ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া সম্পর্কে লেখ।

ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

ভূমিকা:

যে সমস্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের গঠন সম্পন্ন হয়, তাকেই ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া বলে।

ভূগাঠনিক প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:

  • ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভূমিরূপ গঠনে কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
  • এটি ধীর কিংবা আকস্মিক উভয় গতিতেই আত্মপ্রকাশ করে।
  • প্রতিটি ভূ-গঠনিক প্রক্রিয়ায় একটি কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান।
  • ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়া যেমন ভূগর্ভে সৃষ্টি হয় তেমনি ভূপৃষ্ঠের বাইরেও এর কার্যকারিতা দেখা যায়।

ভূমিরূপ গঠনে যেসব প্রক্রিয়া কাজ করে সেগুলিকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

  1. ভূঅভ্যন্তরীন বা অন্তর্জাত প্রক্রিয়া।
  2. ভূপৃষ্ঠের বাইরের বা বহির্জাত প্রক্রিয়া।

নীচে এই প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল –

1. ভূঅভ্যন্তরীন বা অন্তর্জাত প্রক্রিয়া:

পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্ট প্রচন্ড চাপ ও তাপের প্রভাবে স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে কঠিন ভূত্বকের যে ধীর বা আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে, তাকে ভূঅভ্যন্তরীন বা অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে। এরই প্রভাবে ভূত্বকের সংকোচন, প্রসারণ, উত্থান, অবনমন, বিচ্ছেদ, বিকৃতি প্রভৃতি ঘটে। প্রকৃতি ও ধরন অনুসারে এই প্রক্রিয়াকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

a. ভূবিপর্যয়:

ভূ-অভ্যন্তরীণ বলের প্রভাবে ভূ-ত্বকে অনুভূমিক ও উলম্ব স্থানান্তর ঘটে। এর প্রভাবে পর্বত ও মালভূমির সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্প, সমুদ্রখাত, আগ্নেয়চ্ছাস, শিলা রূপান্তর, উল্লম্ব ও অনুভূমিক ভাবে ভূ-ভাগের চলন ও আকৃতির পরিবর্তন – এইসব ঘটনাকে একত্রে ভূ-বিপর্যয় বলা হয়।

b. মহীভাবক আলোড়ন:

‘মহী’ শব্দের অর্থ মহাদেশ এবং ভাবক শব্দের অর্থ উৎপাদন বা সৃষ্টি অর্থাৎ যে আলোড়নে মহাদেশ গঠিত হয় বা যে আলোড়ন মহাদেশের ব্যাপক অংশ জুড়ে কাজ করে সেটাই হল মহীভাবক আলোড়ন।

এই আলোড়ন পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বরাবর অর্থাৎ উল্লম্বভাবে কাজ করে। এর ফলে মহাদেশ, মালভূমি, চ্যুতি, ফাটল, গ্ৰস্ত উপত্যকা, উত্থিত উপকূল, অবনত উপকূল ইত্যাদি সৃষ্টি হয়।

c. গিরিজনি আলোড়ন:

‘গিরি’ শব্দের অর্থ পর্বত এবং ‘জনি’ শব্দের অর্থ উৎপত্তি অর্থাৎ যে ভূ-আলোড়নে মূলত ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়, তাকে গিরিজনি আলোড়ন বলে। এই আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিক ভাবে কাজ করে ফলে ভূত্বকে টান পড়ে, শিলায় সংকোচন ও পীড়ন ঘটে। এর ফলে শিলাস্তরে ভাজ করে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়।

d. আকস্মিক আলোড়ন:

ভূ-অভ্যন্তরীণ যে আলোড়নের দ্বারা খুব দ্রুতগতিতে ও আকস্মিক ভূমিরূপের পরিবর্তন হয়, তাকে আকস্মিক আলোড়ন বলে। ভূমিকম্প ও অগ্নুৎপাত এই প্রকার আলোড়নের অন্তর্গত। এর প্রভাবে স্থানীয়ভাবে ভূমিরূপ পরিবর্তিত হয়।

2. ভূপৃষ্ঠের বাইরের বা বহির্জাত প্রক্রিয়া:

ভূত্বকের উপরিভাগে ক্রিয়াশীল যেসব প্রক্রিয়া থেকে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ গঠন করে তাদের বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে।

যেমন – আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন, পুঞ্জিত স্খলন, নদী, বায়ু, ভৌমজল, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি।

এই প্রক্রিয়াকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

a. অবরোহন প্রক্রিয়া:

যেসব বহির্জাত প্রক্রিয়ার(যেমন – প্রধানত নদী, বাষ্প, হিমবাহ, রোদ, বৃষ্টি, আর্দ্রতা, সমুদ্রতরঙ্গ ইত্যাদি) মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের উঁচু জায়গাগুলি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্রমশ নীচু হয়ে যায়, সেইসব প্রক্রিয়াকে একত্রে অবরোহন বলে।

যেমন – আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয়, ক্ষয় ইত্যাদি।

b. আরোহন প্রক্রিয়া:

যেসব বহির্জাত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (যেমন – নদী, বায়ু, হিমবাহ, ভৌমজল, সমুদ্রতরঙ্গ ইত্যাদি) ভূমিভাগের নীচু অংশগুলি ক্ষয়জাত পদার্থের দ্বারা ক্রমশ ভরাট হয়ে ভূমিভাগ তুলনামূলকভাবে সামান্য উঁচু হয়, সেইসব প্রক্রিয়াকে আরোহন প্রক্রিয়া বলে।

✓ পীড়ন কাকে বলে?

বাইরের বলের মাধ্যমে কোন বস্তুর উপর চাপ দিলে ওই চাপকে প্রতিরোধ করার জন্য বস্তুর ভিতর থেকে যে প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয় তাকে পীড়ন বলে।

কোন বস্তুর একটি নির্দিষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে অর্থাৎ বস্তুর একটি নির্দিষ্ট পীড়ন সহ্য করার ক্ষমতা থাকে। বাইরের বল বস্তুর ওই পীড়ন সহ্য করার ক্ষমতা অপেক্ষা বেশি হলে বস্তুটি তখন বিকৃত হয় অথবা ভেঙে যায়। এভাবেই ভূত্বকে শিলায় ফাটল, চ্যুতি, ভাঁজ প্রভৃতির সৃষ্টি হয়।

Leave a Comment

error: Content is protected !!