স্বাভাবিক উদ্ভিদ কাকে বলে? ম্যানগ্ৰোভ উদ্ভিদ সম্পর্কে আলোচনা কর। অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি গুলি আলোচনা কর।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ কাকে বলে এবং ম্যানগ্ৰোভ উদ্ভিদ সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

কোনো স্থানের নির্দিষ্ট বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা ও মৃত্তিকার প্রভাবে কোনোরূপ পরিচর্যা ছাড়াই স্বাভাবিক ভাবেই যে উদ্ভিদ জন্মায় ও বড়ো হয় তাকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে।

ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ:

এই ধরনের উদ্ভিদ উপকূলবর্তী নদী, মোহনা, খাড়ি, বদ্বীপ প্রভৃতি সমুদ্র সংলগ্ন নীচু নোনা জলে নিমজ্জিত জমিতে জন্মায়। এই বনভূমিকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বলে। ম্যানগ্রোভ অরণ্য উপকূল অঞ্চলে ক্ষয়জনিত সমস্যা সমাধান করে। সুন্দরবন ভারতের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্যের উদাহরণ।

আয়তন:

আয়তন প্রায় 6 লক্ষ হেক্টর।

বন্টন:

ভারতে 15 টি ম্যানগ্রোভ অরণ্য আছে। যেমন –

  • পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন।
  • ওড়িশার ভিতরকণিকা ও মহানদী বদ্বীপ।
  • অন্ধ্রপ্রদেশের করিঙ্গা, কৃষ্ণা ও গোদাবরী নদীর মোহনা।
  • তামিলনাড়ুর পিচাভরম, পয়েন্ট ক্যালিমার।
  • কর্নাটকের কুন্দাপুর।
  • কেরলের ভেম্বানাদ।
  • মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি।
  • গুজরাটের কচ্ছ উপসাগর।

প্রধান বৃক্ষ:

সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, গোলপাতা, হোগলা, হেতাল, কেওড়া, বাইন, গর্জন, তোরা, কাঁকড়, বকুল, পশুর, ধুন্দুল প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য:

  1. জোয়ার ভাটার প্রভাবে মৃত্তিকা ভিজে থাকার দরুন এই উদ্ভিদ গুলি চিরহরিৎ প্রকৃতির হয়।
  2. শারীরবৃত্তীয় ও শুষ্ক মৃত্তিকা হওয়ায় শ্বাসকার্য চালানোর জন্য উদ্ভিদের মূলগুলি মাটি ফুরে উপরে উঠে আসে একে শ্বাসমূল বলে।
  3. জোয়ার ভাটার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদের কাণ্ড থেকে এক রকমের মূল বের হয় এদের ঠেস মূল বলে।
  4. উদ্ভিদ গুলির জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম ঘটে।

ব্যবহার:

  • বাইন গাছ জ্বালানি ও তক্তার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ধুন্দুল পেন্সিল তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • হেতাল, গোলপাতা ঘর ছাউনি দেওয়ার জন্য।
  • সুন্দরী, পশুর ঘরবাড়ি ও আসবাব নির্মাণের কাজে।

অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি আলোচনা কর।

পরিবেশের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন খাদক শ্রেণীর খাদ্যের চাহিদা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে পূরণ করতে অরণ্য সংরক্ষণ বিশেষভাবে প্রয়োজন।

অরণ্য সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করা হয়েছে –

অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষচ্ছেদন রোধ:

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ন, পথঘাট নির্মাণ, শিল্প স্থাপন এর সাথে সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য বজায় রেখে পরিমিত বৃক্ষচ্ছেদনের দিকে নজর দিতে হবে।

অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন রোধ:

অপরিণত বা ছোট গাছ কাটা বন্ধ করে বনজ সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে হবে।

বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার:

কাঠের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে।

দাবানল প্রতিরোধ:

দাবানলের হাত থেকে বনভূমিকে রক্ষা করার জন্য প্রহরি কেন্দ্র স্থাপন, খবর আদান-প্রদানের আধুনিক ব্যবস্থা এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি রাখতে হবে।

পশুচারণ:

গবাদি পশুচরনের জন্য পশু চারণভূমি নির্দিষ্ট রাখতে হবে। তা না হলে পশুচারনের ফলে সমস্ত তৃণভূমি তৃণহীন হয়ে পড়ে।

মানুষের অংশগ্রহণ:

অরণ্য নিধনের প্রতিরোধে মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের স্বার্থে, বর্তমান সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষের আন্তরিক ও পূর্ণ অংশগ্রহণ বিশেষ জরুরি।

যৌথ অরণ্য ব্যবস্থাপনা:

অরণ্যকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ভারত সরকারের গৃহীত অনেক নীতির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের যৌথ ব্যবস্থাপনা নীতিটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

রাসায়নিক ও জৈবিক উপায়ে অরণ্যের রোগ প্রতিরোধ:

কীটনাশক, ঔষধপত্র, নিয়মিত রাসায়নিক ও জৈবিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে অরণ্যের বৃক্ষের কীটপতঙ্গ, রোগ নিবারণ এবং উপযুক্ত পরিচর্যা ও তত্ত্বাবধান করা জরুরী।

FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

সিলভি কালচার কাকে বলে?

বনভূমির পরিচর্যা ও বনসম্পদের পুনর্নবীকরণের জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী বনসৃজন ও অরণ্যের উন্নতি সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনাকে সিলভি কালচার বলে।

কৃষি বনসৃজন কাকে বলে?

কৃষিজ ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষক যখন কাঠ, জৈব সার, ফলমূল, ওষুধ প্রভৃতি পাওয়ার জন্য কৃষি জমির মাঝে মাঝে জমির সীমানা বরাবর অথবা অনাবাদী বা পতিত জমিতে প্রয়োজনীয় গাছ লাগিয়ে বনভূমি গড়ে তোলেন তখন তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!