বারিমন্ডল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
মগ্নচড়া কি?
মহাসাগরের যে সকল অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল স্রোত মিলিত হয় সেখানে শীতল স্রোতের সাথে ভেসে আসা হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায়।ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা পাথর নুরি বালি প্রভৃতি সমুদ্র বক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জমতে জমতে উঁচু হয়ে যে নিমগ্ন ভূমি ভাগের সৃষ্টি করে তাকে মগ্নচড়া বলে
যেমন – নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের অদূরে গ্র্যান্ড ব্যাংক, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের অদূরে ডগার্স ব্যাংক মগ্নচড়া গুলি মৎস্য ক্ষেত্র হিসেবে বিখ্যাত।
হিমপ্রাচীর কি?
সমুদ্রের বিভিন্ন অংশে উষ্ণতা, লবণতা ও ঘনত্বের অনেক পার্থক্য হয়। এর ফলে সমুদ্রের কোনো কোনো অংশে দুই বিপরীতধর্মী স্রোতের মাঝ বরাবর একটি বিভাজন রেখার সৃষ্টি হয়।
যেমন – উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলে উত্তরমুখী উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের ঘন নীল জল এবং দক্ষিণ মুখী শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রায় সবুজ জলের মাঝ বরাবর এমনই এক বিভাজনরেখা বহুদূর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়। এই বিভাজন রেখাকে হিমপ্রাচীর বলা হয়।
নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে সারা বছর কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে কেন?
সাধারণত যেসব অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন হয় সেখানে উষ্ণ স্রোতের উপর সৃষ্ট প্রচুর পরিমাণ জলীয় বাষ্প শীতল স্রোতের উপর প্রবাহিত শীতল ভাইয়ের সংস্পর্শে এসে জমে যায়, ফলে ওই অঞ্চলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
নিউফাউন্ডল্যান্ডের পাশ দিয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত বয়ে যায়, ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুই ভিন্নধর্মী স্রোতের মিলনে নিউ ফাউন্ডল্যান্ড উপকূল সারা বছর কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে।
শৈবাল সাগর কাকে বলে?
পশ্চিমে উপসাগরীয় স্রোত, উত্তরে উত্তর আটলান্টিক স্রোত, পূর্বে ক্যানারি স্রোত, দক্ষিণে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশাল আয়তন এলাকা জুড়ে একটি জলাবর্ত বা ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েক হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই জলাবর্তের মধ্যাংশ স্রোতবিহীন অর্থাৎ মাঝখানে জলের কোনো দিকেই প্রবাহ থাকে না। ফলে ওই অংশে নানারকম আগাছা বা শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। এই জন্য এই অংশের নাম সারগাসো সমুদ্র বা শৈবাল সমুদ্র।
জোয়ার ভাটা কাকে বলে?
সাগর বা মহাসাগরের জল নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর এক জায়গায় স্ফীত হয় বা ফুলে ওঠে ও অন্য জায়গায় অবনমিত হয় বা নেমে যায়।
জলের এই স্ফীতিকে বলা হয় জোয়ার এবং নেমে যাওয়া বা অবনমনকে বলা হয় ভাটা। চন্দ্রের আকর্ষণ এবং কিছুটা সূর্যের আকর্ষণ ও কিছুটা আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিক বলের প্রভাবে সাগর বা মহাসাগরে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয়।।
মুখ্য জোয়ার কাকে বলে?
ভূপৃষ্ঠে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির কারণ হিসেবে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ এবং পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিক বলের উল্লেখ হলেও প্রকৃতপক্ষে চাঁদের আকর্ষণেই পৃথিবীতে জোয়ার ভাটা হয়। তাই আবর্তন করতে করতে পৃথিবীর যে জায়গা যখন চাঁদের সামনে আসে, সেই জায়গার জল চাঁদের আকর্ষণে ফুলে ওঠে অর্থাৎ সেখানে হয় জোয়ার। এইভাবে কোনো জায়গায় চাঁদের সরাসরি আকর্ষণের ফলে যে জোয়ার হয় তাকে মুখ্য জোয়ার বলে।
গৌণ জোয়ার কাকে বলে?
মুখ্য জোয়ারের সময় চাঁদের আকর্ষণ স্থলের বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তুলনায় কেন্দ্রাতিক বল অনেক বেশি প্রবাল থাকে, ফলে ওই স্থানে জলরাশি ফুলে ওঠে অর্থাৎ ওই স্থানে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, একে গৌণ জোয়ার বলে।
ভরা কোটাল কাকে বলে?
অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিনে প্রবল জোয়ার হয় কারণ ওই দুইদিন পৃথিবী চাঁদ ও সূর্যের কেন্দ্রবিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করলে উভয়ের সম্মিলিত আকর্ষণে জোয়ারের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে তাই একে ভরা কটাল বা তেজকোটাল বলে। এই ধরনের ঘটনা প্রতি 15 দিনে একবার হয়।
অমাবস্যার দিনে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে থাকে চাঁদ। ঐদিন চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর একই দিকে ক্রিয়া করে ফলে অমাবস্যার দিন জোয়ারের জল অনেক বেশি ফুলে ওঠে একে ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল বলে।
পূর্ণিমার দিন চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে থাকে পৃথিবী। এই দিন চাঁদ পৃথিবী যে স্থানকে আকর্ষণ করে সূর্যের আকর্ষণ পরে ঠিক তার বিপরীত দিকে অর্থাৎ প্রতিপাদ স্থানে। ফলে এই দিনও জোয়ারের জল অনেক বেশি মাত্রায় ফুলে ওঠে এই দিনটিকেও ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল বলে।
মরা কোটাল কাকে বলে?
অষ্টমী তিথিতে (শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষে) চাঁদ ও সূর্য সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে অর্থাৎ পরস্পর পরস্পরের বিরোধিতা করায় কার্যহীন বল উৎপন্ন হয়।
এইজন্য এই দুইদিন চাঁদের আকর্ষণে মুখ্য জোয়ার ও কেন্দ্রাতিক বলের প্রভাবে গৌণ জোয়ার দুটি কম হয় একে বলা হয় মরা জোয়ার বা মরা কোটাল।
বানডাকা বলতে কি বোঝ? কি কি অবস্থায় নদীতে বান খুব প্রবল হয়?
জোয়ারের সময় সমুদ্র স্ফীত হয় বলে সমুদ্রের জল মোহনা দিয়ে দ্রুত নদীতে প্রবেশ করে ফলে নদীর জল তখন বেড়ে যায়। এইভাবে জোয়ারের জল নদীতে ঢোকার সময় মাঝে মাঝে অতিরিক্ত উঁচু (৫ থেকে ৭ মিটার) হয়ে প্রবল বেগে নদীতে জলোচ্ছাস ঘটায়, একেই বান বা বানডাকা বলা হয়।
বান আসার কারণ:
- নদী মোহনা ফানেল আকৃতির অর্থাৎ চওড়া হলে এবং নদী খাত সংকীর্ণ হলে।
- নদী মোহনায় বালির চড়া থাকলে।
- নদীতে সারা বছর জল থাকলে।
- প্রবল জলস্রোত থাকলে নদীতে বান আসে।