ভারত মহাসাগরীয় স্রোত সম্বন্ধে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এটি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার কর।
ভূমিকা:
ভারত মহাসাগর পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। ভূপৃষ্ঠে শতকরা প্রায় 14 ভাগ এই মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত। মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত গুলি মৌসুমী বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানকার মূল স্রোত গুলি হল –
1. শীতল কুমেরু স্রোত:
শীতল কুমেরু স্রোত আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে আফ্রিকার দক্ষিণ দিক দিয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। এই স্রোতটি পশ্চিমাবায়ুর দ্বারা তাড়িত হয়ে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়।
- প্রধান শাখাটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর প্রবেশ করে।
- অন্য শাখাটি অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূল ধরে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়।
2. পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া স্রোত:
পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে আগত শীতল কুমেরু স্রোতের একটি শাখা পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তরমুখী হয়ে শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া স্রোত নামে পরিচিত হয়।
আয়নবায়ুর প্রভাবে পশ্চিমদিক থেকে বেঁকে এই স্রোত দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সাথে মিশে যায়।
3. নিরক্ষীয় স্রোত:
উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ু ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে এবং পৃথিবীর আবর্তনের কারণে নিরক্ষরেখার উভয় দিকে সৃষ্ট পশ্চিমমুখী স্রোতকে নিরক্ষীয় স্রোত বলে।
4. উষ্ণ আগুলাস স্রোত:
মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিণ অংশে মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিক স্রোত পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে আগুলাস স্রোতের সৃষ্টি হয়।
আগুলাস স্রোত দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সাথে মেশে।
5. উষ্ণ সোমালি স্রোত:
দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের যে শাখাটি আফ্রিকার সোমালি ল্যান্ড এর পাশ দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় তাকে সোমালি স্রোত বলে।
নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে আরবসাগরে প্রবেশ করলে, এই স্রোত মৌসুমি বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
6. মাদাগাস্কার স্রোত:
দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ু দ্বারা তাড়িত হয়ে মাদাগাস্কারের সন্নিকটে বাধা পায়। মাদাগাস্কার দ্বীপের সন্নিকটে বাধাপ্রাপ্ত দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত তিনটি অংশে বিভক্ত হয়। একটি শাখা মাদাগাস্কার দ্বীপের পূর্বভাগ দিয়ে মাদাগাস্কার স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।
7. মোজাম্বিক স্রোত:
দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের দ্বিতীয় শাখা মাদাগাস্কার দ্বীপের পশ্চিমভাগ দিয়ে মোজাম্বিক স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।
8. মৌসুমী স্রোত:
ভারত মহাসাগরের সর্ব উত্তরের স্রোত সমূহ মূলত মৌসুমী বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ঋতু ভেদে মৌসুমী বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয় বলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দুটি বিপরীতমুখী স্রোতের সৃষ্টি হয়। যেমন –
a. গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী স্রোত:
সোমালি উপকূলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সোমালি স্রোত আরো উত্তরে এগিয়ে আরব সাগর থেকে আন্দামান সাগরের মধ্য দিয়ে সুমাত্রা দ্বীপের সুন্ডা প্রণালী পর্যন্ত এগিয়ে যায়।
বৈশিষ্ট্য:
- ইহা দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের একটি শাখা।
- গ্রীষ্মকালের মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোতরূপে প্রবাহিত হয়।
b. শীতকালীন মৌসুমী স্রোত:
শীতকালীন মৌসুমী স্রোত মালয় ও সুমাত্রা থেকে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে এবং দক্ষিণে বাহিত হয়ে সোমালি ল্যান্ডের দক্ষিণে পৌঁছায়।
বৈশিষ্ট্য:
- শীতকালীন মৌসুমী স্রোত গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী স্রোতের বিপরীতে প্রবাহিত হয়।
- উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে শীতকালীন মৌসুমি স্রোত প্রবাহিত হয়।
9. নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত:
ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত এবং উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত বা মৌসুমী স্রোতের মাঝখান দিয়ে একটি উষ্ণ স্রোত পশ্চিমদিক থেকে পূর্বদিকে বয়ে যায়, একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বা ভারতীয় প্রতিস্রোত বলে।
This post was updated on 2023-02-22 17:56:47.