পৃথিবীর গতি সমূহ সম্পর্কিত কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
পৃথিবীর আবর্তন গতি কাকে বলে?
সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী নিজের অক্ষ বা মেরুরেখার চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে অবিরাম ঘুরে চলেছে। এইভাবে একবার সম্পূর্ণ আবর্তিত হতে পৃথিবীর সময় লাগে 23 ঘন্টা 56 মিনিট 4 সেকেন্ড অর্থাৎ প্রায় 24 ঘন্টা। নিজের অক্ষকেন্দ্রিক পৃথিবীর এই গতিকে বলা হয় আহ্নিক গতি বা আবর্তন গতি।
পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলাফল লেখ।
পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে –
- সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়।
- পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত্রি হয়।
- জোয়ারভাটা সংঘটিত হয়।
- জীবজগতের সৃষ্টি হয়েছে।
- বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের গতিবিক্ষেপ ঘটে।
- সময় নির্ধারণ করা হয়।
পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি কাকে বলে?
পৃথিবী নিজের মেরু রেখার চারিদিকে আবর্তন করার সাথে সাথে একটি নির্দিষ্ট কাল্পনিক উপবৃত্তাকার পথ ধরে অনবরত সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এইভাবে সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে 365 দিন 5 ঘন্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড। পৃথিবীর এই ধরনের সূর্য কেন্দ্রিক গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলা হয়।
পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল গুলি উল্লেখ কর।
পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল হল –
- দিন রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস বৃদ্ধি হয়।
- ঋতু পরিবর্তন হয়।
- পৃথিবীর অবস্থানের সাপেক্ষে নক্ষত্রের স্থান পরিবর্তন হয়।
ছায়াবৃত্ত বা আলোকবৃত্ত কাকে বলে?
পৃথিবীর আকার প্রায় গোলাকার হওয়ার কারণে আবর্তনের সময় পৃথিবীর সর্বত্র একই সময় সূর্যের আলো পড়ে না। এক অর্ধাংশ যখন সূর্যের আলো পায় তখন ওপর অর্ধাংশ অন্ধকার হয়। এই আলোকিত অর্ধাংশ ও অন্ধকার অর্ধাংশ যে বৃত্তাকার সীমারেখায় মিলিত হয়, তাকে ছায়াবৃত্ত বা আলোবৃত্ত বলে।
অনুসূর ও অপসূর কাকে বলে?
অনুসূর:
পৃথিবীর কক্ষের আকৃতি উপবৃত্তাকার আর সূর্য এই উপবৃত্তের ঠিক কেন্দ্রে নয়, একটি নাভি বা ফোকাসে অবস্থিত। এইজন্যে পরিক্রমণের সময় সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সারা বছর সমান থাকে না। কখনো একটু বাড়ে আবার কখনো একটু কমে। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় 15 কোটি কিলোমিটার। কিন্তু 3রা জানুয়ারি সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্ব বছরের মধ্যে সবথেকে কম থাকে। প্রায় 14 কোটি 70 লক্ষ কিমি। কক্ষপথে পৃথিবীর এই নিকটতম অবস্থানের নাম অনুসুর অবস্থান।
অপসূর:
ঠিক একইভাবে 4ঠা জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব বছরের মধ্যে সবথেকে বেশি থাকে, প্রায় 15 কোটি 20 লক্ষ কিলোমিটার। পৃথিবীর এই দূরতম অবস্থানের নাম অপসূর অবস্থান।
ফেরেলের সূত্র লেখ।
আবিষ্কারক:
1855 সালে মার্কিন বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেল সূত্রটি আবিষ্কার করেন।
ভিত্তি:
বায়ুপ্রবাহের উপর আবর্তন জনিত শক্তি এবং ঘর্ষণ শক্তির সম্পর্ক স্থাপন।
সূত্র:
উত্তর গোলার্ধে বায়ু সর্বদা ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সর্বদা বামদিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গোলার্ধে আয়ন বায়ু উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়।
কারণ:
মূলত তিনটি কারণে পৃথিবীর উপর গতিশীল বস্তু, বায়ু তথা সমুদ্রস্রোত ইত্যাদির গতিবিক্ষেপ হয়। যথা –
- পৃথিবীর আবর্তন বেগ নিরক্ষীয় অঞ্চলের চেয়ে মেরুতে কম।
- পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে।
- ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে বায়ুর ঘর্ষণে, ঘর্ষণ শক্তির কারণে গতিবিক্ষেপ হয়।
অধিবর্ষ বা লিপিয়ার কাকে বলে?
সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে 365 দিন 5 ঘন্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড। এই সময়কালকে এক সৌর বছর বলে। কিন্তু হিসাবের সুবিধার জন্য পৃথিবীর একবার সম্পূর্ণ পরিক্রমণের সময়কে 365 দিনে বছর ধরা হয়, এর ফলে প্রত্যেক বছর প্রায় 6ঘন্টা সময় বাড়তি থেকে যায়, আর এই বাড়তি সময়ের হিসাবের অন্য প্রতি 4 বছরে অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসে 1দিন বাড়িয়ে 24 দিনের পরিবর্তে 29 দিন ধরা হয় এবং সেই বছরটি 366 দিনে গণনা করা হয়। আর সেই বিশেষ বছরটিকে লিপিয়ার বা অধিবর্ষ বলে।
মহাবিষুব কাকে বলে?
যেদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়, সেই বিশেষ দিনটিকে বিষুব বলে। সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করতে করতে 21শে মার্চ তারিখে পৃথিবী তার কক্ষের এমন এক স্থানে অবস্থান করে যে ঐ দিনে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি ঠিক লম্বভাবে নিরক্ষরেখার উপর পড়ে। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করায় পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে বসন্ত ঋতু বিরাজ করায় 21শে মার্চের এই বিশেষ দিনটিকে মহাবিষুব বলা হয়।
জলবিষুব কাকে বলে?
যেদিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়, সেই বিশেষ দিনটিকে বিষুব বলে। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে করতে 23শে সেপ্টেম্বর পৃথিবী তার কক্ষপথে এমন এক জায়গায় অবস্থান করে যে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে নিরক্ষরেখার উপর পড়ে। এরফলে ঐ দিন উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে এইজন্য ঐ দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎ কাল থাকে তাই 23শে সেপ্টেম্বর এই বিশেষ দিনটিকে জলবিষুব বলা হয়।
This post was updated on 2023-02-22 17:56:33.