উপগ্ৰহ চিত্র কাকে বলে? উপগ্ৰহ চিত্রের ব্যবহার এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
.png)
Read- জলসংরক্ষন বলতে কী বোঝ? জলসংরক্ষনের পদ্ধতিগুলি উল্লেখ কর।
উপগ্ৰহ চিত্র:
উপগ্ৰহ চিত্র বা স্যাটেলাইট ইমেজ হল কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে সংগৃহীত আলোকচিত্র। উপগ্রহ থেকে অর্থাৎ আকাশের অনেক উঁচুতে বিভিন্ন উচ্চতায় উপগ্রহ পাঠিয়ে উপগ্রহে রাখা ক্যামেরার সাহায্যে যে সব চিত্র তথ্য সংগ্রহ হয়, তাদের এক একটিকে উপগ্রহ চিত্র এবং একাধিক হলে তাকে উপগ্রহ চিত্রাবলী বলে।
উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার:
দূর সংবেদন প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত উপগ্রহ চিত্র যেহেতু আলাদা আলাদা ভাবে গ্রহণ করে ডিজিটাল তথ্য বিশ্লেষণ করতে সক্ষম তাই উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার ও গুরুত্ব অপরিসীম। নীচে ব্যবহার গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
1. নিখুঁত চিত্র প্রস্তুত:
বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মির প্রতিটি বর্ণালী ডিজিটাল তথ্য রূপে সংগ্রহ করা উপগ্রহ চিত্রের চিত্র সংগ্রহের এলাকা যেমন বেশি হয় তেমনি ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত প্রতিটি উপাদানকে নিখুঁতভাবে দেখানো হয়।
2. ভূমি ব্যবহার বা ভূ-আবরণ মানচিত্র প্রস্তুত:
উপগ্রহ চিত্র যেহেতু সকল প্রকার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বর্ণালী নথিভূক্ত করতে সক্ষম হয়, তাই ভূ-ভাগের যে সকল উপাদান যে যে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বর্ণালী দ্বারা চিহ্নিতকরণ ও বিশ্লেষণ সম্ভব উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে তার সহজেই করা যায়। তাই কোনো অঞ্চলের ভূমি ব্যবহারকারী মানচিত্র প্রস্তুত করা সম্ভব হয়।
3. আবহাওয়ার পূর্বাভাস:
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদান যেমন – জলীয় বাষ্প, মিথেন প্রভৃতি সৌর রশ্মির ভিন্ন ভিন্ন বর্ণালীর তরঙ্গ কে শোষণ ও প্রতিফলিত করে। ফলে দূর সংবেদন প্রক্রিয়ায় এই তথ্য সংগ্রহ করে উপাদান গুলির ঘনত্ব, অবস্থান নির্ণয় করা যায়। ফলে বিভিন্ন প্রকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস যেমন – মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড়, আর্দ্রতার পরিমাণ, উষ্ণতা ইত্যাদির পূর্বাভাস প্রদান নিখুঁত হয়েছে।
4. ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন:
কৃত্রিম উপগ্রহগুলি যেহেতু কোন নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ছবি তোলে তাই অতি সহজেই ছবিগুলিকে বিশ্লেষণ করে সমস্ত স্তরে ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তনকে দেখানো সম্ভব হয়। যেমন – জনবসতির ক্ষেত্রমান বৃদ্ধি, বনভূমির ধ্বংস ইত্যাদি।
5. কৃষিকাজের এলাকা ও শস্যের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ:
ভিন্ন ফসল ভিন্ন মাত্রার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য প্রতিফলিত করে। এমনকি ফসল পাকার আগে ও পাকার পর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য আলাদা আলাদা হয়। এজন্যই আলাদা দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সংগ্রহ করে অতি সহজেই ভূপৃষ্ঠের কোথায় কি ধরনের ফসল কতটা এলাকা জুড়ে উৎপাদন হচ্ছে, ফসলের অবস্থা কি ধরনের ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য আলাদা করা সম্ভব।
6. স্বাভাবিক উদ্ভিদের বন্টন ও গুরুত্ব:
স্বাভাবিক উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য সৌরশক্তিকে পাতায় আবদ্ধ করে রাখে। তাই উদ্ভিদ থেকে আলোকশক্তির প্রতিফলনের হার অত্যন্ত ধীর গতির, কিন্তু অবলোহিত তরঙ্গ রশ্মির প্রতিফলন বেশি।দূর সংবেদন প্রক্রিয়ায় এই অবলোহিত তরঙ্গের নথিভুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে অতি সহজেই স্বাভাবিক উদ্ভিদের বন্টন নির্ধারণ করা যায়।
Read- ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়নশিল্পের একদেশীয় ভবনের কারণগুলি উল্লেখ কর।
7. সম্পদ অনুসন্ধান:
দূর সংবেদন প্রক্রিয়ার দ্বারা আর বিভিন্ন বস্তুর আলাদা আলাদা প্রতিফলন থেকে খুব সহজেই ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন উপাদানের বন্টন আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। তাই ভূপৃষ্ঠের সম্পদ অনুসন্ধানে উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার অপরিসীম।
8. ভূমিরূপের বন্ধুরতা নির্ধারণ:
উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানের উচ্চতা নির্ণয় করে সমোন্নতি রেখা আঁকা সম্ভব।
9. মৃত্তিকার আর্দ্রতা নির্ণয়:
আর্দ্র মৃত্তিকায় আলোক রশ্মির প্রতিফলন শুষ্ক মৃত্তিকা অপেক্ষা কম। এছাড়া আর্দ্রতার বিভিন্নতা অনুযায়ী প্রতিফলনের হারও ভিন্ন ভিন্ন হয়। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে মৃত্তিকার আর্দ্রতা নির্ণয় করা সম্ভব হয় এবং প্রয়োজনে আর্দ্রতা সূচক অনুযায়ী মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়।
This post was updated on 2023-02-22 17:57:12.