এল নিনো কি? উৎপত্তির কারণ লেখ এবং প্রভাব লেখ।

এল নিনো কি এবং এর উৎপত্তির কারণ এবং প্রভাব এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

এল নিনো:

এল নিনো একটি স্পেনীয় শব্দ যার অর্থ ‘Christ child’ বা ‘শিশু খ্রীষ্ট’, আবার অনেকে একে ‘The Little Boy’ বা ‘ছোট ছেলে’ বলে। সাধারণভাবে বলা যায় ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বপ্রান্তে পেরু, ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে বিশেষত ক্রিস্টমাসের সময় যে দক্ষিণ মুখী উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হয়, তাকে এল নিনো বলে।

এল নিনো এর উৎপত্তির কারণ:

এটির উৎপত্তি সম্পর্কে নানামত প্রচলিত আছে –

a. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার তারতম্য:

অনেকে মনে করেন যেহেতু দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর মাধ্যমে ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল পূর্বভাগের জলরাশি ক্রমাগত পশ্চিমের উষ্ণ অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয় তাই পূর্বভাগের তুলনায় পশ্চিম ভাগের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠে এক পূর্বমুখী ঢাল সৃষ্টি হয়। এইভাবে যখন দুই প্রান্তে জলের উচ্চতার ব্যবধান 50-100 cm হয়, তখন উচ্চতার সমতা সৃষ্টির জন্য পশ্চিম প্রান্তের উষ্ণ জল পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্য-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছে যায় এবং উষ্ণ স্রোত রূপে পেরুর পাশ দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিনে বয়ে যায় অর্থাৎ এর নিনো এর আগমন ঘটে।

b. সমুদ্র তলদেশে ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুতপাত:

কোনো কোনো ভূবিজ্ঞানী মনে করেন প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে অবস্থিত মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা থেকে ভূমিকম্প ও অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে তাপ নির্গত হলে এল নিনোর সৃষ্টি হয়। আবহ- বিজ্ঞানী ভি. বার্ফনেস এর মতে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে কোন উষ্ণ স্থল উৎপন্ন হলে তার প্রভাবে ওয়াকার সার্কুলেশনসহ দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে ও এল নিনোর আগমন ঘটে।

এল নিনোর প্রভাব:

  • এল নিনো আবির্ভাবের বছরগুলিতে ইন্দোনেশিয়া সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায় ফলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ও দাবানলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
  • দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূলে এবং আটাকামা মরুভূমিতে বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়।
  • পেরু উপকূলে উষ্ণ স্রোত প্রবাহিত হওয়ার জন্য মাছের খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন কমায় না ফলে মৎস্য আহরণ কমে যায় ও মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তার ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়।
  • এল নিনো প্রভাবিত সমুদ্রে বেশিরভাগ প্রবালকীট মারা যায়।

This post was updated on 2023-02-22 17:56:41.

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!