জনবসতি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
পৌরমহাপুঞ্জ বা মহানগরপুঞ্জ কাকে বলে?
কয়েকটি পৌরপুঞ্জ বা মহানগর একত্রে যুক্ত হয়ে পৌরমহাপুঞ্জ বা মহানগরপুঞ্জের সৃষ্টি করে। গটম্যান ‘পৌরবসতি’ কথাটি ভূগোলে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।
সংঞ্জা:
অনেকগুলি শহর ও নগরের সমন্বয়ে যে অতি বড়মাপের নগরবসতির উদ্ভব হয়, তাকে মেগোলাপলিস বা পৌর মহাপুঞ্জ বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- ব্যাপক ও বিস্তৃত বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্ম।
- উৎপাদিত দ্রব্যের বিরাট বাজার।
- সাংস্কৃতিক ক্রিয়া-কলাপের দিক থেকে শীর্ষস্থান অধিকারী।
- দেশের প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় প্রকাশ কেন্দ্র।
- কয়েকশত বর্গ কিলোমিটার আয়তন জুড়ে বিস্তৃত হয়।
উদাহরণ – জাপানের টোকিও, USA এর নিউইয়র্ক প্রভৃতি, এছাড়া ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার থেকে লিডস পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলগুলিতে মেগালোপলিসের বিস্তার ঘটেছে।
মহানগর কাকে বলে?
গ্রিক শব্দ ‘Metropolis’ কথার অর্থ মহানগর বা মূলনগর। যেসব নগরের জনসংখ্যা 10 লক্ষ বা তার বেশি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, আমোদ প্রমোদ, অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত থাকে তাকে মহানগর বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- এটি আন্তর্জাতিক চরিত্র সম্পন্ন হবে।
- মহানগর নানা ধরনের আঞ্চলিক শিল্প ও বড় মাপের পাইকারি ব্যবসার একটি স্বাধীন কেন্দ্র।
- এটি হল সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র।
উদাহরণ – কলকাতা মেট্রোপলিটন, দিল্লি, মুম্বাই।
নবনগর বা নিউটাউন কাকে বলে?
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ব্রিটেনে সালটিয়ার এইরকম উপনগরীর ধারণা দিয়েছিলেন।
সংঞ্জা:
বৃহৎ বৃহৎ নগরের উপর বিভিন্ন চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে প্রধান নগরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পরিকল্পনার মাধ্যমে যে শহর তৈরি করা হয় তাকে নতুন শহর বা নিউটাউন বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- এখানে জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক উন্নতির মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকে।
- এইসব নতুন নগরীতে শিল্প ও বসতির জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা থাকে।
উদাহরণ – কলকাতা মহানগরের ওপর চাপ কমানোর জন্য নিকটবর্তী রাজারহাট অঞ্চলে নিউটাউন নির্মাণ করা হয়।
ক্ষুদ্র গ্ৰাম বা হ্যামলেট কাকে বলে?
গ্রামের প্রধান অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন এক একটি পাড়া, প্রধান লোকালয় থেকে অনেক দূরে অবস্থিত গ্রামগুলিকে ক্ষুদ্র গ্রাম বা হ্যামলেট বলে।
জার্মান ভূগোলবিদ ক্রিস্টলার তার কেন্দ্রীয় স্থান তত্ত্বে ‘রোডসাইড হ্যামলেট’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন। এই প্রকার গ্রামে 4-5 টি থেকে 20-25 টি বাড়ি থাকে। গ্ৰামে তথাকথিত অস্পৃশ্য শ্রেণির লোকেরা বাস করে। এগুলি প্রধান বসতি থেকে অনেক দূরে পাড়ার আকারে গড়ে ওঠে।
উদাহরণ – আরাকু ভ্যালির কোট্টাভিলমা পদ্মপুরম।
সেন্সাস গ্ৰাম কাকে বলে?
প্রতিটি আদমশুমারির সময় প্রশাসনিক একে সর্বোচ্চ কেন্দ্র (রাজধানী শহর) থেকে ক্ষুদ্রতম একক (গ্ৰাম) সংযোজন করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রশাসনিক এককের ক্ষুদ্রতম অংশের নাম মৌজা।
বৈশিষ্ট্য:
- এগুলির একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে।
- প্রতিটির একটি করে মানচিত্র বা cadastal map গঠন করা হয়।
- প্রতিটি মৌজার একটি করে ক্রমিক সংখ্যা থাকে, যার সাহায্যে অপরটিকে চিহ্নিত করা সহজ।
- একটি সেন্সাস গ্ৰাম বা মৌজায় এক বা একাধিক ক্ষুদ্র গ্ৰাম বা পাড়া থাকতে পারে।
যেমন – গাজনা, জে.এল নং – 90
ভৌতিক নগরী বা Necropolis কাকে বলে?
লুই মামফোর্ড এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী নগর গঠনের অন্তিম পর্যায়ে যেখানে নগর বিবর্তনের চরমতা শেষ হয়ে ধ্বংসের প্রাথমিক স্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এমন নগরবসতিকে ভৌতিক নগরী বা Necropolis বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- এটি হল ভুতুড়ে নগরী।
- মহামারি, যুদ্ধ-বিগ্ৰহ ইত্যাদি অস্থিরতা নগর ধ্বংসের এই পর্যায়ে সৃষ্টি হয়।
- দুর্বল পৌরপ্রশাসন এবং নগর সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।
- প্রাচীন নগরীর ন্যায় এই প্রকার নগরীর নাম্বার থাকে।
যেমন – মিশরের গিজা, হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, ব্যাবিলন ইত্যাদি।
পৌরপুঞ্জ বা Conurbation কাকে বলে?
‘পৌরপুঞ্জ’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন প্যাট্রিক গেডেস ১৯১৫ সাল (191৫ সাল)। ইহা দুটি শব্দ continuous এবং urban area এর সংমিশ্রনে গঠিত। তাঁর মত অনুযায়ী প্রশাসনিক দিক থেকে দুটি ভিন্ন নগরী হলেও পরস্পরের মধ্যে নৈকট্যতা রয়েছে এমন একগুচ্ছ শহর বা নগর এলাকাকে পৌরপুঞ্জ বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- প্রশাসনিক দিক থেকে নগর এলাকাগুলি পৃথক।
- অর্থনৈতিক দিক থেকে এরা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।
- পৌরপুঞ্জ একপ্রকারের City region বা urban aggregates।
- পৌরপুঞ্জ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পুষ্টিভবন বা পিণ্ডভবন বা একত্রীভবন পদ্ধতি কার্যকর।
- পৌরপুঞ্জ এককেন্দ্রিক বা বহুকেন্দ্রিক হয়ে থাকে।
যেমন – বাংলাদেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ভারতের কলকাতা, হাওড়া পৌরপুঞ্জের উদাহরণ।
পৌরপিন্ড কাকে বলে?
1971 সালের আদমশুমারিতে প্রথম ‘পৌরপিন্ড’ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এককথায় শহর বা নগরের সঙ্গে যুক্ত বা একত্রিত কয়েকটি ছোটো ছোটো পৌর এলাকাকে পৌরপিন্ড বলা হয়। সাধারণত কোনো অঞ্চলের দুটি পরস্পরের কাছাকাছি থাকা শহর বা নগর একই হারে প্রসারিত হতে থাকলে একসময় পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পৌরপিন্ডের সৃষ্টি করে। যেখানে দুটি শহরের মধ্যে সীমানা থাকে না বললেই চলে।
যেমন – লন্ডন, বৃহত্তর কলকাতা ইত্যাদি।
টাইরানোপলিস কাকে বলে?
যখন প্রায় গোটা দেশ জুড়ে নবায়ন ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে টায়রানোপলিস বলে। অধ্যাপক প্যাট্রিক গেডেস সর্ব প্রথম কৃষিজনিত ও সামাজিক উপাদানের ভিত্তিতে নগরের শ্রেণীবিন্যাস করেন। পরবর্তীকালে লুই মামফোর্ড এর পরিবর্তন ঘটানো।
বৈশিষ্ট্য:
- চূড়ান্ত পর্যায়ের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়।
- জনগণের অর্থনৈতিক গঠন নিয়ন্ত্রণের জন্য এখানে রাজনীতিকে কাজে লাগানো হয়।
- White collar crime এর প্রাধান্য দেখা যায়।
- সামাজিক, রাজনৈতিক জটিলতা বেশি।
যেমন – USA, ব্রিটেন, জার্মানিতে এরূপ নগরের পরিগ্ৰহ দেখা যাচ্ছে।