ম্যাঙ্গানিজের আকরিকগুলি, ম্যাঙ্গানিজের ব্যবহার এবং ম্যাঙ্গানিজের বিশ্ব বন্টন এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
ম্যাঙ্গানিজের আকরিকগুলি:
ম্যাঙ্গানিজের প্রধান প্রধান আকরিক গুলি হল –
- পাইরোলুসাইট – প্রায় 63% ম্যাঙ্গানিজ এই আকরিক থেকে পাওয়া যায়।
- ব্রনাইট – এতে প্রায় 52%-58% ম্যাঙ্গানিজ থাকে।
- সাইলোমিলেন – এই খনিজের প্রায় 45%-60% ম্যাঙ্গানিজ থাকে।
এই তিনটি প্রধান আকরিক ছাড়াও – ম্যাঙ্গানাইট, পোলিয়ানাইট ও হসম্যানাইট থেকেও ম্যাঙ্গানিজ নিষ্কাষণ করা হয়।
ম্যাঙ্গানিজের ব্যবহার:
বর্তমানে লৌহ ইস্পাত শিল্পে ও দৈনন্দিন ব্যবহারিক সামগ্ৰী উৎপাদনে ম্যাঙ্গানিজের গুরুত্ব ও ব্যবহার অপরিসীম।
1. লৌহ ইস্পাত শিল্পে ব্যবহার:
লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের প্রধান উপকরণ হল ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ। এই ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনে জন্য প্রায় 90% ম্যাঙ্গানিজ ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ম্যাঙ্গানিজ মিশ্রিত ইস্পাত খুব শক্ত, ক্ষয়রোধকারী এবং এতে মরিচা ধরে না। রেললাইন, যুদ্ধের অস্ত্র ও যানবাহনের সরঞ্জাম তৈরি করার জন্য ইস্পাত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
2. সংকর ধাতু প্রস্তুতিতে:
ম্যাঙ্গানিজের সাথে অন্যান্য ধাতু মিশিয়ে সংকর ধাতু প্রস্তুতি করা হয়। যেমন –
- তামা + দস্তা + ম্যাঙ্গানিজ = ব্রোঞ্জ।
- তামা + নিকেল + ম্যাঙ্গানিজ = ম্যাঙ্গানিন।
3. রাসায়নিক শিল্পে ব্যবহার:
বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক শিল্পে। যেমন – জীবাণুনাশক তরল, রং প্রস্তুত, ব্লিচিং পাউডার প্রভৃতি প্রস্তুতিতে; প্লাস্টিক, বার্নিশ, ফটোগ্ৰাফি, বস্ত্র বয়ন শিল্পে ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহৃত হয়।
4. ব্যাটারি প্রস্তুতিতে:
শুষ্ক ব্যাটারি কোশ প্রস্তুতিতে ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া,
- বাত-চুল্লি বা ব্লাস্ট ফারনেসে লোহার অক্সিডেশন রোধ করার জন্য ম্যাঙ্গানিজ ব্যবহার করা হয়।
- রঙিন কাঁচ প্রস্তুত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ম্যাঙ্গানিজের বিশ্ব বন্টন:
বিশ্বের ম্যাঙ্গানিজের বন্টন নীচে আলোচনা করা হল –
1. দক্ষিণ আফ্রিকা:
ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রজাতন্ত্র পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করে। এখানকার উল্লেখযোগ্য উত্তলক দেশ গুলি হল –
- কেপ প্রদেশের পোস্টমাসবার্গ।
- ক্রগার্সডর্প।
- কিম্বারলি
এছাড়া কোয়াজুলু নাটাল, নিডেল, কটোরিজ, গ্লোরিয়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে উত্তোলিত হয়।
2. চিন:
ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনে চীন বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। উল্লেখযোগ্য উত্তোলক অঞ্চল গুলি হল –
- গুয়াংসি প্রদেশের সিয়াংটং, লোপিং ও কোয়েইপং।
- লিয়াওনিং প্রদেশের চিনচাও, ল্যাইবিন, অ্যাইনঝৌ।
- হুনান ও হুবেই প্রদেশ।
3. অস্ট্রেলিয়া:
ম্যাঙ্গানিজ উত্তোলনে অস্ট্রেলিয়া তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। উল্লেখযোগ্য উৎপাদন অঞ্চল গুলি হল –
- কুইন্সল্যান্ডের গ্ৰিনভেল।
- পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট সিডনি।
- নিউসাউথ ওয়েলস প্রদেশ অঞ্চল।
4. গ্যাবন:
এটি ম্যাঙ্গানিজ উৎপাদনে চতুর্থ স্থান অধিকার করে।
- এই দেশের প্রধান ম্যাঙ্গানিজ উত্তোলক খনিটি হল মোয়ান্ডা।
- ওগোই।
- এম রেম বেলে।
- বুউই।
5. ব্রাজিল:
ম্যাঙ্গানিজ উত্তোলনে বিশ্বে ব্রাজিলের স্থান প্রঞ্চম। এখানকার উল্লেখযোগ্য খনি গুলি হল –
- কারাজাস অঞ্চলে আজুল খনি।
- আমাপা(বিশ্বের বৃহত্তম খনি)।
- মিনাসগেরাইস অঞ্চলের লাফায়েটি।
- বাহিয়া প্রদেশের পিরাই-দ্য-নোরতে।
- আউরোপ্রেতো অঞ্চল ।
6. ভারত:
ভারত ম্যাঙ্গানিজ উত্তোলনে পৃথিবীতে ষষ্ঠ। এখানকার উল্লেখযোগ্য খনি গুলি হল –
- ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, কালাহান্ডি, বোনাই ইত্যাদি।
- মধ্যপ্রদেশের বাদাঘাট, জব্বলপুর, ছিন্দোয়ারা।
- মহারাষ্ট্রের নাগপুর, ভান্ডারা।
- কর্ণাটকের শিমোগা, চিত্রদুর্গ।
- অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্ণূল, বিশাখাপত্তনম, শ্রীকাকুলাম।
- গোয়ার সাঙ্গুয়েম তালুক।
- ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ, পশ্চিম সিংভূম অঞ্চল।
- গুজরাটের পাচমহল, ভাদোদরা জেলা।
এছাড়া ঘানা, ইউক্রেন, কাজাকিস্তান প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ম্যাঙ্গানিজ উত্তোলন করা হয়।