সুনামি কাকে বলে, সুনামির কারণ, সুনামির ফলাফল এবং সুনামি সংক্রান্ত বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য কি কি কর্মসূচি নেওয়া হয় এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
সুনামি:
বিশালাকৃতি সামুদ্রিক ঢেউকে জাপানি ভাষায় ‘সুনামি’ বলে। জাপানি ভাষায় ‘সু’ এর অর্থ পোতাশ্রয় এবং ‘নামি’ এর অর্থ তরঙ্গ। সমুদ্রের তলদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে বিশালাকৃতি সামুদ্রিক ঢেউ বা জলোচ্ছাস উপকূলে আছড়ে পড়ে তাকে সুনামি বলে।
বৈশিষ্ট্য:
- সুনামির গতি থাকে 300-1000 কিমি/ঘন্টা।
- উপকূলের কাছে সুনামির উচ্চতা থাকে 30-40 মিটার।
সুনামির উৎপত্তি:
সমুদ্রগর্ভে ভূমিকম্প, পার্বত্য অঞ্চলে ধস, হিমানী সম্প্রপাত, অগ্নুৎপাত বা সমুদ্রে বড়ো উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সমুদ্রবক্ষে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রবক্ষে স্থানচ্যুতি ঘটে উপকেন্দ্রের সব জল অনেক উঁচু হয়ে তরঙ্গের আকারে প্রচন্ড গতিতে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে। এর ফলে উপকূল অঞ্চলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস অর্থাৎ সুনামির সৃষ্টি হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেঘলা একটি সুনামি প্রবন অঞ্চল।
যেমন – 2004 সালের 26শে ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার উপকূল সংলগ্ন ভারত মহাসাগরের তলদেশে প্রবল ভূমিকম্পে যে সুনামি সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে ১১ টি দেশের প্রায় তিন লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে।
সুনামির ফলাফল:
সুনামির ফলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় –
- বন্দর ও পোতাশ্রয় ধ্বংস হয়।
- উপকূল অঞ্চলে অগণিত মানুষ মারা যায়।
- জাহাজ সহ বিভিন্ন জলযানের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
- সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের সেতু, রেললাইন ভেঙে পড়ে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ও যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
- সুনামির প্রভাবে উপকূল অঞ্চলে নতুন জলভাগ বা স্থলভাগের সৃষ্টি হতে পারে।
- এর প্রভাবে উপকূলবর্তী ম্যানগ্রোভ বনভূমির বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
- গুগল অঞ্চলের গড়ে ওঠা হোটেল, পর্যটন কেন্দ্র, শহর প্রভৃতির ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুনামি সংক্রান্ত বিপর্যয়ের মোকাবেলার জন্য গৃহীত কর্মসূচি:
সুনামি সংক্রান্ত বিপর্যয়ের মোকাবিলার জন্য গৃহীত কর্মসূচি গুলি হল –
অ. সুনামির আগে:
- ভূমিকম্পের খবর থাকলে উপকূলবাসীদের তার আগাম রেডিও, টিভির মাধ্যমে জানাতে হবে যদি সুনামির সম্ভাবনা থাকে।
- সমুদ্রের জলস্তরের দিকে নজর রাখতে হবে, অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে।
- বেলাভূমি থেকে জল স্তর সমুদ্রের দিকে অনেক ভেতরে গেলে উপকূলবাসীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আ. সুনামির সময়:
- সুনামির সময় কখনো বেলাভূমির নিকট যাওয়া উচিত নয়।
- এই সময়ে তটরেখা থেকে দূরে কোন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে হয়।
ই. সুনামির পরে:
- সবার আগে জলসংলগ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে দূরে সরে যাওয়া উচিত।
- সর্বদা রেডিও, টিভিতে প্রচলিত সংবাদ শুনতে হবে ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
- বিপর্যয়ে আহত হলে উদ্ধারকারীদের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।