মানচিত্র সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
মানচিত্র কাকে বলে?
পৃথিবীতে কোন স্থানের কিংবা কোন বস্তুসমূহের অবস্থানগত সম্পর্কের দৃষ্টিগ্ৰাহ্য রূপ হল মানচিত্র। একটি নির্দিষ্ট স্কেলে যে কোনো সমতল কাগজের ওপর অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা দ্বারা পৃথিবীর কোন অংশকে সঠিক দিক অনুসারে উপস্থাপন করলে, তাকে মানচিত্র বলে। এই মানচিত্র একমাত্রিক, দ্বিমাত্রিক, ত্রিমাত্রিক বিভিন্ন রূপ হয়।
মানচিত্রের শ্রেণীবিভাগ লেখ।
মানচিত্র কে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- স্কেল অনুসারে
- বিষয় অনুসারে
- তথ্য অনুসারে
a. স্কেল অনুসারে:
স্কেল অনুসারে মানচিত্রকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র, যেমন – মৌজা মানচিত্র, ভূ-সংস্থান মানচিত্র, নীল নকশা, এলাকা মানচিত্র, থানা মানচিত্র।
- ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র, যেমন – অ্যাটলাস মানচিত্র, দেয়াল মানচিত্র, আন্তর্জাতিক মানচিত্র।
b. বিষয় অনুসারে:
বিষয় অনুসারে মানচিত্রকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- প্রাকৃতিক মানচিত্র, যেমন – ভূ প্রাকৃতিক মানচিত্র, মৃত্তিকা মানচিত্র, জলবায়ু মানচিত্র, ভূতাত্বিক মানচিত্র, আবহ মানচিত্র ইত্যাদি।
- সংস্কৃতিক মানচিত্র, যেমন – সামাজিক মানচিত্র, অর্থনৈতিক মানচিত্র, রাজনৈতিক মানচিত্র, ঐতিহাসিক মানচিত্র, ভূমি ব্যবহার মানচিত্র, সামরিক মানচিত্র, বন্টন মানচিত্র।
c. তথ্য অনুসারে:
তথ্য অনুসারে মানচিত্র দুই প্রকার। যথা –
- গুণগত মানচিত্র
- পরিমাণগত মানচিত্র।
ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র কাকে বলে?
যে মানচিত্রে পৃথিবীপৃষ্ঠের বিবরণ বিশদভাবে দেওয়া সম্ভব নয় এবং বৃহৎ অঞ্চলকে আনুপাতিক হারে অনেক ছোট করে দেখানো হয় তাকে ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র বলে। এই শ্রেণীর মানচিত্র স্কেল 1:1000000 RF থেকে শুরু। মিলিয়ান শীটের টোপো মানচিত্র, দেওয়াল মানচিত্র, অ্যাটলাস মানচিত্র, গ্লোব প্রভৃতি ক্ষুদ্র স্কেল মানচিত্রের উদাহরণ।
বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র কাকে বলে?
ভূপৃষ্ঠের কম পরিসর স্থানকে আনুপাতিক হারে যে মানচিত্রে অনেক বড়ো করে দেখানো হয় এবং যে মানচিত্র থেকে ভূপৃষ্ঠের অতি বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় তাকে বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র বলে। সাধারণত ভূমির ব্যবহার দেখাতে এই ধরনের মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়। মৌজা মানচিত্র বা ক্যাডাস্টাল ম্যাপ, জরিপ করা কোনো নকশা বা মানচিত্রের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। সাধারণত 1:50000 RF এর কম স্কেলে এই মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়।
অ্যাটলাস কাকে বলে?
পৃথিবী এবং বিভিন্ন দেশ-বিদেশের বা রাজ্যের ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র সম্বলিত বইকে অ্যাটলাস বলে।
মৌজা মানচিত্র বা ক্যাডাস্টাল ম্যাপ কাকে বলে?
ফরাসি শব্দ ‘ক্যাডাস্ট্রা’ থেকে ‘ক্যাডাস্ট্রাল’ কথাটি এসেছে। ‘ক্যাডাস্ট্রা’র অর্থ হল কোনো একটি অঞ্চলের সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ।
জমির খাজনা বা রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রধানত ভূমির দাগ নম্বর অনুযায়ী যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে মৌজা বা ক্যাডাস্ট্রাল মানচিত্র বলে। এটি সর্বনিম্ন স্তরের প্রশাসনিক এলাকা। সাধারণত একটি মৌজা একটি গ্রাম অথবা একাধিক গ্রামের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হতে পারে। আবার একটি গ্রাম পাশাপাশি একাধিক মৌজার অন্তর্গত হতে পারে। মৌজা মানচিত্র সাধারনত 16″ তে 1 মাইল, এই স্কেলে বা অনুরূপ বৃহৎ স্কেলে আঁকা হয়।
বৈশিষ্ট্য:
- মৌজা মানচিত্রে দেশের সমস্ত জমির আইনি নথিভুক্তকরণ করা হয় যাতে সরকারের রাজস্ব, খাজনা আদায়ে সুবিধা হয়।
- এই মানচিত্র বড় স্কেলে অঙ্কন করা হয় বলে যে কোনো জমির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিমাপ করা সম্ভব হয়।
- শহরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ির নকশা এই মানচিত্রে দেখানো হয়।
- গ্রাম বা শহরের ভূমির ব্যবহার মানচিত্র প্রস্তুতিতে মৌজা মানচিত্র খুবই উপযোগী।
টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র বা ভূবৈচিত্র্য সূচক মানচিত্র কাকে বলে?
গ্রিক শব্দ ‘Topos’ এর অর্থ ‘স্থান’ এবং ‘Grapho’ এর অর্থ ‘আঁকা’। যে মানচিত্রে কোন একটি স্থানের সঠিক অবস্থান, আয়তন এবং প্রাকৃতিক ও সংস্কৃতিক উপাদান গুলি বিভিন্ন প্রচলিত প্রতীক চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হয়, তাকে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা টোপোগ্রাফিক্যাল মানচিত্র বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- এই মানচিত্র কতগুলি সুনির্দিষ্ট স্কেল অনুসারে আঁকা হয়। যেমন – 1:50000, 1:250000 ইত্যাদি।
- এই মানচিত্রের নির্দিষ্ট অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত বিস্তার থাকে।
- প্রচলিত নির্দিষ্ট প্রতীক চিহ্ন ও রঙের সাহায্যে এই মানচিত্রের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি চিত্রাহিত করা হয়।
- প্রত্যেকটি টোপোমানচিত্রের একটি নির্দিষ্ট সূচক সংখ্যা থাকে। যেমন – 72B/4।
- এই মানচিত্রে ভূপ্রকৃতি, নদ-নদী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনবসতি প্রভৃতি সাংস্কৃতিক উপাদান উপস্থাপন করা হয়।
- ভারতবর্ষে Survey of India এই মানচিত্র প্রস্তুত করে ও প্রকাশ করে।
মানচিত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহার লেখ।
প্রাচীনকালে সমুদ্র যাত্রা, নতুন দেশ আবিষ্কার থেকে শুরু করে বর্তমানে কোনো দেশের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক তথ্য বিশ্লেষণ, দেশের উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ সব কাজেই মানচিত্র সমান গুরুত্বপূর্ণ।
মানচিত্রের ব্যবহার:
- মানচিত্র পাঠের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবস্থান সম্পর্কে বিশেষভাবে জানা সম্ভব হয়। যেমন – ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কয়েকটি বিশেষ স্থানের অবস্থান সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
- প্রতিটি মানচিত্রই নির্দিষ্ট একটি স্কেল অনুযায়ী অঙ্কন করা হয়। কাজেই এই নির্দিষ্ট মানচিত্রে অবস্থানরত যে কোন স্থানের রৈখিক দূরত্ব থেকে ভূমি ভাগের দূরত্ব নির্ণয় করা সম্ভবপর হয়।
- মানচিত্র পাঠের দ্বারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, নদনদী প্রভৃতির বন্টন সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
- মানচিত্র গ্লোবের তুলনায় যথেষ্ট হালকা ও বহনযোগ্য হওয়ায় যে কোনো ভৌগোলিক ক্ষেত্রে জরিপের সময় এটি সহজেই ব্যবহার করা হয়।
- মানচিত্র পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা ও জ্ঞানের পরিধি অনেক বৃদ্ধি পায়।
- পর্যটন শিল্পে এবং পর্যটকদের কাছে মানচিত্র যথেষ্ট ব্যবহার যোগ্য।
- দেশের প্রতিরক্ষা, প্রশাসনিক এবং সামরিক প্রয়োজনে মানচিত্র ব্যবহার করা হয়।