U.S.D.A. অনুসারে মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ লেখ।

U.S.D.A. অনুসারে মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
U.S.D.A. অনুসারে মৃত্তিকার শ্রেণীবিভাগ

 ভূমিকা:

          ১৯৬০ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাটি বিজ্ঞান কংগ্রেসে আমেরিকার মাটি বিজ্ঞানীরা তাদের আগের শ্রেণীবিভাগ গুলিকে সপ্তমবারের জন্য আবার সংশোধন করেন এবং এক নতুন শ্রেণীবিভাগ উপস্থাপন করেন। এই শ্রেণীবিভাগকে তাই সপ্তম সংশোধন শ্রেণীবিভাগ বা 7th Approximation বলে। এর আরো পাঁচ বছর পর নতুন মৃত্তিকা বিভাগ তৈরি করা হয় যা বিস্তারিত বা Comprehensive পদ্ধতি নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে মৃত্তিকার বর্তমান বৈশিষ্ট্যের দিকে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং মৃত্তিকাকে উদ্ভিদ তাত্বিক ও প্রাণী তাত্ত্বিক অনুরূপ নামকরণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে মৃত্তিকার ক্রম নিম্নরূপ – 

  • পর্যায়(order)
  •  উপপর্যায়(suborder)
  •  প্রধান গোষ্ঠী(great group)
  •  উপগোষ্ঠী(sub-group)
  •  পরিবার(family)
  •  শ্রেণী(series)

 এই শ্রেণীবিভাগের মাটি প্রধান 12 টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রত্যেক পর্যায়ের মাটির সঙ্গে Sol শব্দটি ব্যবহার করা হয়। উপপর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গঠনকারী উপাদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী বিভাগ গুলিতে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যকে জোর দেওয়া হয়েছে। মাটির আদ্রতা জলবায়ু ও উদ্ভিদের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে মাটির নামকরণ করা হয়। নিচে এই বিভাগ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো – 

1. অ্যারিডিসল:

        অ্যারিডিসল শব্দের উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘এরিডাস’ থেকে, যার অর্থ শুষ্ক।

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই মৃত্তিকা শুষ্ক অঞ্চলের মৃত্তিকা।
  2. বৃষ্টিপাত কম হয় বলে মৃত্তিকার উর্ধ্বস্তরের খনিজ সমূহ ধৌত প্রক্রিয়ায় নীচে স্থানান্তরিত হয় না।
  3.  এই মৃত্তিকার রং হালকা এবং এতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম থাকে।
  4.  এই মৃত্তিকার প্রোফাইলে ক্যালসিয়াম কার্বনেট সঞ্চিত স্তর বা জিপসাম স্তর বা দ্রবণীয় লবণ স্তর দেখা যায়।
  5.  এই মৃত্তিকার গভীরতা খুবই কম এবং মাটিতে লবণের পরিমাণ অধিক। 

  যেমন – মরু মৃত্তিকা, লাল ও লালচে মরু মৃত্তিকা, বাদামি মৃত্তিকা।

2. ভার্টিসল:

  ভার্টিসল শব্দের উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ ‘ভার্টো’ থেকে, যার অর্থ আবর্তিত হওয়া।

বৈশিষ্ট্য:

  1. মরিমেরিলোনাইট কাদা কণা সমৃদ্ধ মৃত্তিকা এই শ্রেণীর, যা অতিরিক্ত ভিজে গেলে ফুলে ওঠে। 
  2. শুষ্ক ঋতুতে মৃত্তিকা খুব শক্ত হয় এবং ফাটল দেখা যায়।
  3.  সাধারণত ক্রান্তীয় উপক্রান্তীয় বা সাভানা তৃণাঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
  4. মৃত্তিকার ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা খুব বেশি হওয়ায় মৃত্তিকা উর্বর হয়। 
  5. এই মৃত্তিকার রং গাঢ় এবং এটি অধিক ঘনত্বের মৃত্তিকা।

যেমন – ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা।

3. আলফিসল:

               আলফিসল শব্দের উৎপত্তি পেডালফার  থেকে।

 বৈশিষ্ট্য:

  1.  উপরিস্তর ধূসর বা বাদামী রঙের হয় এবং নিচের স্তর কাঁদা দ্বারা গঠিত।
  2.  উপরের স্তরে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে বলে মৃত্তিকা মোটামুটি উর্বর হয়।
  3.  এই মৃত্তিকা অ্যালুমিনিয়াম এবং লোহা দ্বারা সমৃদ্ধ।
  4.  সাধারণত প্রেইরি ও অন্যান্য তৃণভূমি ও পর্ণমোচী বনাঞ্চলে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।

যেমন – ধূসর বাদমী পডসল মৃত্তিকা, ক্ষয়প্রাপ্ত চারনোজেম মৃত্তিকা।

4. অ্যান্ডিসল:

 অ্যান্ডিসল শব্দের উৎপত্তি জাপানি শব্দ ‘অ্যান্ডি’ থেকে, যার অর্থ আগ্নেয় পদার্থ।

 বৈশিষ্ট্য:

  1.  এই মৃত্তিকা অগ্নুৎপাতে সৃষ্ট ছাই জমাট বেঁধে তৈরি হয়।
  2.  সূক্ষ্ম গ্ৰথনের জন্য এই মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ অধিক এবং সেই কারণে যথেষ্ট উর্বর।
  3.  এই মৃত্তিকার রং গাঢ় এবং মৃত্তিকা গুলি দৃঢ়ভাবে পরস্পরের সাথে লেগে থাকে না।
  4.  এই মৃত্তিকা ধৌত প্রক্রিয়ায় নিচের স্তরে সঞ্চিত হয় না তবে অবক্ষয়ের ফলে মিহি বা দানাদার খনিজের সৃষ্টি হয়।

5. মলিসল:

      মলিসল শব্দের উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘মলিস’ থেকে, যার অর্থ নরম।

 বৈশিষ্ট্য:

  1.  শুষ্ক অবস্থায় এই মৃত্তিকা খুব শক্ত হয় না তাই এর নাম মলিসল।
  2.  জৈব পদার্থ যুক্ত নরম এই মৃত্তিকায় বেশ স্পষ্ট স্তরায়ন দেখা যায়। 
  3. নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর তৃণভূমি ও বনভূমি অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
  4.  গাঢ় বর্ণের এই মাটিতে ক্ষারকীয় পদার্থের পরিমাণ বেশি। 
  5. ওপরের স্তরে হিউমাস সঞ্চিত থাকে এবং A ও B স্তরে ক্যালসিয়ামের আধিক্য থাকে।

       যেমন – চার্নোজেম, চেষ্টনাট মৃত্তিকা।

 6. ইনসেপ্টিসল:

                 ইনসেপ্টিসল শব্দের উৎপত্তি লাতিন শব্দ     ‘ইনসেপ্টাম’ থেকে, যার অর্থ আরম্ভ বা শুরু।

বৈশিষ্ট্য:

  1. এটি বয়সে নবীন তাই অপরিণত মৃত্তিকা।
  2. মৃত্তিকা পরিলেখে স্তর গুলি সুস্পষ্ট ভাবে গড়ে ওঠে না।
  3.  আম্লিক মৃত্তিকা তাই কৃষিকাজের সময় চুন ও সার প্রয়োগ করতে হয়।
  4.  এটি আর্দ্র অঞ্চলের মৃত্তিকা।
  5. ধৌতকরণের পরিমাণ অধিক।
  6.  এই মৃত্তিকা নদী অববাহিকা প্লাবনভূমি এবং ব-দ্বীপ অঞ্চলে দেখা যায়। 

           যেমন – বাদামী অরণ্য মৃত্তিকা

7. হিস্টোসল:

      হিস্টোসল শব্দের উৎপত্তি গ্ৰিক শব্দ ‘হিস্টোস’ থেকে, যার অর্থ কোশ।

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই মৃত্তিকা তে জৈব পদার্থ অধিক থাকে (২০%)।
  2.  এই মৃত্তিকাতে কাঁদা কণার পরিমাণ খুব কম।
  3.  আদ্র অঞ্চলের হ্রদ ও জলাভূমিতে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
  4.  অনেক ক্ষেত্রে মূল শিলার ওপর গাছের ডালপাতা পচে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
  5.  খনিজ পদার্থের পরিমাণ কম। 

         যেমন – জৈব মাটি ও জলাভূমির মৃত্তিক

8. অক্সিসল:

           অক্সিসল শব্দের উৎপত্তি ফরাসি শব্দ ‘অক্সাইড’ থেকে, যার অর্থ সোদক। 

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই মৃত্তিকা অধিক আবহবিকার সমৃদ্ধ।
  2. এই প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার উপরিস্তরে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম পড়ে থাকে এবং সিলিকা অপসারিত হয়।
  3.  এই মৃত্তিকা উষ্ণ আর্দ্র অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়া বেশি হওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়।
  4.  এই মৃত্তিকায় কর্দম খনিজের পরিমাণ ও ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা কম হয়।
  5.  ওপরের স্তরে অক্সাইড সমৃদ্ধ গভীর স্তর লক্ষ্য করা যায়।

   যেমন – ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা

Read- দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য কিছু অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।

9. আলটিসল:

                আলটিসল শব্দের উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘আলটিমাস’ থেকে, যার অর্থ শেষ। 

বৈশিষ্ট্য:

  1. এই মৃত্তিকার রং লাল বা হলুদ বর্ণের হয়।
  2.  এই মৃত্তিকায় কেওলিনাইট জাতীয় খনিজের প্রাধান্য থাকে।
  3. অধিক আবহবিকার সমৃদ্ধ মাটি।
  4.  উষ্ণ আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য অঞ্চলে এই মৃত্তিকা তৈরি হয়। 
  5. ধৌত প্রক্রিয়া অধিক হওয়ার জন্য এই মাটির উর্বরতা কম।

যেমন – লাল পীত পডসল জাতীয় মৃত্তিকা, লালচে বাদামী ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা

10. স্পোডোসল:

স্পোডোসল শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ‘স্পোডোম’ থেকে, যার অর্থ কাঠের ছাই।

 বৈশিষ্ট্য: 

  1. এটি পডসল মাটির অন্য নাম।
  2.  ধূসর বর্ণের এই মৃত্তিকার স্তরায়নে B স্তরে জৈব পদার্থ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম যৌগ সঞ্চিত হয়ে কঠিন প্যান তৈরি করে।
  3. আর্দ্র শীতল অঞ্চলে সরলবর্গীয় অরণ্যে এই মাটি দেখা যায়।
  4. খনিজ ও জৈব পদার্থ ধৌত প্রক্রিয়ায় নীচের স্তরে চলে যায় বলে মৃত্তিকা উর্বর হয় না।

       যেমন – পড্সল ও বাদামি পড্সল জাতীয় মৃত্তিকা।

11. এন্টিসল:

এন্টিসল শব্দের অর্থ নতুন বা নব্য।

বৈশিষ্ট্য:

  1.  এটি নবীন প্রকৃতির মৃত্তিকা ফলে মৃত্তিকায় সুনির্দিষ্ট কোন স্তরবিন্যাস থাকেনা।
  2.  এই মৃত্তিকা নদী উপত্যকায় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত খাড়াঢালের পাদদেশে দেখা যায়।
  3.  জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম থাকায় মৃত্তিকা উর্বরতা কম।
  4. এই মৃত্তিকার জল ধারণ ক্ষমতা কম।
  5.  সারা পৃথিবীব্যাপী এই মৃত্তিকা দেখা যায়।

          যেমন – পলল মৃত্তিকা, রেগোসল মৃত্তিকা।

Read– আলফ্রেড ওয়েবারের শিল্প স্থানিকতার নূন্যতম ব্যয় তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর।

12. জেলিসল:

জেলিসল শব্দের উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘জেল’ এর থেকে যার অর্থ বরফ জমা বা জমে বরফ হওয়া।

বৈশিষ্ট্য:

  1. মৃত্তিকা পরিলেখের হরাইজন গুলি অনিয়মিত।
  2. নীচের হরাইজনগুলিতে জৈব পদার্থ সঞ্চিত হয়।  
  3. উচ্চ অক্ষাংশে বা পার্বত্য ভূমির উচ্চ অংশে যেখানে তীব্র ঠান্ডা এবং মাঝে মাঝেই তুষারপাত হয়, সেখানে সেখানেএই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
  4.  মৃত্তিকার পৃষ্ঠদেশের গঠন দানাদার এবং বুদবুদ বা ফোস্কার মতো।

                  যেমন – তুন্দ্রা মৃত্তিকা।

 

This post was updated on 2023-02-22 17:58:16.

Leave a Comment

error: Content is protected !!