জীববৈচিত্র্যের শ্রেণিবিভাগ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের তাৎপর্য এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
জীববৈচিত্র্যের শ্রেণিবিভাগ:
বিজ্ঞানী হাজউড ও বাস্তে জীববৈচিত্র্যকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন –
1. জন্মগত বা জিনগত বৈচিত্র্য:
কোনো জীব প্রজাতির মধ্যে জিনের সমবায়গত পার্থক্যের জন্য জীবের যে গঠনগত ও প্রকৃতিগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, তাকে জন্মগত বা জিনগত বৈচিত্র বলা হয়। জিনের বিভিন্নতা অনুসারেই জীবসংখ্যাকে প্রজাতি, উপপ্রজাতি, জাতি ইত্যাদিতে বিভক্ত করা হয়। যে জীবগোষ্ঠীর জিনগত বৈচিত্র বেশি, তারা পৃথিবীতে বহুদিন বেঁচে থাকে।
উদাহরণ – বর্তমানে মানুষের ৩৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার ধরনের জিনগত বৈচিত্র্য রয়েছে।
2. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য:
নির্দিষ্ট গুনসম্পন্ন জীবকূলকে প্রজাতি বলে। কোনো এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির সমাবেশকে ওই এলাকায় প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বলে। কোনো একটি অঞ্চলে যত সংখ্যক প্রজাতি উপস্থিত থাকে তাই হল ওই অঞ্চলের প্রজাতি সমৃদ্ধি।
উদাহরণ – বিশ্ব সংরক্ষণ উপদেষ্টা কেন্দ্রের গণনা অনুসারে বলা যায়, পৃথিবীতে অস্তিত্ব রয়েছে এমন প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ১.২৫ কোটি।
3. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য:
বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে যে বিশাল বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় তাই হল বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।
রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে International Union for the Conservation of Nature (IUCN) 2010 সালকে আন্তর্জাতিক জীব বৈচিত্র্য বর্ষ ঘোষণা করে।
পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক জীববৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় ক্রান্তীয় অঞ্চলে।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের তাৎপর্য:
জৈব সম্পদের জোগান বজায় রাখা:
বিভিন্ন জৈব সম্পদের(খাদ্য, ওষুধ, কাঠ) উৎসের ক্ষেত্র হলো জীববৈচিত্র। সেইসব জৈব সম্পদগুলির যোগান যাতে অক্ষুন্ন থাকে সেই জন্য জৈব সম্পদের সংরক্ষণ প্রয়োজন।
জলচক্রের ক্রিয়াশীলতাকে বজায় রাখতে:
ভৌম জলের স্থিতিশীলতা ও মৃত্তিকাস্থ জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে উদ্ভিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া জলের পৃষ্ঠ প্রবাহের নিয়ন্ত্রক হলে উদ্ভিদ। ফলে জলচক্রের ক্রিয়াশীলতা বজায় থাকা বহুলাংশে উদ্ভিদের সংখ্যার উপর নির্ভরশীল।
মৃত্তিকার ক্ষয়রোধে ও গুণগত মান বজায় রাখতে:
জীববৈচিত্র্য মৃত্তিকার ক্ষয়কে রোধ করে। মৃত্তিকায় বসবাস করে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ মৃত্তিকার গঠন, জলধারণ ক্ষমতা এবং পুষ্টিমূল্য প্রভৃতির যোগান বজায় রাখে।
পুষ্টিমৌলের চক্রায়ন বজায় রাখতে:
বিভিন্ন পুষ্টিমৌল গুলি চক্রাকার পথে প্রকৃতি থেকে জীবদেহে এবং জীব দেহ থেকে পুনরায় প্রকৃতিতে আবর্তিত হয়। পুষ্টি মৌলের এই চক্রাকার আবর্তন যাতে বজায় থাকে সে ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দূষণ কমাতে:
জীববৈচিত্র্যের স্থিতিশীলতা পরিবেশের দূষণ কমাতে সাহায্য করে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রয়োজন।
জলবায়ুর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে:
স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে জলবায়ুর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায়, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রয়োজন। যেমন – অরণ্য পরিবেশ শীতল রাখতে ও বৃষ্টিপাত ঘটাতে উদ্ভিদ সাহায্য করে।