গ্রামীণ বসতি কাকে বলে এবং গ্রামীণ বসতির শ্রেণীবিভাগ এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

গ্রামীণ বসতি:
ভারতের আদমশুমারি অনুযায়ী গ্রামীণ বসতি হল, সেই স্থানসমূহ যেখানে 3/4 ভাগ বা তার বেশি জনসংখ্যা প্রাথমিক কার্যকলাপে নিযুক্ত এবং জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিমিতে 386 এর কম।
বৈশিষ্ট্য:
- গ্রামীণ বসতি বিচ্ছিন্ন বা ছড়ানো বা গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে দেখা যায়।
- গ্রামীণ অধিবাসীরা অধিকাংশ প্রাথমিক কার্যকলাপে যুক্ত থাকে।
- ক্রিস্টলারের মতে একাধিক পাড়া নিয়ে একটি গ্রাম গড়ে উঠতে পারে।
- গ্রামীন এলাকায় পথঘাটের ঘনত্ব কম থাকে।
- প্রশাসনিক দিক থেকে গ্রামীণ বসতিকে সর্বনিম্ন একক ধরা হয়।
- পুকুর, শস্যক্ষেত্র, উন্মুক্ত প্রান্তর, তৃণক্ষেত্র সবুজের প্রাচুর্যতা গ্রামীণ বসতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
গ্রামীণ বসতির শ্রেণীবিভাগ:
বিভিন্ন স্থানে ভৌগোলিক পরিবেশের পার্থক্যের জন্য গ্রামীণ বসতিগুলিকে বিভিন্নভাবে গড়ে উঠতে দেখা যায়। অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ বসতিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
- সঙ্ঘবদ্ধ বসতি।
- বিক্ষিপ্ত বসতি।
- রৈখিক বা দণ্ডাকৃতি বসতি।
a. সঙ্ঘবদ্ধ বসতি:
যখন কোনো স্থানে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার জন্য কাছাকাছি একসঙ্গে অনেক বসতি গড়ে ওঠে তখন তাকে সঙ্ঘবদ্ধ বা গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি বলে।
কয়েকটি পরিবারের অনেকগুলি বাসগৃহ একসঙ্গে সমবেত হয়ে এরূপ গোষ্ঠীবদ্ধ বসাতে গড়ে ওঠে। এই ধরনের বসতিতে একটি গৃহ থেকে অন্য গৃহের দূরত্ব কম হয়। ফলে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিশেষ সামাজিক-অর্থনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করে। স্থানটিতে যদি রাস্তাঘাট উন্নত থাকে তবে বসতিতে ধীরে ধীরে শহর বা নগরে পরিণত হতে পারে।

b. বিক্ষিপ্ত বা বিচ্ছিন্ন বসতি:
যখন কোন স্থানে প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক প্রভৃতি কারনে একটি পরিবার অন্যান্য পরিবার থেকে বহুদূরে অবস্থান করে, তখন তাকে বিক্ষিপ্ত বা বিচ্ছিন্ন জনবসতি বলে। এদের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা থাকে। এদের মধ্যে জোরালো প্রতিবেশীত্বের বন্ধন থাকে। যেমন – পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলার সীমান্ত অঞ্চলে এই বিক্ষিপ্ত বসতি লক্ষ্য করা যায়।

c. রৈখিক ও দণ্ডাকৃতি বসতি:
বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সামাজিক কারণের পরিপ্রেক্ষিতে কোন স্থানে যখন গৃহগুলি সরলরেখায় গড়ে ওঠে, তখন সেই বসতিকে রৈখিক বসতি বলে। নদী, রেলপথ, সড়ক পথ প্রভৃতির দুধারে এরূপ বসতির বৃদ্ধি ঘটে থাকে। দমদম ক্যান্টনমেন্ট থেকে বনগাঁ পর্যন্ত রেল লাইনের দুধারে এরূপ বসতি দেখা যায়।
এরূপ বসতি একই সরলরেখা বরাবর বিন্যস্ত। একসঙ্গে অনেক বসতি বা ঝুপড়ি সারিবদ্ধ ভাবে অবস্থান করে। প্রধানত সরকারি সম্পত্তি বা খাস জমির উপর এরূপ বসতি গড়ে ওঠে। অধিবাসীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্বাস্তু হয়। তারা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অনুন্নত হয়।

This post was updated on 2023-02-22 17:56:35.