খনিজ তেল কি, খনিজ তেলের উৎপত্তি ও অবস্থান, খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্য গুলি এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।
খনিজ তেল:
মাটির তলায় পাললিক শিলাস্তরের মধ্যে যে মৃত জীবদেহের নির্যাস অপরিস্রুত অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম বলে।
পেট্রোলিয়াম কথাটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে। ‘পেট্রো’ মানে পাথর এবং ‘ওলিয়াম’ অর্থাৎ তেল। পাথর বা খনিজজাত তেলকে পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল বলে।
খনিজ তেলের উৎপত্তি ও অবস্থান:
উৎপত্তি:
আধুনিক ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন যে আজ থেকে প্রায় 7-10 কোটি বছর আগে টারশিয়ারি যুগে ভূগর্ভস্থ পাললিক শিলাস্তরে সামুদ্রিক অবক্ষেপের সঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণীদেহ চাপা পড়ে সঞ্চিত হয়ে উপরের শিলাস্তরের চাপে এবং ভূগর্ভের তাপে ক্রমশ তরল পদার্থে পরিণত হয়ে অবশেষে খনিজ তেলের রূপ ধারণ করে।
হাইড্রোজেন ও অঙ্গার এর রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে খনিজ তেলের উৎপত্তি হয় বলে একে হাইড্রোকার্বন বলা হয়।
শিলাস্তর থেকে এই তেল সংগ্রহীত হয় বলে একে শিলাতেল বলা হয়।
অবস্থান:
খনিজ তেল পাললিক শিলাস্তরে পাওয়া গেলেও এই শিলাস্তরের সব জায়গায় খনিজ তেল পাওয়া যায় না। সাধারণত ভঙ্গিল শিলাস্তরের ঊর্ধভঙ্গে খনিজ তেল অবস্থান করে একে পুল বলে।
এই ঊর্ধ্বভঙ্গের সবথেকে নীচের অংশে ভারী জলীয় অংশ থাকে, মধ্যবর্তী অংশে থাকে খনিজ তেল এবং খনিজ তেলের উপরের অংশ থাকে স্বাভাবিক গ্যাস।
এই কারণে ভঙ্গিল পর্বত অঞ্চলে, নদীর বদ্বীপ, মহীসোপান ও প্রাচীন জলাভূমিতে খনিজ তেল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্যগুলি:
খনি থেকে যে তেল উত্তোলিত হয় তা অত্যন্ত ভারী ও ঘন। একে ক্রুড ওয়েল বা অপরিশোধিত খনিজ তেল বলা হয়।
এই অপরিশোধিত তেলকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিশোধিত করার সময় গ্যাসোলিন, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, মোবিল ইত্যাদি নিষ্কাষিত হওয়ার পর অবশিষ্ট পদার্থ থেকে নানা ধরনের উপজাত দ্রব্য তৈরি করা হয়। খনিজ তেলের প্রধান উপজাত দ্রব্য গুলি হল –
ন্যাপথা, অ্যাসফল্ট, প্যারাফিন, ভেজলিন, বিটুমেন, ইথিলিন, প্রোপেন, মিথেন, আলকাতরা ইত্যাদি।
উপরোক্ত উপজাত দ্রব্যের মধ্যে ন্যাপথ্যা ও ইথিলিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এর থেকে মোম, পিচ, প্লাস্টিক, কৃত্রিম তন্তু, রং, ঔষধ, স্যাকারিন প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয়।
1 ব্যারেল(141 লিটার) অপরিশোধিত খনিজ তেল পরিশোধিত করলে নিম্নলিখিত দ্রব্য গুলি পাওয়া যায়।
উপজাত দ্রব্য | শতকরা পরিমাণ |
গ্যাসোলিন/পেট্রোল | 42 |
ডিজেল, অন্যান্য জ্বালানি তেল এবং গ্যাস | 40 |
কেরোসিন | 5 |
পিচ্ছিলকারক তেল বা লুব্রিকেটিং অয়েল | 4 |
পিচ | 2 |
পেট্রোলকোক | 1 |
অন্যান্য | 6 |
খনিজ তেলের ব্যবহার:
আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার যুগে খনিজ তেলের গুরুত্ব অপরিসীম। শুধুমাত্র ব্যবহারের দিক থেকে নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর বহুমুখী ব্যবহারগুলি নিম্নরূপ –
পরিবহন ক্ষেত্রে ব্যবহার:
মোটর গাড়ি চালাতে পেট্রোল, ডিজেল; এরোপ্লেন চালাতে অ্যাভিয়েশন ফুয়েল/ গ্যাসোলিন প্রভৃতির ব্যবহার করা হয়।
বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে:
ডিজেল ও গ্যাসোলিন দিয়ে গ্যাস টারবাইন চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার:
নাইট্রোজেন সার ও কীটনাশক দ্রব্য হল খনিজ তেলের উপজাত সামগ্রী। এছাড়া ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি চালানোর জন্য পেট্রোল ও ডিজেল ব্যবহার করা হয়।
রাসায়নিক শিল্পে:
পেট্রোরসায়ন শিল্প খনিজ তেল ছাড়া অচল। তৈল শোধনাগরে যে সমস্ত তরল খনিজ ও গ্যাসীয় উপজাত দ্রব্য সংগ্রহ করা হয় সেগুলি পুনরায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
পিচ্ছিলকারক পদার্থ:
বিভিন্ন শিল্পকারখানায়, পরিবহন রূপে যানবাহনের ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি সচল রাখতে পিচ্ছিলকারক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়।
গৃহস্থালির জ্বালানি:
গ্রামাঞ্চলে ঘর আলোকিত করতে এবং রান্নার জন্য কেরোসিনের ব্যবহার যথেষ্ট বেশি।
অন্যান্য:
এছাড়া সামরিক ক্ষেত্রে, শিল্পে কাঁচামাল রূপে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খনিজ তেলের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
FAQ/বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী
তরল সোনা কাকে বলে?
বর্তমানে পেট্রোলিয়ামের বহুবিধ ও ব্যাপক ব্যবহারের জন্য একে তরল সোনা বা কালো সোনা আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ভারতের প্রথম তৈল খনি আবিষ্কৃত হয় কোথায়?
1867 খ্রীষ্টাব্দে অসমের ডিগবয়ে ভারতের প্রথম তৈল খনি আবিষ্কৃত হয়।