প্রশান্ত মহাসাগরের ভূপ্রকৃতি, দ্বীপসমূহ সম্পর্কে লেখ।

প্রশান্ত মহাসাগরের ভূপ্রকৃতি ও দ্বীপসমূহ সম্পর্কে এই লেখাটিতে আলোচনা করা হল। দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি এগুলি তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে। তোমরা নিজেরা মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং প্রশ্নগুলো তোমাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো।

প্রশান্ত মহাসাগরের ভূপ্রকৃতি:

মহিসোপান:

এশিয়া ও ওশিয়ানিয়ার পূর্ব উপকূল বরাবর প্রশান্ত মহাসাগরের মহিসোপান বিস্তৃত। এই মহিসোপানের ওপর কিউরাইল, জাপান, ফিলিপাইনে, ইন্দোনেশিয়া ও নিউজিল্যান্ডের দ্বীপসমূহ অবস্থিত। এছাড়া এখানে অনেক অন্তর্দেশীয় সমুদ্র রয়েছে। যেমন – বেরিং সাগর, ওখটস্ক সাগর, জাভা সমুদ্র ও প্রবাল সাগর ইত্যাদি। এই মহিসোপানের গড় গভীরতা 200 মিটারের কম এবং বিস্তার প্রায় 150 কিমি থেকে 1500 কিমি। আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের নিকট মহিসোপানের বিস্তার মাত্র 80 কিমি।

বেসিন:

প্রশান্ত মহাসাগরের অধিকাংশ স্থান বেসিন অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলের গড় গভীরতা প্রায় 7300 মিটার। বেসিন গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বেসিন হল –

  • অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উত্তরে বেরিং প্রণালীর সন্নিকটে অ্যালুশিয়ান বেসিন।
  • ফিজি দ্বীপের উত্তরে 10° দঃ থেকে 20° দঃ অক্ষরেখার মধ্যে উত্তর ফিজি বেসিন ও 20° দঃ থেকে 32° দঃ অক্ষরেখায় ফিজি ও নিউজিল্যান্ডের মাঝখানে দক্ষিণ ফিজি বেসিন।
  • ইরিয়ান জায়ার উত্তরে পূর্ব ও পশ্চিম ক্যারোলিনা বেসিন।
  • চিলির পশ্চিমে চিলি বেসিন।
  • পেরুর পশ্চিমে পেরু বেসিন। এখানকার বেসিন গুলির মধ্যে পেরু বেসিন গভীরতম(5292 মিটার)

গভীর সমুদ্রখাত:

প্রশান্ত মহাসাগরে মোট ৩২ টি সমুদ্র খাতের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর অধিকাংশই সংকীর্ণ ও সুগভীর এবং দ্বীপ মালা বা পর্বত শৃঙ্খলের সমান্তরালের প্রসারিত। বেশিরভাগ খাত মহাসাগরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এইসব সমুদ্র খাতের মধ্যে গুয়াম দ্বীপের পূর্বের অর্ধাচন্দ্রাকারে অবস্থিত মারিয়ানা খাত হল পৃথিবীর গভীরতম খাতএর গভীরতম অংশটি এই খাতের দক্ষিণের শেষ প্রান্তে অবস্থিত চ্যালেঞ্জার ডেপথ নামে পরিচিত, যার গভীরতা 11033 মিটার।

শৈলশিরা:

প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে কিছু সংখ্যক শৈলশিরা এবং উচ্চভূমি রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  • মারিয়ানা খাতের পূর্বে অবস্থিত মার্কাস নেকার উচ্চভূমি ও মধ্যপ্রশান্ত শৈলশিরা।
  • ফিলিপাইন খাতের পূর্বে পালাউ থেকে উত্তর দিকে রিউকু পর্যন্ত বিস্তৃত কিউসু-পালাউ শৈলশিরা।
  • হাওয়াই দ্বীপের দক্ষিণে হাওয়াই শৈলশিরা।
  • সলোমন দ্বীপের উত্তরে ক্যারোলিন সলোমন বা ক্যাপিঙ্গামেরাঙ্গা শৈলশিরা।
  • চিলির পশ্চিমে উত্তর-পশ্চিম চিলি শৈলশিরা।
  • কুমেরু মহাদেশের উত্তরে প্রশান্ত কুমেরু শৈলশিরা ও মাকুয়ারি-বেলেনি শৈলশিরা।

চ্যুতি অঞ্চল:

পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে একাধিক চ্যুতি লক্ষ করা যায়, সেগুলি 4000-4500 কিমি দীর্ঘ এবং গভীর সমুদ্রের সমভূমি ওপর খাড়া ঢাল, সমুদ্রভৃগু, স্তূপপর্বত, সংকীর্ণ নিম্নভূমি ইত্যাদি গঠন করেছে। আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিমে এই চ্যুতিগুলি হল – মেন্ডোসিনো, পায়োনিয়ার, মারে, মোলেকাই, ক্ল্যারিয়ন প্রভৃতি।

দ্বীপসমূহ:

প্রশান্ত মহাসাগরে প্রায় 20,000 ছোটো বড়ো দ্বীপ রয়েছে, যাদের মোট ক্ষেত্রফলের পরিমাণ খুব বেশি নয়। এখানে দুধরনের দ্বীপপুঞ্জ দেখা যায় –

মহাদেশীয় দ্বীপসমূহ:

এগুলির বেশিরভাগ বিশালাকার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিমজ্জিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, চিলির দ্বীপপুঞ্জ (সাধ ফেলিক্স, জুয়ান ফার্নান্দেজ প্রভৃতি), ব্রিটিশ কলাম্বিয়া দ্বীপপুঞ্জ (আলেকজান্ডার, কুইন শারলোটি প্রভৃতি) এবং মহাসাগরের পশ্চিম দিকে ধনুকের আকারে বেঁকে অবস্থিত জাপান দ্বীপপুঞ্জ (কিউসু, সিকোকু, হনসু, হোক্কাইডো), কিউরাইল, সাখালিন, তাইওয়ান, ফিলিপাইন সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি।

ক্ষুদ্রাকার দ্বীপসমূহ:

এগুলি বিচ্ছিন্নভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে। এই পুনরায় দুটি প্রধান উপবিভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –

বসবাসকারী অধিবাসীদের বর্ণ ও জাতির ভিত্তিতে –

  1. মেলানেশিয়া বা কৃষ্ণদ্বীপ এখানে কৃষ্ণকায় নিগ্রোজাতি বসবাস করে। মেলানেশিয়ার অন্তর্গত দ্বীপগুলি হল সলোমনস, ভানুয়াতু, নিউ ক্যালিডোনিয়া, ফিজি প্রভৃতি।
  2. মাইক্রোনেশিয়ার অন্তর্গত দ্বীপগুলি হল মার্শালস, ক্যারোলিনস, কিরিবাতি, তুভালু, সামোয়া প্রভৃতি।
  3. পলিনেশিয়ার দ্বীপসমূহের নাম সোসাইটি, কুক, ফিনিক্স, তুয়ামোতু, তুবাই প্রভৃতি।

আগ্নেয় পদার্থ ও প্রবাল দিয়ে গঠিত দ্বীপ – এগুলি হল উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত কেবলমাত্র হাওয়াই দ্বী প এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে গুয়াভালুপে, ক্লিপারটোন, গ্যালাপাগোস, কোকো, গোমেজ, ইস্টার প্রভৃতি।

FAQ/ বহুচর্চিত প্রশ্নাবলী

লাহার কী?

আগ্নেয় পদার্থ সমৃদ্ধ কাঁদার প্রবাহকে লাহার বলে।

ট্রেফা কী?

সব ধরনের পাইরোপ্লাস্টকে এক কথায় ট্রেফা বলে।

পা হো হো কী?

দড়ির মতো পৃষ্ঠযুক্ত ব্যাসল্ট লাভা ক্ষেত্রকে পা হো হো বলে।

নমস্কার , আমরা দেবলীনা ও শুভদীপ । আমি ওয়েবসাইটের লেখক, আমি ভূগোলে স্নাতক করেছি। আমার উদ্দেশ্য শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়ের জন্য ভূগোলের গুণমান নোট এবং উপাদান শেয়ার করা এবং আমার দিক থেকে সর্বোপরি সাথে থাকা।

Leave a Comment

error: Content is protected !!