ভূমিকম্প কাকে বলে এবং এর কারণ ও ভারতের ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলির নাম এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো। তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় প্রশ্ন কমেন্ট করে জানাতে পারো।
ভূমিকম্প:
প্রাকৃতিক বা অপ্রাকৃতিক কারণে পৃথিবীর অভ্যন্তরে হঠাৎ কোনো কম্পন সৃষ্টি হলে তা যখন ভূপৃষ্ঠের কিছু অংশকে ক্ষণিকের জন্য আন্দোলিত করে তোলে, তাকে ভূমিকম্প বলে।
ভূমিকম্পের কারণগুলি:
ভূমিকম্প বিভিন্ন কারণে ঘটে থাকে, এই কারণগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
1. প্রাকৃতিক কারণ:
a. ভূগাঠনিক কারণ:
পৃথিবীর ভূত্বক বড়ো সাতটি ও ছোটো কুড়িটি মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক পাত নিয়ে গঠিত। এই পাতগুলি চলমান ফলে একটির সঙ্গে অন্যটির ঘর্ষণে পাতসীমানা বরাবর প্রবল ভূমিকম্প হয়।
b. নবীন ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান:
গিরিজনি আলোড়নের প্রভাবে পার্শ্ব চাপে পর্বতের উত্থান ঘটে ফলে কম্পন অনুভূত হয়।
c. আগ্নেয়গিরি জনিত কারণ:
আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ ও ছিদ্র পথ দিয়ে উত্তপ্ত গ্যাস, লাভা প্রভৃতি বের হবার সময় প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভূকম্পনের সৃষ্টি করে।
d. ভূ-গর্ভ গহ্বরে ধ্বস:
ভৌমজলে দ্রবণ ক্রিয়ার ফলে নিজ থেকে শিলা বা বস্তুর অবলম্বন সরে যায়, তখন ভূমির উপরিভাগ বসে গেলে আঞ্চলিক ভাবে কম্পন সৃষ্টি হয়।
e. সমুদ্রতরঙ্গের আঘাত:
সমুদ্র সৈকত বরাবর তরঙ্গের প্রবল আঘাতে কম্পন অনুভূত হয়, তেমনি তরঙ্গের প্রবল আঘাতে বল পূর্বক শিলাতে ভাঙন ধরলে ভূকম্পন হয়।
f. শিলা পতন, হিমানী সম্প্রপাত:
সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলে প্রায়শই ঢাল বেয়ে বড়ো বড়ো চাই-এর শিলার পতন ঘটলে, হিমানী সম্প্রপাত হলে এবং ভূমিধস ঘটলে মৃদু ভূমিকম্প হয়।
g. উল্কাপাত:
খুব বড়ো মাপের উল্কাপিন্ড ভূপৃষ্ঠে সজোড়ে আছড়ে পড়লে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।
f. জলপ্রপাত:
খুব বড়ো মাপের জলপ্রপাতে প্রচুর জল একসঙ্গে অনেক উঁচু থেকে নীচে প্রবল বেগে আছড়ে পড়ার দরুণ ভূকম্পন অনুভূত হতে পারে।
2. কৃত্রিম কারণ:
a. জলাধার নির্মাণ:
নদীতে বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করলে জলাধারের জলরাশির প্রবল চাপে ঐ অঞ্চলের শিলা স্তরে সমস্থিতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই অসামঞ্জস্যতার কারণে শিরাস্তর পূর্বাস্থয়ায় ফিরে আসতে চায়, ফলে ভূমিকম্প হয়।
b. পারমাণবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা:
ভূ-গর্ভে শক্তিশালী পরমাণু বোমা ফাটানো হলে প্রবল বিস্ফোরণে আশেপাশের অঞ্চল খুব জোড়ে কেঁপে ওঠে।
ভারতের ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলির নাম:
ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুযায়ী ভারতবর্ষকে মোট পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা –
A. হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল:
হিমালয় একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বত।ভারতীয় পাত এবং এশিয় পাতের সংঘর্ষের ফলে পাত সীমায় ঢালু অঞ্চল বরাবর ভূত্বক প্রবলভাবে অস্থির থাকে। হিমালয়ের বিভিন্ন চ্যুতিরেখা বরাবর এর অস্থিরতা বেশি, ফলে প্রায়ই ব্যাপক ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
B. সিন্ধু-গঙ্গা সমভূমি অঞ্চল:
হিমালয়ের পাদদেশে সিন্ধু-গঙ্গা সমভূমি হল পলি সঞ্চিত অবনত ভূমি। এই অঞ্চলে মাঝে মাঝে ভূমিকম্প সংঘটিত হয় কারণ এই অবনত ভূমির নীচে এখনও ভূ-ত্বকীয় পরিবর্তন ঘটছে।
C. উপদ্বীপ অঞ্চল:
দক্ষিণ ভারতের উপদ্বীপ অঞ্চল ভূগাঠনিক দিক দিয়ে এক সুস্থির অঞ্চল। এই অঞ্চলে অনেক চ্যুতি রেখার অবস্থান দেখা দিলেও এরা প্রায়ই নিষ্ক্রিয়। তবে মালভূমি প্রান্তীয় অঞ্চলে মাঝে মাঝে দুর্বল ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
D. পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল:
ভারতের পশ্চিম উপকূল বরাবর যে চ্যুতি আছে সেই চ্যুতি বরাবর মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হয়। আরবসাগরীয় পাতের চলনও এর জন্য দায়ী।
E. অন্যান্য অঞ্চল:
ভারতের অন্যান্য অঞ্চল মোটামুটি ভাবে ভূমিকম্প মুক্ত। তবে বিভিন্ন বাঁধ ও জলাধারের অবস্থান, বিভিন্ন চ্যুতি গঠিত অঞ্চলের অস্থিরতা, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে প্রায় সমগ্ৰ ভারতে কম বেশি ভূমিকম্প হয়।
কোন যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা হয়?
সিসমোগ্ৰাফ যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
ভূমিকম্পের দেশ কাকে বলে?
জাপানকে ভূমিকম্পের দেশ বলে।