গ্ৰিন হাউস এফেক্ট কাকে বলে? গ্ৰিন হাউস গ্যাস গুলি কী কী? গ্ৰিন হাউসের প্রভাব আলোচনা কর।

গ্ৰিন হাউস এফেক্ট কাকে বলে, গ্ৰিন হাউস গ্যাস গুলি কী কী ও গ্ৰিন হাউসের প্রভাব এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

গ্ৰিন হাউস:

সূর্য থেকে বিকিরিত শক্তির প্রায় 66% ক্ষুদ্র তরঙ্গ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। কিন্তু বৃহৎ তরঙ্গ রূপে এই সৌরতাপ ফিরবার সময় বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্প, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাস দ্বারা শোষিত হয়ে পৃথিবীকে উত্তপ্ত রাখে, একে গ্রিন হাউস এফেক্ট বলে।

গ্ৰিন হাউস গ্যাসগুলি:

যেসব গ্যাসীয় উপাদান বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে, তাদের গ্ৰিন হাউস গ্যাস বলে। যেমন –

কার্বন ডাই অক্সাইড:

জীবাশ্ম জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনের ফলে সৃষ্টি হয়। বনভূমি ধ্বংসপ্রাপ্তির মাধ্যমে উদ্ভিদের শ্বসন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি কারণে বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিতে এটি সর্বাপেক্ষা কার্যকরী।

কার্বন মনোক্সাইড:

জীবাশ্ম জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনের ফলে সৃষ্টি হয়।

ক্লোরো ফ্লুরো কার্বন:

বিভিন্ন শিল্প কার্য, প্রধানত রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবহারের জন্য রাসায়নিক সংশ্লেষ ঘটিয়ে তৈরি হয়। এটি তাপ শোষণ ছাড়াও ওজোন প্রভূত ক্ষতি করে।

মিথেন গ্যাস:

জৈব মল, উদ্ভিদ পচন, জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের দহনের ফলে সৃষ্টি হয়। জলাভূমি, জলসঞ্চিত ধান খেত গুলি এর উৎস।

নাইট্রাস অক্সাইড:

এটি একটি উল্লেখযোগ্য গ্রিনহাউস গ্যাস এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এর তুলনায় এর উষ্ণকরণ ক্ষমতা 270 গুণ বেশি। কৃষি জমিতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ, যানবাহনে খনিজ তেলের ব্যাপক দহন, দাবানল প্রভৃতির ফলে বিভিন্নভাবে নাইট্রাস অক্সাইড উৎপন্ন হয়।

ওজোন গ্যাস:

এই গ্যাস নিম্ন বায়ুস্তরে বিরল হলেও এর তাপ ধারণ ক্ষমতা অত্যাধিক। বায়ুমণ্ডলে নিচের স্তরে ওজোন সৃষ্টি হয় বিভিন্নভাবে। যেমন – চিকিৎসা কাজ ও জীবাণু নাশ করার জন্য অতিবেগুনি রশ্মির ব্যবহার, ফটোকপি মেশিনে, বিভিন্ন ধরনের বায়ুশোধন এবং জলশোধনের যন্ত্রে ওজন গ্যাস তৈরি হয়।

জলীয় বাষ্প:

জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতাকে ধরে রাখে, এজন্য গ্রিনহাউস সৃষ্টিতে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব আছে। যেমন বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়লে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং কমলে উষ্ণতাও কমে।

গ্রীন হাউস প্রভাব:

গ্রীন হাউস প্রভাবের ফলে পৃথিবীর উপর যে প্রভাব গুলি পড়ে, সেগুলি হল –

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি:

গ্রীন হাউজ প্রভাবের ফলে 1900-1950 সালের মধ্যে 1°-2°C উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে 2030-2050 সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 2°-4° C বৃদ্ধি পাবে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি:

গ্রীন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধির ফলে মেরু, পার্বত্য অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সমুদ্র উপকূলবর্তী নীচুস্থান আগামী দিনে জলমগ্ন হয়ে পড়বে। ফলে বসতি এলাকা ও কৃষি জমির পরিমাণ কমবে, মৃত্তিকা লবণাক্ত হবে, পানীয় জলের সংকট দেখা দেবে। ফলে খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।

আবহাওয়া মন্ডলের পরিবর্তন:

গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঝড়-বৃষ্টি বন্যা ইত্যাদি বেশি পরিমাণে পরিলক্ষিত হবে।

মহামারির প্রাদুর্ভাব:

গ্রিন হাউস ইফেক্ট এর ফলে পানীয় জল দূষিত হবে ফলে কলেরার প্রকোপ বাড়বে, উষ্ণতার বৃদ্ধির ফলে বাতাসের আদ্রতা বৃদ্ধি পাবে এবং সেই উষ্ণ আদ্র আবহাওয়ায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, এনকেফেলাইটিস প্রভৃতি মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটবে।

বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব:

গ্রীন হাউসের ফলে জলজ ও স্থলজ বাস্তুতান্ত্রিক একক গুলির ভারসাম্য ত্বরান্বিত হয়।

জীববৈচিত্র্য হ্রাস:

উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক উদ্ভিদ অঙ্গসংস্থানিক অভিযোজন করতে না পেরে ধ্বংস হয়ে যাবে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাবে।

কৃষিজমের হ্রাস:

সমুদ্র জলতল বৃদ্ধি পেলে উপকূলবর্তী কৃষিজমিগুলি জলমগ্ন হবে, ফলে কৃষি জমির হ্রাসের সাথে সাথে ফসল উৎপাদন কমে যাবে ফলে খাদ্যাভাব দেখা যাবে।

অরণ্যের বিনাশ:

উষ্ণতা, বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস, বিস্তীর্ণ অঞ্চলে খরা, মরুভূমির সম্প্রসারণ, সমুদ্র উপকূলবর্তী নীচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাওয়া, উষ্ণ ও শুষ্ক আবহওয়ার জন্য দাবানলের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে ব্যাপকভাবে অরণ্যের বিনাশ ঘটছে।

FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

কিয়োটো প্রোটোকল কী?

1997 সালের ডিসেম্বরে জাপানের কিয়োটো শহরে বিশ্বের 141 টি দেশ গ্ৰিনহাউস গ্যাস কম উৎপাদন, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এটি 2005 সালের 16 ই ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে গ্ৰিনহাউস গ্যাস উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গ্ৰিনহাউস গ্যাসের উৎপাদক দেশসমূহের নাম লেখ।

World Resources Institute দ্বারা প্রকাশিত 2013 সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর মোট গ্ৰিনহাউস গ্যাসের 25.93% নিঃসরণ করে তিন, 11.87% আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাকি নিঃসরণের জন্য ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্গত দেশগুলি মূলত দায়ী।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!