জনসংখ্যা ও জনবসতি সম্পর্কিত কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী।

জনসংখ্যা ও জনবসতি সম্পর্কিত কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।

পরিব্রাজন কাকে বলে?

কোন জায়গায় বহুদিন স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্য বা স্বল্পস্থায়ীভাবে অবস্থানের উদ্দেশ্যে মানুষের স্থান থেকে স্থানান্তরের বিচরণ বা বিজারণের প্রক্রিয়াকে পরিব্রাজন বা Migration বা প্রবজন বা পরিযান বলা হয়।

বাস্তুত্যাগ বা Emigration কাকে বলে?

যখন কোনো মানুষ স্বদেশে বসবাস তুলে দিয়ে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, তখন সেই পরিব্রাজনকে বাস্তুত্যাগ বা Emigration বলে।

কারণ:

  • স্বদেশে উচ্চশিক্ষা, কর্মসংস্থান, উন্নততর জীবন জীবিকার অভাব।
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা প্রভৃতি কারণে এই পরিব্রাজন হয়ে থাকে।
  • বিদেশে উচ্চ আয়ে জীবিকার সুযোগ, উন্নততর জীবনযাত্রা প্রভৃতির আকর্ষণ।

উদাহরণ – ভারত থেকে মেধাবী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের U.S.A, কানাডা প্রভৃতি দেশে গমন।

অভিবাসন বা Immigration কি?

যখন কোনো মানুষ এক দেশ থেকে আর এক দেশে চলে যায় বসবাসের জন্য তখন তাকে অভিবাসন বা Immigration বলে।

কারণ:

  • বিদেশে উন্নত জীবিকা, কর্মসংস্থান প্রভৃতির সুযোগ।
  • উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, জীবনযাত্রার উচ্চমান প্রভৃতি কারনে ইহা ঘটে।

উদাহরণ – U.S.A, England প্রভৃতি দেশ থেকে অধিবাসীদের নিউজিল্যান্ডে গমন।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব লেখ।

নেতিবাচক বা প্রতিকূল প্রভাব:

  1. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কার্যকরী জমির উপর চাপ বৃদ্ধি পায়।
  2. মাথাপিছু খাদ্যশস্যের জোগান ও মাথাপিছু গড় আয় হ্রাস পায়।
  3. কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত শ্রম শক্তি তৈরি হয়।
  4. কর্মসংস্থানের অভাবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
  5. অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহের প্রয়োজনে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  6. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার উপর চাপ বৃদ্ধি পায়।
  7. জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হয়।
  8. বাসস্থানের অভাব ঘটে ও জীবিকা অর্জনের সুযোগ কমায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

ইতিবাচক বা অনুকূল প্রভাব:

  1. সম্পদ উৎপাদনে শ্রমের যোগান বৃদ্ধি পায়, ফলে উৎপাদন বাড়ে।
  2. শ্রমিকের মজুরি কম বলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়।
  3. উপভোক্তার সংখ্যার বৃদ্ধিতে বাজারের আয়তন বৃদ্ধি পায় ফলে কৃষি ও শিল্পে উন্নতি ঘটে।
  4. জনসংখ্যার প্রয়োজনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব, সাথে সাথে নগরায়ন ঘটে।

ভারতে নারী পুরুষ অনুপাত অসমান হওয়ার কারণ লেখ।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলির মত ভারতের নারী পুরুষ অনুপাত চরম বৈষম্যময়। এর কারণগুলি হল –

  1. ভারতের শিশু কন্যা সন্তানের মৃত্যু হার অপেক্ষাকৃত বেশি।
  2. পিতৃতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় পুত্র সন্তানের প্রতি অধিক আকাঙ্ক্ষা হওয়া।
  3. ভারতে পুত্র সন্তানের তুলনায় কন্যা সন্তানেরা অধিক অবহেলা ও অযত্নের শিকার।
  4. অল্প বয়সে বিবাহ ও পুষ্টির অভাবে মায়েদের মৃত্যুহার বেশি।
  5. মহিলাদের সামাজিক মূল্য কম।
  6. নিষেধ থাকা সত্বেও অনেকক্ষেত্রে গর্ভস্ত শিশু কন্যার ভ্রূণ হত্যা করা হয়।
  7. মহিলাদের শিক্ষার হার অপেক্ষাকৃত কম।
  8. বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধের কারণে মহিলাদের মৃত্যু হয়। যেমন – বধুহত্যা।
  9. প্রসবকালীন সময়ে মায়েদের মৃত্যু, অযত্ন এবং অন্যান্য কারণে রোগ সংক্রমনে মারা যায়।

জনসংখ্যার ঋণাত্মক বৃদ্ধির হার কাকে বলে?

কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে নির্দিষ্ট মৃত্যুহার এর তুলনায় জন্মহার কমে গেলেবা ওই স্থানের মানুষ অধিক সংখ্যায় অন্যত্র গমন করলে জনসংখ্যার সেই বৃদ্ধিকে ঋণাত্মক বৃদ্ধি বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রিত, জন্মহার মৃত্যুহার এর থেকে কম হয়।
  • জীবনযাত্রার মান উচ্চ হয়।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ শিথিল করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
  • এই পর্যায়ে টি ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির। সুইডেন ও ডেনমার্ক এ পর্যায়ে অবস্থিত।

মেধা পাচার বা প্রবাহ বা Brain drain কী?

উন্নততর জীবনযাত্রার জন্য উন্নয়নশীল বা অনুন্নত শ্রেণীর দেশের জনসংখ্যার একাংশ বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত, বিজ্ঞানমনস্ক জনসংখ্যা উন্নত দেশে স্থায়ীভাবে গমন করে। সেই প্রকার পরিব্রাজনকে মেধা পাচার বা Brain drain বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • এর ফলে উন্নত দেশ প্রযুক্তি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত পরিষেবায় সমৃদ্ধ হয়।
  • উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক কাঠামো দুর্বল থাকায় এই ঘটনা বেশি ঘটে।
  • প্রবজনের মেরুকরণ রীতি কার্যকর হয়।

যেমন – ভারতের বিজ্ঞানী, গবেষক, ডাক্তার, বহু সংখ্যক মানুষ U.S.A, UK, জাপান জার্মানিতে পাড়ি দিয়েছে। প্রতিবছর এই হার ক্রমশ বাড়ছে।

আংশিক যাযাববৃত্তি কি?

যখন কোনো যাযাবর গোষ্ঠী নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ না থেকে বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য অনুকূল পরিবেশের উপর নির্ভর করে জীবন ধারণের জন্য, জীবিকা অর্জনের জন্য স্থান পরিবর্তন করে, তাকে আংশিক যাযাবর বৃত্তি বলে।

উদাহরণ – উত্তরাঞ্চলে ‘ভাটিয়া’ নামে এক জনগোষ্ঠীর মধ্যে আংশিক যাযাবরবৃত্তি চালু ছিল।

বৈশিষ্ট্য:

  • প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণে স্থান পরিবর্তন করা।
  • একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস না করা।
  • দুটি বিপরীত ধরনের জলবায়ুর মধ্যে এই বৃত্তি গড়ে ওঠে।
  • পশু পালনের জন্য এই আংশিক যাযাবরবৃত্তি ঘটে।
  • কৃষিতে ভাটা পড়লে এই আংশিক যাযাবরবৃত্তি ঘটে।

প্রজনন বা জন্মহার কাকে বলে?

কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রতি এক হাজার জন মানুষ পিছু প্রতিবছর যত জন জীবন্ত শিশুর জন্ম হয় তাকে স্থুল জন্মহার বা প্রজনন হার বলে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নির্ণয়ের জন্য এই পদ্ধতি সবথেকে সহজ ও প্রচলিত। সূত্রানুসারে –

স্থুল জন্মহার = BL/P*1000

যেখানে, BL = এক বছরে জন্মগ্রহণকারী জীবিত শিশুর সংখ্যা।

P = বছরের মধ্যবর্তী সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা।

মরণশীলতা বা মৃত্যুহার কাকে বলে?

কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রতি এক হাজার জন মানুষ পিছু বছরে যতজন মানুষের মৃত্যু হয় তাকে মৃত্যুহার বলে।

সূত্রানুসারে –

মৃত্যুহার = D/P*1000

যেখানে, D = কোনো নির্দিষ্ট বছরে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা।

P = ওই বছরের মধ্যবর্তী সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যা।

This post was updated on 2023-02-22 17:56:30.

Leave a Comment

error: Content is protected !!