে।
f. জীবাশ্ম:
সামুদ্রিক অবক্ষেপে জীবাশ্ম দেখা যায়।
g. অন্যান্য:
এছাড়া মরুভূমি থেকে উড়ে আসা বালি, গভীর সমুদ্র খাতের চূর্ণ-বিচূর্ণ শিলা, উল্কাখণ্ড প্রভৃতি সমুদ্রের নীচে জমা হয়।