বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাকে বলে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি ও প্রয়োজনীয়তা এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:
বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য পদার্থের বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংগ্ৰহ, অপসারণ ও পৃথকীকৃত বর্জ্য সামগ্রীর এর প্রয়োজনীয় পুনর্ব্যবহার এবং নিয়ম অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় সেইসব গৃহীত পদক্ষেপকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বলা হয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতি:
বর্জ্য দ্রব্যগুলিকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিম্নোক্ত উদ্যোগ গুলি গ্রহণ করা প্রয়োজন –
1. বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস(Reduce):
- কঠিন বর্জ্যগুলিকে জৈব ও অজৈব বর্জ্যে বিভাজন করা প্রয়োজন। জৈব বর্জগুলিকে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। কঠিন বর্জ্যগুলিকে পুনরাবর্তন করা এবং পুড়িয়ে ফেলা বা মাটির গভীরে পুঁতে ফেলা প্রয়োজন।
- কারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া কমাতে প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন।
- তরল বর্জ্যের পরিশোধন ও পরিমাণ হ্রাস প্রয়োজন।
2. বর্জ্য উৎপাদন বন্ধ(Refuse):
- বিষাক্ত ও বিপজ্জনক বর্জ্য উৎপাদন আইন করে বন্ধ করা প্রয়োজন।
- বর্জ্যের উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সমর্থ্য এমন প্রযুক্তির সাহায্যে উৎপাদন চালু রাখা প্রয়োজন।
3. পুনর্ব্যবহার (Reuse):
ব্যবহৃত বর্জ্য জিনিস বা উপাদানকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার প্রক্রিয়াকে সাধারণভাবে পুনর্ব্যবহার বলা হয়। পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন মূল্যবান উপাদানের পুনরুদ্ধার সম্ভব তেমনি অন্যদিকে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণও কমানো যায়। যেমন – পচনশীল কঠিন বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদন হয়, আখের ছিবড়ে বা ব্যাগাসে থেকে কাগজের মন্ড বানিয়ে কাগজ তৈরি করা হয়।
4. পুনর্নবীকরণ(Recycle):
বর্জ্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে নতুন কোনো ব্যবহারের উপযোগী দ্রব্যে রূপান্তর করাকে পুনর্নবীকরণ বা রিসাইক্লিং বলে। যেমন – পরিত্যক্ত লোহা, টিন, কাঁচ ও প্লাস্টিকের দ্রব্য গলিয়ে নতুন লোহা, টিন, কাঁচ ও পলিথিন তৈরি করা যায়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা:
নিম্নলিখিত কারণে পরিবেশে বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি –
1. বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস:
ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান শহরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে বর্জ্যের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলি পরিবেশে ব্যাপক ক্ষতি করে, এজন্য এর ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
2. রোগ-ব্যধির হ্রাস:
কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা হলে রোগব্যাধি হ্রাস পায়।
3. মৃত্তিকার উর্বরতা:
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যই কম্পোস্ট সার তৈরি হয় এবং এই সার মাটিতে ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বাড়ানো।
4. গ্যাস, বিদ্যুৎ তৈরি:
বর্জ্যের স্তূপ থেকে নির্গত গ্যাসের মাধ্যমে গ্যাস বিদ্যুৎ তৈরি হয়।
5. পরিচ্ছন্ন, নির্মল পরিবেশে:
বর্জ্যের প্রভাবে মাটি, জল ও দূষিত হচ্ছে। এজন্য বর্জ্য উৎপাদন বন্ধ হলে বা উৎপাদন কমলে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও নির্মল হয়।
6. সম্পদ সৃষ্টি:
বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার ও পুনরাবর্তন দ্বারা নতুন সম্পদের ব্যবহার হ্রাস পায়, এটি সম্পদ সৃষ্টিরই সামিল।